স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট : ওভারলোডিংয়ের কারণে যাতায়াত ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় দেশের অন্যান্য জেলার লোকজন এখন সিলেট থেকে পাথর ক্রয় করছেন না। ফলে বিপাকে পড়েছেন সিলেটের পাথর ব্যবসায়ী ও ক্রাশার মিল মালিক-শ্রমিকরা। পাথর বিক্রি করতে না পারায় কোটি কোটি টাকার ঋণের ফাঁদে পড়ে ব্যবসায়ীরা ফেরারি জীবনযাপন করছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেয়া স্মারকলিপিতে এমন অভিযোগ জানিয়েছেন সিলেট বিভাগের ক্রাশার মিল মালিক ও পাথর ব্যবসায়ী পরিবহন মালিক, শ্রমিক ঐক্যপরিষদের নেতৃবৃন্দ। সিলেটের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ারের মাধ্যমে তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারকলিপিতে তারা উল্লেখ করেন, দেশের সর্ববৃহৎ পাথর কোয়ারি সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ, গোয়াইনঘাটের জাফলং, লোভাছড়া ও বিছানাকান্দির পাথরগুলো গুণগত মানে দেশসেরা।
স্থানীয় প্রশাসন এসব পাথর কোয়ারি থেকে নিয়মিত আদায় করছেন রয়্যালটি। ফলে সরকার প্রতি বছর পাচ্ছেন অর্ধশত কোটি টাকার মতো রাজস্ব। সিলেটের পাথর দিয়ে বর্তমানে তৈরি হচ্ছে পদ্মা সেতুসহ সরকারি বিভিন্ন বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প। অতীতেও ওই সব এলাকার পাথর লেগেছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন কাজে। পাথর ব্যবসায়ীরা আরো উল্লেখ
করেন, সাম্প্রতিক সময়ে পাথর কোয়ারিগুলোর সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী, ক্রাশার মিল মালিক ও শ্রমিকরা পথে বসতে শুরু করেছেন। সবার মাঝে নেমে এসেছে হতাশা।
এমন অবস্থার কারণ উল্লেখ করে ব্যবসায়ীরা জানান, ট্রাকে ওভারলোডের পরিমাণ কম করে নির্ধারণ করায় মালামালের ভাড়া অধিক ও তার বেশি হারে বেড়ে গিয়েছে। যার ফলে সিলেট থেকে পাথর নেয়া একটি নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠানের জন্য অতিরিক্ত ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ অতীতে যে পাথর ঢাকা জেলায় ট্রাক ভাড়াসহ প্রতি ফুট ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রয় করা হতো, সেই পাথর এখন প্রতি ফুট ২০৫ টাকা থেকে ২১০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে হচ্ছে। অথচ বিদেশি পাথর প্রতি ফুট ৩০ থেকে ৪০ টাকা কমে পাওয়া যাচ্ছে। তাই ব্যবসায়ীদের স্বার্থে বিশেষ বিবেচনায় ৬ চাকার ট্রাকগাড়ি ওজনসহ ৩২ টন ও ১০ চাকার ট্রাক গাড়ির ওজনসহ ৪২ টন করে ওভারলোডের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও খনিজসম্পদ মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন সিলেটের ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে আরো বলেন, ওভারলোড চালু করার আগে পাথর ব্যবসায়ী ও ক্রাশার মিল মালিকদের সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ কিংবা পরামর্শ রহস্যজনক কারণে গ্রহণ করা হয়নি।
অথচ ভারত, ভিয়েতনাম, চীন ও ওমান থেকে নৌ-পথে এলসির মাধ্যমে যে পাথর এনে অল্প মূল্যে বিক্রয় করা হচ্ছে তার গুণগত মান অত্যন্ত নিম্নমুখী। সেই পাথর দিয়ে উন্নয়ন কাজ করার কিছুদিন পর বিভিন্ন স্থানে দেখা দিচ্ছে ফাটলসহ নানা দুর্ঘটনা। তাই সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ, জাফলং, লোভাছড়া ও বিছনাকান্দি কোয়ারির পাথর ধ্বংস করতে পরিকল্পিত ভাবে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করা হচ্ছে অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীরা। স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন সিলেট বিভাগ ক্রাশার মালিক ও পাথর ব্যবসায়ী পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্যপরিষদের সভাপতি ডাক্তার আব্দুন নুর, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ট্রাক মালিক, পিকআপ এবং কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি সভাপতি সৈয়দ মকসুদ আহমদ, ধোপাগুল স্টোন ক্রাশার মিল মালিক ও পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী নাসির উদ্দিন, সৈয়দ সালেহ আহমদ শাহনাজ, হাজী শাইস্তা মিয়া, হাজী শানুর মিয়া, আব্দুল কাদির, মো. আজির মিয়া, মসরফ আলী, নুরুল আমীন, মো. মঈন উদ্দিন, আবু ইউসুফ বাবু, আব্দুল আহাদ, আব্দুল হক, মো. মোর্শেদ, মোজাম্মেল আলম সাদ্দাম, তুহিন চাকদার, নিজাম উদ্দিন, মো. শাহাদত হোসেন, নুরুল আলম মাসুম, মো. ফরহাদ, মো. মনসুর, কাজী ফরহাদ, এখলাছুর রহমান, মঈনুল ইসলাম প্রমুখ। সূত্র-মানবজমিন
Sharing is caring!