সুনামগঞ্জে আরেকটি বাঁধে ভাঙন, ডুবেছে ধান

প্রকাশিত: ১১:৪০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৭, ২০২২

সুনামগঞ্জে আরেকটি বাঁধে ভাঙন, ডুবেছে ধান

Manual3 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সুনামগঞ্জের আরও একটি বড় হাওরের বাঁধ ভেঙে ফসলহানি ঘটেছে। জেলার দিরাই উপজেলার চাপতির হাওরের বৈশাখী এলাকার ফসল রক্ষা বাঁধটি গতকাল বুধবার রাত দেড়টার দিকে ভেঙে হাওরে ঢলের পানি ঢুকতে থাকে। এতে তলিয়ে যায় হাওরের কাঁচা ধান।

সুনামগঞ্জে গত দুই দিন কোনো বৃষ্টি হয়নি। কড়া রোদ ছিল। তারপরও হাওর এলাকার নদ-নদীতে পানি বাড়ছে। মূলত উজানের ঢল নামা অব্যাহত থাকায় পানি বাড়ছেই।

সুনামগঞ্জে হাওরে একের পর এক বাঁধ ভাঙছে, ডুবছে কৃষকের শ্রমে-ঘামে ফলানো সোনার ধান। গত ১ সপ্তাহে অন্তত ১০টি হাওরে ফসলহানি ঘটেছে। তবে ডুবে যাওয়া হাওরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় দিরাই উপজেলার দায়িত্বে থাকা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা ইকবাল বলেন, ‘এই হাওরে ৪ হাজার ৮০০ হেক্টর জমি আছে। আমরা হাওরে যাচ্ছি। কী পরিমাণ জমি তলিয়েছে, সেটি এখনই বলা যাবে না।’

দিরাই উপজেলার করিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান লিটন চন্দ্র দাস বলেন, চাপতির হাওরের বৈশাখী বাঁধটি কয়েক দিন ধরেই ঝুঁকিতে ছিল। মানুষজন চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। সব জমিই তলিয়ে যাচ্ছে। এখন এই হাওরের বাঁধ ভাঙায় ঝুঁকিতে পড়েছে পাশের জগদল ও মাটিয়াপুরের হাওর। উপজেলার টাংনির হাওরের জারলিয়া এলাকার বাঁধটি গতকাল বিকেলে ভেঙে গিয়েছিল। সেটি এলাকার মানুষ দিনরাত পরিশ্রম করে আবার সংস্কার করেছেন। তবে এর আগেই হাওরের বেশ কিছু জমির ধান তলিয়ে গেছে।

Manual1 Ad Code

এ দিকে সুনামগঞ্জে গত দুই দিন কোনো বৃষ্টি হয়নি। কড়া রোদ ছিল। তারপরও হাওর এলাকার নদ-নদীতে পানি বাড়ছে। মূলত উজানের ঢল নামা অব্যাহত থাকায় পানি বাড়ছেই। তবে সুরমা নদীর পানি কিছুটা কমেছে। বেড়েছে জেলার জাদুকাটা, রক্তি, বৌলাই, পাটলাই, নলজুর, কালনি, চলতি, ধারাইন, চেলা, কংসসহ অন্যান্য নদ–নদীর পানি।

গত এক সপ্তাহ ধরে ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জি থেকে নামা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ঝুঁকিতে পড়েছে জেলার সব হাওরের বোরো ফসল। গত শনিবার তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরের একটি বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে যায়। পাহাড়ি ঢল নামা অব্যাহত থাকায় এখন জেলার সব হাওরের ফসলই ঝুঁকির মুখে রয়েছে। অনেক বাঁধে ধস ও ফাটল দেখ দিয়েছে। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বলেন, পাহাড়ি ঢল নামা অব্যাহত থাকায় ঝুঁকি বাড়ছে।

হাওরের কৃষকেরা বলছেন, তাঁরা ২০১৭ সালের মতো পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন। কারণ, এখনো হাওরে ধান পাকতে কমপক্ষে ১০ দিন সময় লাগবে। ২০১৭ সালে এই সময়েই হাওরের সব কাঁচা ধান তলিয়ে গিয়েছিল। যদি ঢল নামা অব্যাহত থাকে, তাহলে পানি উন্নয়ন বোর্ড যেসব বাঁধ দিয়েছে, তাতে ফসল রক্ষা হবে না।

Manual2 Ad Code

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তা বলছেন, উজানের (ভারতের চেরাপুঞ্জি) বৃষ্টিই ভয়ের মূল কারণ। সুনামগঞ্জে তেমন বৃষ্টি নেই। কিন্তু চেরাপুঞ্জিতে ব্যাপক বৃষ্টি হওয়ায় ঢল নামছে। এতেই সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তবে প্রশাসন, পাউবো কর্মকর্তাসহ সবাই মাঠে আছেন। যেখানে যা যা প্রয়োজন, ফসল রক্ষা স্বার্থে সব করা হবে।

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার জেলায় ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এতে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার ফসল উৎপাদিত হওয়ার কথা। তাদের হিসাবমতে, গতকাল পর্যন্ত জেলায় ফসলহানি হয়েছে ৬৪৪ হেক্টরের। তবে হাওর আন্দোলনের নেতারা বলছেন, ক্ষতির পরিমাণ চাপতির হাওর ছাড়াই ৫ থেকে ৬ হাজার হেক্টর হবে।

Manual4 Ad Code

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, ‘আমরা হাওরে ফসল রক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা করছি। কিন্তু যেভাবে উজানের ঢল নামছে, সেটা অস্বাভাবিক। প্রশাসন, পাউবো কর্মকর্তা, কৃষক, জনপ্রতিনিধি সবাই মাঠে আছেন। তবে সবকিছুর পর প্রকৃতির ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে।’

Manual4 Ad Code

সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহরুল ইসলাম জানান, এবার সুনামগঞ্জে ৭২৭টি প্রকল্পে ৫২০ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ হয়েছে। এতে বরাদ্দ আছে ১২২ কোটি টাকা। তাঁরাও মাঠে কাজ করছেন।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

April 2022
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  

সর্বশেষ খবর

………………………..