প্রতীকের আত্মহত্যার ঘটনায় এবার পরিবারকে দুষলেন শাবি উপাচার্য

প্রকাশিত: ১০:০৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৭, ২০১৯

প্রতীকের আত্মহত্যার ঘটনায় এবার পরিবারকে দুষলেন শাবি উপাচার্য

Manual4 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী তাইফুর রহমান প্রতীকের আত্মহত্যার ঘটনায় পরিবারকে দুষলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তার দাবি, পরিবার থেকে কোন কোন ধরণের সহযোগিতা না পেয়েই আত্মহত্যা করেছে প্রতীক।

বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ সেশনের বি ইউনিটের শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এমন দাবি করেন।

Manual3 Ad Code

এসময় তিনি বলেন, “আমি ওই শিক্ষার্থীর মেসেঞ্জার চেক করেছি। সেখান দেখা গেল-ওই শিক্ষার্থী গত দুইবছর থেকে মেন্টাল ডিজঅর্ডারে ভুগছিল। ছয়মাস থেকে সে ঘুমের পিল খেয়ে ঘুমাত।”

তিনি আরও বলেন, “সে দুইজন ডাক্তারের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছিল। কিন্তু তার ফ্যামিলি তাকে কোন সাপোর্ট দেয়নি। মেসেঞ্জারে দেখা যায়, তার বাবা খুব শক্ত। তিনি কোন সাপোর্ট দিচ্ছেন না।”

গত সোমবার (১৪ জানুয়ারি) বিকেলে সিলেট শহরের বাগবাড়ি এলাকার একটি মেসবাড়ি থেকে স্নাতক ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী তাইফুর রহমান প্রতীকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

আত্মহত্যার ঘটনায় প্রথম থেকেই বিভাগের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মাস্টার্সে নম্বর কম দেওয়া এবং থিসিসের জন্য সুপারভাইজার না দেওয়াসহ শিক্ষকদের প্রতি নানা অসদাচরণের অভিযোগ আনে তার পরিবার।

এ ব্যাপারে উপাচার্য বলেন, “অবান্তর, ভিত্তিহীন কিছু অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার জন্য একটা অপচেষ্টা চালাচ্ছে তার (নিহত প্রতীক) পরিবার। এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের চরিত্রহনন বরদাশত করব না।”

Manual7 Ad Code

এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের পাশাপাশি বুধবার (১৬ জানুয়ারি) বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের টকশোতে গিয়ে বিভাগের শিক্ষকদের অভিযোগ করে করেছেন প্রতীকের বড় বোন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের শিক্ষক শান্তা তৌহিদা।

Manual1 Ad Code

বিভাগের শিক্ষকদের অসদাচরণের বিষয়টি আগে থেকেই উপাচার্যকে অবগত করে রেখেছিলেন বলেও দাবি প্রতীকের বড় বোন শান্তা তৌহিদার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের শিক্ষক তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, “মাননীয় ভিসি ফরিদ স্যারকেও আমরা পরিবার থেকে জানিয়েছি..ফরিদ স্যার কে আমি এও জানিয়েছি আমরা আমার ভাইকে নিয়ে টেনশনে আছি. চারিদিকে ছাত্ররা সুইসাইড করছে আমরা তাই ভয়ে থাকি অকে নিয়ে.. ফরিদ স্যার নিজে আমাদের পরিবারকে অর পাশে থাকতে বলেছিলেন। ফরিদ স্যার নিজে প্রতীকের শিক্ষক প্রফেসর আজাদকে অনুরোধ করেছিলেন সুপারভাইজার দিতে! তাও তাকে সুপারভাইজার দেন নি বিভাগ!”

Manual4 Ad Code

“অনার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়া ছেলেটাকে বিভিন্ন ইস্যু বানায়ে মাস্টার্স এ সুপারভাইজার দেয় নাই.বিভিন্ন কোর্সে নম্বর কম দিয়েছে। আমার ভাইটি টিচার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল এটাই তার অপরাধ…। গত ছয়মাস ধরে ডিপার্টমেন্ট তিলে তিলে মেরে ফেলেছে আমার ভাইকে।” আরেক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন শান্তা।

এদিকে তাইফুর রহমান প্রতীকের ভগ্নীপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রিজভী শাহরিয়ার বিভিন্ন গণমাধ্যমে অভিযোগ করে বলেছিলেন, “মাস্টার্স শেষে কোন শিক্ষক তার সুপারভাইজার হিসেবে দেওয়া হয় নাই। তাকে সুপারভাইজার দিবে না তা ডিপার্টমেন্ট কম্বাইন্ডলি ডিসিশন নিয়েছিল।”

প্রতীকের স্বজনের এমন অভিযোগের নিন্দা জানিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “কোন শিক্ষক চাইবেন না তার শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথে যাক। কিন্তু ঢালাওভাবে সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট দিয়ে, টিভি চ্যানেলে গিয়ে শিক্ষকদের অভিযোগ করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এমন বক্তব্যের প্রতি ঘৃণা জানাই, নিন্দা জানাই।”

তবে তাইফুর রহমান প্রতীকের মাস্টার্সের পরীক্ষায় নম্বর কম পাওয়ার বিষয়টি বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। সেখানে প্রতীক অনার্সে ৩.৮২ সিজিপিএ নিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। তবে মাস্টার্সের প্রথম সেমিস্টারে তার সিজিপিএ কমে হয় ৩.৫৮। আর দ্বিতীয় সেমিস্টারে তার রেজাল্টে ধস নেমে সিজিপিএ হয় ৩.০৮। মাস্টার্সের দুই সেমিস্টার মিলে র‍্যাংকিয়ে তার অবস্থান হয় সপ্তম।

সাধারণত স্নাতকে ৩.২৫ সিজিপিএ পেলে একজন শিক্ষার্থী তার মাস্টার্স কোর্স চলাকালীন নির্দিষ্ট বিষয়ে থিসিসের জন্য বিভাগে আবেদন করতে পারেন। সেই থিসিসের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে বিভাগের কোন শিক্ষক দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

অনার্সে ৩.৮২ সিজিপিএ থাকা সত্ত্বেও তাকে সুপাইভাইজর কেন দেওয়া হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে জিইবি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক শামসুল হক প্রধান বলেছিলেন, “সুপারভাইজার না দেওয়ার বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না। আমি কিছুদিন হল বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বে এসেছি। এটি তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে।”

প্রতীকের আত্মহত্যার ঘটনার পরে তদন্তে এগ্রিকালচার এন্ড মিনারেল সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির অন্য দুইজন সদস্য হলেন গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো আনোয়ারুল ইসলাম ও সহকারী প্রক্টর মো. সামিউল ইসলাম।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..