সিলেট ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি
প্রকাশিত: ৪:১৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯
বরগুনায় রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের আড়াই মাস পর ওই ঘটনা আবার আলোচনায় এসেছে। নিজের স্ত্রীর সঙ্গে নয়, সন্ত্রাসীদের কোপে রক্তাক্ত জখম হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পথে এক রিকশাচালকের সঙ্গেই শেষ কথা হয় নিহত রিফাতের।
মঙ্গলবার সাংবাদিকদের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিলেন সেই রিকশাচালক দুলাল। তিনি বরগুনা সদর উপজেলার ফরাজীরপুল এলাকার বাসিন্দা।
রিকশাচালক দুলাল সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে জানান, ওইদিন কলেজ সড়কে যাত্রী নিয়ে গিয়ে মানুষের ভিড়ের কারণে আর সামনের যেতে পারছিলেন না। সামনে মারামারি হচ্ছে। দুলাল বলেন, ‘যাত্রী নামিয়ে রিকশা ঘুরাইয়া কেবল দাঁড়াইছি, এ সময় একটা ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায় হাইট্টা আইসা আমার রিকশায় উইঠাই কয়, চাচা আমারে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়া যান। আমি দেখলাম গলা ও বুকের বামপাশ কোপে কাইট্টা রক্ত বাইর হইতেছে। হের জামাডা টাইন্না আমি গলা ও বুকে চাইপ্পা ধইরা কইলাম, আপনে বহেন, আমি চালাই। এ সময় একটা মেয়ে দৌড়ে রিকশায় উইঠা ওই পোলাডারে ধইর্যা বসে। আমি তাড়াতাড়ি রিকশা চালাইয়া হাসপাতালের দিকে যাই।’
দুলাল বলেন, এক মিনিটের মতো রিফাত ঘাড় সোজা করে বসেছিল, এরপর সে মিন্নির কাঁধে ঢলে পড়ে, আর ঘাড় সোজা করতে পারেনি।
দুলাল আরও জানান, হাসপাতালের গেট দিয়ে ঢোকার সময় মিন্নি একজন লোককে ডাক দেয়। রিকশা থামানের সঙ্গে সঙ্গে ওই লোক দৌড়ে এসে রিফাতের অবস্থা দেখেই স্ট্রেচার আনতে যায়। আমি আর সেই লোক রিফাতকে স্ট্রেচারে তুলে অপারেশন থিয়েটারে দিয়ে আসি। এরপর রিফাতকে অ্যাম্বুলেন্স করে বরিশাল নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ এসে আমার রিকশার ছবি তুলে নেয় ও কাগজপত্র নিয়ে যায়। আমার কাগজপত্র এখনও পুলিশের কাছেই আছে।
মিন্নির ডাকে ছুটে এসেছিলেন যিনি: হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে ও রিকশাওয়ালা দুলালের বর্ণনামতে রিকশা থামতেই সাদা গেঞ্জি পরা এক লোক দৌড়ে স্ট্রেচার এনে রিফাতকে দ্রুত ওটিতে নিয়ে যান। ওই ব্যক্তি আমিনুল ইসলাম মামুন। তিনি বরগুনা জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি একই সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ী। মামুনের সঙ্গেও কথা হয় এ প্রতিবেদকের।
তিনি বলেন, মিন্নির ডাক শুনেই ছুটে আসি। রিফাতের অবস্থা দেখে দ্রুত হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে স্ট্রেচার নিয়ে আসি। এ সময় রিফাত রিকশায় মিন্নির কাঁধে ভর করে বসেছিল। আমি, রিকশাচালক ও মিন্নি তিনজনে মিলে রিফাতকে ধরে স্ট্রেচারে তুলি। দ্রুত তাকে ওটিতে নিয়ে যাই। ডাক্তারের লিখে দেওয়া স্লিপ নিয়ে আমি তিনবার ফার্মেসি থেকে ১৪০০ টাকার ওষুধ কিনে আনি।
তিনি বলেন, রিফাতের শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। চিকিৎসক কোপের ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিয়ে বরিশাল নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। আমি অ্যাম্বুলেন্স গেটে নিয়ে আসি। এর মধ্যেই রিফাতের বন্ধুসহ অন্যরা আসেন। পরে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে বরিশাল নিয়ে যাওয়া হয়। মামুন বলেন, একজন মানুষকে বিপদে সহায়তা করা মানবিক দায়িত্ব, সে যে কেউ হোক। আমিও সেটাই চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু আফসোস রিফাতকে বাঁচানো যায়নি।
গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করে রিফাত শরীফকে। এ ঘটনায় নিহত রিফাতের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ বরগুনা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। সূত্র-সমকাল
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd