নেতা ও মন্ত্রীর কাছের মানুষ পরিচয় দিয়ে জেমির ভয়ঙ্কর চাঁদাবাজি

প্রকাশিত: ৪:২৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২০

নেতা ও মন্ত্রীর কাছের মানুষ পরিচয় দিয়ে জেমির ভয়ঙ্কর চাঁদাবাজি

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : কখনো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বোন বা বন্ধু, কখনো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছের মানুষ পরিচয় দিয়ে মানুষকে প্রতারণা করে আসছিলেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের মেয়ে হাটে বাজারে সন্দেশ বিক্রেতা জেমি পারভিন। এমপি মন্ত্রীরা তার কাছের লোক। কথায় কথায় মিথ্যা মামলার ভয়। প্রয়োজনে পুলিশের ভয়। এগুলো কথিত আওয়ামী লীগ নেত্রী জেমির এলাকার মানুষকে অত্যাচার এবং চাঁদাবাজির অস্ত্র। জেমিন অত্যাচার-নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এলাকার মানুষ। কথায় কথায় গালিগালাজ, মারপিট, হুমকি, মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশের ভয় দেখিয়ে এলাকার অনেকেরই কাছ থেকে মোটা টাকা আদায় করাই ছিল জেমির কাজ।

দেশের স্বনামধন্য মানুষদের সঙ্গে ছবি তুলে তা ফেসবুকে আপলোড করে নিজেকে তাদের কাছের মানুষ বলে জিম্মি করতেন প্রশাসনিক কর্মকর্তাদেরও। আর ফেসবুকে তার নিজস্ব ওয়ালে বিভিন্ন মানুষ সম্পর্কে কটূক্তিসহ নানা হুমকি দিতেন। ঢাকার তেঁজগাও থানার একটি মামলায় গত ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল বিভাগ গ্রেপ্তার করে জেমি পারভিনকে। এরপরই তার নিজ এলাকার ভুক্তভোগীরা মুখ খুলতে শুরু করে। জানা গেছে, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের তালগাছি এলাকায় এখনো জেমি পারভিন সন্দেশওয়ালার মেয়ে নবিয়া নামেই পরিচিত। ছোটবেলায় তালগাছি স্কুলে বাবার সঙ্গে সন্দেশ বিক্রি করতেন তিনি। কখনো কখনো গানও করতেন। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই নবিয়া হয়ে যান জেমি পারভিন। এখন অনেকেই তাকে ডাকেন দ্বিতীয় পাপিয়া বলে। আর এর মাঝে বিয়ের পিড়িতে বসেন চারবার। সবশেষ জেমি আস্তানা গাড়েন ঢাকায়। গান নিয়ে হাজির হন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। নিজের চাতুরতায় সখ্যতা বাড়ান আওয়ামী লীগের অনেক নেতাদের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে ছবি তুলে ফেসুবকে আপলোড দিয়ে নিজেই নিজেকে প্রচার করেন আওয়ামী লীগের নারী নেত্রী হিসেবে।

জেমির কথামতো না চললে স্থানীয় সাধারণ মানুষকে পড়তে হতো নানা ধরনের মামলায়। মিথ্যা ধর্ষণ মামলাসহ হত্যা চেষ্টা ও অপহরণের মামলা হতো সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে মামলা নিষ্পত্তির নামে অভিযুক্তদের কাছ থেকে নিতেন বিপুল পরিমাণ টাকা। আর সেই টাকাতেই ঢাকাসহ উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুরে গড়ে তুলেছেন অন্তত চারটি বাড়ি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তোলা ছবি দেখিয়ে থানার কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করতেন বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।

একই কায়দায় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের ছেলে সিরাজগঞ্জ উল্লাপাড়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) তানভীর ইমাম সম্পর্কে নানা কটূক্তি ও অশ্লীল ভাষায় ভিডিও করে ফেসবুকে আপলোড করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তদন্তে নামে ঢাকার সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল বিভাগ। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে গত ৬ সেপ্টেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, জেমির নির্যাতনের তালিকায় বাদ পড়েনি নিজের বোন, আত্মীয়-স্বজন, মুক্তিযোদ্ধা, উকিল, জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও নিরীহ জনমানুষ। প্রাণভয়ে তার অত্যাচার নির্যাতনের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।

সরেজমিন উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ, ইউপি সদস্য দুলাল হোসেন, জেমির চাচা মণিরুজ্জামান, সেলিম, আমেনা, আব্দুল মতিন, আব্দুর রশিদ, আব্দুল মান্নান রতনসহ এলাকার নির্যাতিত অনেকেই অভিযোগ করে জানান, এমপি মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে নিরীহ মানুষকে ভয় দেখিয়ে বিপুল অর্থ আদায় করাই মূলত জেমির প্রধান কাজ। চাঁদাবাজির এ কাজে জেমি কখনও নিজে বাদী হয়ে আবার কখনও তার কাজের মেয়েদের বাদী করে মামলা ও পুলিশের ভয় দেখিয়ে নিরীহ মানুষজনকে ফাঁসিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে বিপুল অর্থের মালিক তিনি।

নিজের মেয়েকে নিরাপরাধ দাবি করে জেমির মা সোনাভান খাতুন জানান, ঢাকায় তার মেয়ের কোনো বাড়ি নেই। এ বিষয়ে শাহজাদপুর ইপজেলা গাড়াদহ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত সময়ে জেমির জন্য বেশ কয়েকটি সালিস বৈঠক স্থানীয়ভাবে হয়েছে। তবে জেমির অধিকাংশ অভিযোগই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। থানায় দায়ের করা মামলাগুলো মিথ্যা মামলা বলেও প্রমাণিত হয়েছে। তিনি নিজেও এ নিয়ে বিরক্ত।‘

সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম বলেন, ‘জেমি পারভিনের বিগত সময়ের রেকর্ড যাচাই-বাছাই চলছে। তবে তার বিরুদ্ধে এখনো কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।’ অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তিনি জানান, ঢাকা থেকে জেমি পারভীনের বিরুদ্ধে একটিপত্র এসেছে, যা তদন্ত চলছে। এদিকে জেমির আটকের খবরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে শাহজাদপুর আর উল্লাপাড়ার নির্যাতিত মানুষ। তার বিচারের দাবিতে একত্রিত হয়ে নেমেছেন মানববন্ধনে। দ্রুত তার অপকর্মের বিচার করে শাস্তি নিশ্চিত দেখতে চায় ভুক্তভোগীরা।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

September 2020
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..