সিলেট ২১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২২শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১:৩৮ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৭, ২০১৮
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : এক ম্যাচ আগেও সব প্রতিপক্ষকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছিল বাংলাদেশ। ওদিকে শ্রীলঙ্কা কিনা প্রথম সাক্ষাতে জিম্বাবুয়ের কাছে বিপর্যস্ত! কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেলের মধ্যেই ‘৮২’ এলো, আবার মনে করিয়ে গেল আকাশ থেকে পাতালে নামাতে ২৪ ওভারের বেশি সময় নেয় না ক্রিকেট।
ফাইনাল তার চেয়েও নিষ্ঠুর। আসরজুড়ে কতটা ভালো খেলেছেন না খেলেছেন সেসব বিস্মৃতির স্রোতে হারিয়ে যাবে; যদি আজ আরেকটি বাজে দিন যায় মাশরাফি বিন মর্তুজাদের। সঙ্গে সঙ্গে ডাক পড়বে বোর্ড কর্তাদের ফায়ারিং স্কোয়াডে, বৃহস্পতিবার ফাইনালের ড্রেস রিহার্সালে চূড়ান্ত ফ্লপ করার পর যেমনটা হয়েছিল আর কি। বোর্ড সভাপতিসহ ডজনখানেক পরিচালকের সবারই হার নিয়ে কিছু না কিছু বলার ছিল। সেখানে শ্রোতা অধিনায়ক মাশরাফি, তাঁর ডেপুটি সাকিব আল হাসান ও টেকনিক্যাল ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ।
সে তুলনায় আমজনতার প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষকের, ফাইনাল তো বাকি। গতকাল স্টেডিয়াম এলাকার আশপাশে ভাবভঙ্গি দেখে আঁচ করা যায়, আপাত নিরীহদর্শন এই দর্শকমণ্ডলী প্রত্যাশা পূরণ না হলে ‘দোষী’ খুঁজবেই জনতা। কম তো হলো না। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে এই শ্রীলঙ্কাকে বাগে পেয়েও ট্রফি জিততে পারেনি বাংলাদেশ। তিন বছর পর, ২০১২ এশিয়া কাপের ফাইনাল শেষে সাকিব আর মুশফিকুর রহিমের ছবিটা এখনো হূদয় বিদীর্ণ করে। আজ সন্ধ্যায় সে রকম কোনো ছবি দেখার মানসিক প্রস্তুতি নেই স্থানীয় দর্শকদের। গত তিন বছরে যে ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলে আসছে বাংলাদেশ, তাতে এবারের ট্রফি তো দেশেই থেকে যাওয়ার কথা!
কান পাতলে এর সবই শুনতে পাচ্ছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা, ‘আগের ফাইনালগুলোর কথা মনে করতে চাচ্ছিলাম না, আপনারা মনে করিয়ে দিলেন। আমরা আগে কখনো এ ধরনের টুর্নামেন্ট জিতিনি। সে কারণেই আমরা সবাই জানি এটা জিতলে বড় একটা পদক্ষেপ ফেলা হবে।’ তবে খেলাটা তো ক্রিকেট। ‘পাচ-পাঁচ ওভারে খেলার রং বদলে যেতে পারে। শ্রীলঙ্কাও ভালো দল, জানতাম ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা ওদের আছে’, জনতার প্রত্যাশার বেলুনের বাড়তি হাওয়াটা যেন বের করে দিতেই চাইলেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক।
ওদিকে টানা দুই ম্যাচ জিতে ফাইনালের টিকিট করা শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দীনেশ চান্ডিমাল মাইন্ড গেম শুরু করে দিয়েছেন, ‘ফাইনালের জন্য আমাদের কিছু গোপন পরিকল্পনা আছে!’ ম্যাচ নিয়ে পরিকল্পা থাকে, প্রতিপক্ষের সামনে সেটা গোপনই রাখে সব দল। তার পরও বুঝতে অসুবিধা হবে কেন যে বাংলাদেশের টপ অর্ডারকেই টার্গেট করেছে হাতুরাসিংহের শ্রীলঙ্কা। তামিমকে ফেরানোর জন্য দুশমন্ত চামিরা ক্রমাগত বল ভেতরে আনবেন। সেটা জেনেই গতকালও প্রায় আধাঘণ্টা ক্রমাগত থ্রো ডাউন খেলে গেছেন বাংলাদেশের বাঁহাতি তারকা ওপেনার। এরপর সাকিবকে দ্রুত তুলে নিতে পারলে তো কেল্লা ফতে! এটাও তিনি জানেন। জানেন বলেই দীর্ঘ নেটের পরই সাইড উইকেটে একের পর এক বল করে গেছেন সাকিব। দেখেটেখে মনে হচ্ছিল এই সিরিজে বুঝি খুবই বাজে সময় কাটাচ্ছেন সাকিব-তামিম। অন্যরা যে প্র্যাকটিস করছেন না, তেমনটা নয়। তবে তাঁদের প্রস্তুতির কোথায় যেন বিশেষত্ব, নির্দিষ্ট একটা লক্ষ্য রয়েছে।
এদিকে প্রতিপক্ষের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য তো দলেই পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ, ফাইনালের স্কোয়াডে ফিরিয়ে আনা হয়েছে ইমরুল কায়েসকে। তামিম ইকবালের উদ্বোধনী সঙ্গী এনামুল হক ফর্মে নেই। এ অবস্থায় ইমরুলের অন্তর্ভুক্তি মানেই ফাইনালে তাঁকে নামিয়ে দেওয়া—এটা ধরে নিয়ে চন্দিকা হাতুরাসিংহে ছক করবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু গতকালের অনুশীলনে পুরো বাংলাদেশ ইনডোরে সময় কাটিয়েছে। আর ইমরুলকে দেখা গেছে একাডেমি মাঠে। তার মানে আজ এনামুলই খেলছেন, শ্রীলঙ্কা কোচের ভাবনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য ইমরুলকে টেনেছে বাংলাদেশ।
তবে পরিবর্তন ঘটছে বাংলাদেশ দলে, নাসির হোসেনের পরিবর্তে মেহেদী হাসান মিরাজ খেলছেন। আবুল হাসানের জায়গায় সাইফ উদ্দিনকে চাচ্ছেন অধিনায়ক আর সহ-অধিনায়ক। বাংলাদেশ ক্রিকেটের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই দুজনের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব না মেলার সম্ভাবনা অতি ক্ষীণ। তবে তাঁদের সবচেয়ে বড় চাওয়া প্রয়োজনের সময় দলের জুনিয়র ক্রিকেটাররাও যেন ভূমিকা রাখেন। তামিম-সাকিব ব্যর্থ হলেই ব্যাটিং গুটিয়ে যাওয়া নিয়ে ভদ্রতা বজায় রেখে মিডল অর্ডার নিয়ে অনেক কথা বলেছেন মাশরাফি। এটা বোধগম্য যে টিম টকে সেসব কথায় ভদ্রতার লেশ থাকার কথা নয়। মুশফিকুর রহিম একটি ম্যাচে রান করেছেন; কিন্তু মাহমুদ উল্লাহ এবং সাব্বির রহমানের ব্যাটে রান নেই। তাতে আজকের ফাইনালটা না আবার তাঁদের কারো জন্য সাময়িককালের জন্য শেষ সুযোগ হয়ে যায়!
হতে পারে, আজকের মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেই জ্বলে উঠবেন তাঁরা। নয়তো সেই টপ অর্ডার নির্ভরতায় খুঁজতে হবে প্রথম শিরোপা। অবশ্য ম্যাচ ঘোরানো একটি ইনিংসের জন্য তামিমের জ্বলজ্বলে চোখ আর নেট থেকে বোলিং মার্কে সাকিবের যে দীর্ঘ পদক্ষেপ, সেসব দেখে স্বপ্ন ডালা মেলে।
গতকাল অনুশীলনের পর ডাগ আউট অলস আড্ডায় টেকনিক্যাল ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ বলছিলেন, ‘মুশফিক, রিয়াদ (মাহমুদ) প্রুভেন পারফরমার। বিশ্বাস করবেন না, সেদিন নেটে চোখ বন্ধ রেখেও ঠিক জায়গায় বল ফেলেছে মাশরাফি!’
এমন একটা দল কি আর টানা দুই ম্যাচ হারে? ক্রিকেট নিয়ে তো আর আগাম বলে দেওয়া যায় না। তবে বৃহস্পতিবারের ৮২-কে নিছকই দুর্ঘটনা মনে করছে বাংলাদেশের ড্রেসিংরুম। প্রথম ট্রফি জয়ের অপেক্ষায় তারা, পুরো বাংলাদেশও।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd