সিলেট ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি
প্রকাশিত: ৯:২৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৭, ২০১৯
প্রতিবারের ন্যায় এবারও আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে সিলেট নগরী ও শহরতলিজুড়ে অর্ধশতাধিক পশুর অবৈধ হাট বসানোর তোড়জোড় শুরু করেছেন রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা। ইতোমধ্যেই শহরতলি ও নগরীর কয়েকটি স্থানে খুঁটি গেড়ে জায়গা দখল প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নগরীতে পশুর তিনটি বৈধ হাট রয়েছে। এর মধ্যে কাজিরবাজারের সবচে বৃহৎ পশুর হাটটি ব্যক্তি মালিকানাধীন। একমাত্র পশুর হাট কাজিরবাজার এখন জমে ওঠার অপেক্ষায়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গরু, ছাগল ও ভেড়া নিয়ে আসা ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা দু’এক দিনের মধ্যে বাজার জমে ওঠবে। প্রতিবারের ন্যায় এবারও পুলিশ বৈধ পশুর হাটের তথ্য দিয়ে বলছে, কেউ অবৈধ হাট বসালে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রতি বছরই কোরবানির ঈদের সময় ঘনিয়ে আসলে সিলেটে অবৈধ হাট না বসাতে নির্দেশনা দেয় প্রশাসন। কিন্তু বাস্তবে তাদের এই নির্দেশনা তোয়াক্কা না করে অবৈধ পশুর হাট বসায় রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা। সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশ প্রশাসনের নির্লিপ্ততার সুযোগে যততত্র বসে অবৈধ হাট। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের একই কাতারে দেখা যায়। এবারও ব্যতিক্রম নয়। এসব প্রভাবশালীরা অবৈধ হাট বসানোর তোড়জোড় শুরু করেছেন। নগরীর উপশহর, তেররতন, রিকাবিবাজার, মিরাবাজার, বাগবাড়ি, মালনীছড়া, টিলাগড়, আম্বরখানা, ঘাসিটুলা, মেন্দিবাগ, শাহী ঈদগাহ, আখালিয়া, দক্ষিণ সুরমাসহ বেশ কিছু জায়গায় অবৈধ পশুর হাট বসানোর তৎপরতা চলছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের দুটি পশুর হাট ইতোমধ্যে পত্রিকায় টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ইজারা দেয়া হয়েছে। একটি হলো সিটি করপোরেশনের পেছনে লালদিঘিরপার মাঠ, অপরটি হলো এমসি কলেজ সংলগ্ন পয়েন্টের খালি জায়গা। কিন্তু প্রশাসনের এবং সিটি মেয়রের কঠোর নির্দেশনা থাকা সত্তে¡ও প্রতিবছর ঈদের ছুটি শুরু হলে সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠে নগরী ও নগরীর বাইরে অর্ধশতাধিক পশুর হাট। আগামী ১২ আগস্টের ঈদকে সামনে রেখে অবৈধ পশুর হাটের নেপথ্যে রয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগ-যুবলীগের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। নগরীতে অর্ধশতাধিক পশুর হাট বসানোর তোড়জোড় চলছে। আর সরকারি দলের এই নেতামর্কীদের অবৈধ পশুর হাট বসাতে সহায়তা করেন স্থানীয় ক্লাবের কিছু নেতৃবৃন্দ ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের কিছু নেতাকর্মীরা। গত মঙ্গলবার সিসিকের মাসিক সভায় জনপ্রতিনিধি, জেলা পুলিশ, এসএমপি পুলিশ ও র্যাবের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তাদেরকে অবৈধ পশুর হাটের ব্যাপারে সিসিকের অবস্থান পরিস্কার করেছেন মেয়র আরিফ।
জানা গেছে, গত কয়েক বছরের মতো নগরীর রিকাবীবাজার, শাহী ঈদগাহ খেলার মাঠ, উপশহর, তেররতন, শিবগঞ্জ, মেজরটিলা, আখালিয়া, পাঠানটুলা, মদিান মার্কেট, সুবিদবাজার পয়েন্ট, মিরাবাজার, বাগবাড়ী, শাহপরাণ গেইট, মেন্দিবাগ, মালনীছড়া, দক্ষিণ সুরমার বাবনা পয়েন্ট, কদমতলী, চন্ডিপুল, হুমায়ূন চত্বর, তেলীবাজার, নর্থইস্ট মেডিকেল সংলগ্ন ধোপারঘাট এলাকায় সরকারি দলের নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় অবৈধ পশুর হাট বসানোর তৎপরতা শুরু হয়েছে। শাহী ঈদগাহ খেলার মাঠে অবৈধ পশুর হাটে অনুমোদন সিলেট উপজেলা প্রশাসন। দলদলি চা-বাগানে পশুর অবৈধ হাট বসান। গত বছর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাকর্মীরা। স্থানীয় প্রশাসন পরে তা উচ্ছেদ করে। এবার এখানে পশুর হাট বসানোর জন্য ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন যুবলীগের এক শীর্ষনেতা। এই চক্র পুলিশ লাইন্স সংলগ্ন রিকাবীবাজারে পশুর হাট বসাতে জোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে কয়েকটি সূত্রে জানা যায়। এছাড়া নগরীর বালুচর ও টিলাগড়কেন্দ্রিক ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতারা পশুর হাট বসানোর জন্য ঘন ঘন বৈঠক করে চলছেন। আখালিয়ায় বিজিবির মাঠেও ছাত্রলীগ-যুবলীগের উঠতি বয়সের নেতারা অবৈধ পশুর হাট বসানোর ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে। তারা মনে করছেন, আজ বৃহস্পতিবার সরকারিভাবে সকল অফিস আদালত বন্ধ হবে। এদিন থেকে পশুর হাট বসাবেন তারা।
কাজিরবাজার পশুর হাটের ব্যবস্থাপক শাহদত হোসেন লুলন জানান, নগরীর বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় সবকটি প্রবেশপথে কোনো না কোনো স্থানে অবৈধ পশুর হাট বসানো হয়। বৈধ হাটগুলোতে আসার পথে জোরপূর্বক লাঠিসোঁটা নিয়ে পশু ব্যবসায়ীদের উপর হামলা করা হয়। এগুলো যেন এ বছর না হয় এ জন্য তিনি প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (মিডিয়া) জেদান আল মুসা জানান, অবৈধ পশুর হাটের ব্যাপারে এসএমপি প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকবে। আমরা পশুর বৈধ হাটের নিরাপত্তা দেব। পশু পরিবহন ও নগদ অর্থের নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করবে পুলিশ প্রশাসন। আর পশুর অবৈধ হাট বসলে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় উচ্ছেদ করা হবে। ইতোমধ্যে এসএমপির পক্ষ থেকে ১৫টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে পশু ব্যবসায়ী ও পশুর নিরাপত্তার জন্য কাজ করবে পুলিশ।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd