সিন্ডিকেটের কবলে সিলেট পাসপোর্ট অফিস

প্রকাশিত: ১১:৪৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৭, ২০২১

সিন্ডিকেটের কবলে সিলেট পাসপোর্ট অফিস

Manual1 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক :: পূণ্যভুমি সিলেট প্রবাসী অত্যুসিত এলাকা। সিলেটের অধিকাংশ লোকই প্রবাসী। সিলেট পাসপোর্ট অফিসে প্রায় প্রতিদিনই পাচ থেকে ছয়শত পাসপোর্টের ফাইল জমা হয়। টাকা ছাড়া কোন পাসপোর্টই জমা হয় না। অফিসের মধ্যেই তৈরি হয়েছে একটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের মুল হোতা হলো সুপারেন্টেন্ডেন্ট এসএম জাকির হোসেন। সমস্ত লেনদেন এবং ভাগবাটোয়ারা জাকিরের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন মাজহারুল ইসলাম। যোগদানের পর থেকেই শুরু হয়েছে ঘুষের লেনদেন। ইতিপূর্বে ২০১১ সালে উপপরিচালক পদে মাজহারুল ইসলাম সিলেট উপশহর অফিসে যোগদান করে প্রতিটি পাসপোর্টের ফাইলের জন্য ২ হাজার টাকা নির্ধারণ করেন। লোকজনের প্রতিবাদের দরুন দুর্নীতির জন্য তিন মাসের মধ্যেই বদলি হয়ে যান। পওে ২০১৭ সালে আবারও সিলেটে আসলে কয়েক মাসের মধ্যেই বদলি হন। তিনি পরিচালক পদে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে যোগদানের পরই সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসে দুর্নীতি ও ঘুষবাণিজ্য মহামারী আকার ধারন করে। অফিসের সুপারেন্টেন্ডেন্ট জাকির হোসেন এবং অপর কর্মকর্তা দীপককে দিয়ে একটি বণিজ্যিক সিন্ডিকেট তৈরী করেন। ঘুষ ছাড়া কোন পাসপোর্ট আবেদনই জমা হয়না। প্রতিটি ফাইলের জন্য দিতে হয় দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা করে। এতে কওে প্রতি মাসেই ঘুষের টাকা লেনদেন হয় কোটি টাকারও বেশি। টাকা না দিলে বা দালালদের মাধ্যমে পাসপোর্টের ফাইল জমা না দিলে, বিভিন্ন অজুহাতে ফাইল ফেরত দেওয়া হয় এবং লোকজনকে হয়রানি করা হয়।
দালালদের মাধ্যমে ফাইল জমা না দিলে, অরজিনাল আইডিকার্ড, জন্ম সনদ ও চেয়ারম্যানের নাগরিক সার্টিফিকেট থাকা সত্ত্বে বলা হয় নির্বাচন কমিশন কর্তৃক আইডি কার্ডের ভেরিফাইড কপি লাগবে। প্রাইভেট সার্ভিস পেশার জন্য, পেশার কাগজ পত্র লাগবে। সত্যায়ন সঠিক নয় বলে ফাইল ফেরত দেওয়া হয়। অথচ,পাসপোর্ট অধিদপ্তর আইন করে সত্যায়ন বাতিল করে দেয়। ঢাকাসহ বাংলাদেশের কোন অফিসে সত্যায়ন নেই। দুই দিন মাস পূর্বেও সিলেট পাসপোর্ট অফিসে সত্যায়ন ছিল না। যা যাচাই বাছাই করলে পাওয়া যাবে। বিগত কিছুদিন পূর্বে বিভিন্ন মিডিয়া এবং পত্রিকায় লেখালেখির পর মার্কা পদ্ধতি বাদ দিয়ে সত্যায়ন পদ্ধতি চালু করেন মাজহার। সত্যায়নই মার্কা হিসেবে ব্যবহার করেন। একেকজনের একেকটা সত্যায়নের সিল সাক্ষর থাকে। তাছাড়া আরো রয়েছে ঘুষবাণিজ্যেও লিখিত ভুল ইমেইল পদ্ধতি। প্রতিটি ফাইলে রয়েছে একটি করে দালালদেও দেওয়া ভুল ও কাটা ইমেইল। এই ইমেইল দিয়ে সনাক্ত করা হয় কোন দালালের কয়টি ফাইল। একই ইমেইল অনেক ফাইলে থাকে। ফাইলের মার্কা বা ইমেইল সনাক্ত কাজটি করে অফিসের নাইটগার্ভ খলিল, ঝাড়ুদার শিবু ও গোলাপ।
অন্য জেলার অনেক লোক সিলেটে বসবাস করে। তারা বর্তমান ঠিকানা সিলেটে এবং নিজ জেলায় স্থায়ী ঠিকানা দিয়ে পাসপোর্ট করতে পারে। কিন্তু টাকা না দিলে নিজ জেলায় জমা দিতে হবে বলে ফাইল ফেরত দেওয়া হয়। টাকা দিলে সাথে সাথেই জমা হয়ে যায়। কিছুই লাগে না।
প্রতিটি ফাইলের ভিতরে এবং ব্যাংক চালানের নীচে একটি গোপন চিহ্ন থাকে, যাকে পাসপোর্ট অফিসের ভাষায় মার্কা বলে। মার্কা হিসেবে বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। মার্কাযুক্ত ফাইলগুলো সরাসরি জমা নেওয়া হয়। মার্কাযুক্ত ফাইল গুলো দ্রুত পুলিশ রিপোর্টে ও ঢাকায় পাঠানো হয়। মার্কা ব্যতীত ফাইল গুলো আলমারিতে ফেলে রাখা হয়। পাঁচ ছয় মাসেও এই আবদেনের পাসপোর্ট পাওয়া যায় না। এজন্য অনেকের ভিসা পর্যন্ত বাতিল হয়ে যায়। অনেকে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন কওে বিদেশ পড়তে যেতে পারে না। লোকজন ক্ষতিগ্রস্হ হয়। ফাইল জমাকারী লোকজনের সাথে অফিসের লোকজনের প্রায় প্রতিদিনই হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। লোকজনের চাপাচাপিতে কিছু ফাইল জমা করা হলেও, মার্কাবিহীন ফাইলগুলো অপারেটররা নানাবিধ অজুহাতে ফেরত পাঠায়। ফাইল টাইপ করে না বা ছবি তুলে না। ফাইল জমা হওয়া সত্ত্বেও ইন্টারভিউয়ের নামে লোকজনকে সারাদিন লাইনে দাড় করিয়ে রেখে, অপারেটরটা একে অন্যের নিকট পাঠায়, হয়রানি করে। অপারেটর মধ্যে কামরুজ্জামান, বাপন,নমিতা,মোস্তফা উল্লেখযোগ্য।
তাছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডায় সিলেটের অনেক লোক সে দেশের পাসপোর্ট নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করে। দেশে আসলে নো অবজেকশন ভিসার প্রয়োজন হয়। প্রতিটি নো-ভিসার জন্য দিতে হয় চার থেকে পাচ হাজার টাকা করে। টাকা না দিলে নানা ভাবে হয়রানি করে। পুলিশ রিপোর্টে পাঠিয়ে সময় ক্ষেপন করে। টাকা না দিলে পাবলিককে বলে, অনলাইনে আবেদন করে নিয়ে আসেন। বাংলাদেশী পাসপোর্ট, আইডিকার্ড, জননিবন্ধন ,চেয়ারম্যানের সার্টিফিকেট নিয়ে আসেন। দালালদের নিকট পাঁচহাজার টাকা দিলে কোন কাগজপত্র,পুলিশ রিপোর্ট কিছুই লাগে না। যাচাই করলেই সত্যতা পাওয়া যাবে।
ইতিপূর্বে সহকারী পরিচালক কাউন্টারে বসে সব পাসপোর্ট নিজে জমা করতেন। তিনি আইডি কার্ড ও জন্মসনদ ঠিক থাকলেই সকল ফাইল জমা করে দিতেন। নতুন পরিচালক হিসেবে মাজহার আসার পরেই চিত্র পাল্টে যায়। ই-পাসপোর্ট কাউন্টারে জাকিরকে এবং এমআরপি জমা কাউন্টারে অফিস সহকারী দীপককে বসানো হয়। প্রতিদিন বিকেলে সহকারী পরিচালক মাইনুল হোসেনকে দিয়ে সমস্ত জমাকৃত ফাইলে কাউন্টার সাইন করানো হয়।নিয়ম অনুযায়ী একজন অফিসারই সব ফাইল জমা করার কথা।কিন্তু অদৃশ্য কারনে জাকির এবং দীপক দুজনেই সমস্ত ফাইল জমা নেন।এ দুজনই দীর্ঘ চার বছর যাবত সিলেট অফিসে কর্মরত। একজন অতিরিক্ত মহাপরিচালক জাকিরের ঘনিষ্ঠ হওয়ার ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক তার আত্মীয় হওয়ার সুবাদে একই অফিসে চার পাচ বছর ধরে কর্মরত। জাকির সব সময় বিভাগীয় ভালো ভালো অফিসে চাকুরী করে আসছেন। অফিসারাও তাকে সমীহ করে চলেন। জাকির একজন অফিস সহকারী হওয়া সত্ত্বেও ঢাকাসহ তার এলাকায় রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট, মার্কেট,বাগানবাড়ি। ছেলে মেয়েরা লেখাপড়া করে ঢাকার নামধারী ইংলিশ স্কুলে।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আসে ২০১৭ সালের শেষের দিকে। অথচ,রোহিঙ্গা টেস্টের নামে লোকজনকে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাড় করিয়ে রাখা হয়। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, এডুকেশন, সাংবাদিক, সরকারী চাকুরীজিবীদের বাংলাদেশী সার্টিফিকেট ,পুরাতন পাসপোর্ট থাকা সত্ত্বেও রোহিঙ্গা টেস্ট করতে হয়।
যে কোন একদিনের ফাইল গুলো তদন্ত করলেই সবকিছু বের হয়ে আসবে। সচেতন মহরেল মতে আশু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। অন্যথায় ক্ষতিগ্রস্হ হবে সিলেটের জনগণ এবং জনরোষের কবলে পড়বে সিলেটের বিবাগীয় পাসপোর্ট অফিস।এতে করে দারুণ ভাবে ক্ষুন্ন হতে পারে সরকারের ভাবমূর্তি।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

November 2021
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..