সুনামগঞ্জে নগদ টাকা ও খাদ্য সহায়তার নামে হেলালের প্রতারণা

প্রকাশিত: ১২:৩৫ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৯, ২০২১

সুনামগঞ্জে নগদ টাকা ও খাদ্য সহায়তার নামে হেলালের প্রতারণা

Manual8 Ad Code

শাহ্ মাশুক নাঈম, দোয়ারাবাজার :: করোনা মহামারিতে মানুষের জীবনযাত্রার মান এমনিতেই ধস নেমেছে। অন্যদিকে নগদ অর্থ ও ত্রান সামগ্রী বিতরণের নামে অসহায় মানুষের উপর তামাশা শুরু করেছে একটি চক্র। এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা ! বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। আগের তুলনায় ইদানিং করোনার মৃত্যুর হার বেড়েই চলছে। হাসপাতালে জায়গা হচ্ছেনা রোগিদের। অক্সিজেন ও ভ্যাকসিন টিকারও শঙ্কট রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা দিয়ে যাচ্ছেন মানুষকে। কঠোর লকডাইন দিয়ে মানুষকে ঘরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে প্রাথমিক ভাবে মাস্ক ব্যবহারের উপর সরকার কর্তৃক কড়া নজরদারি রয়েছে। লকডাউন আর করোনা সংক্রমণের কারণে সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর দু:খের সিমা নেই। অনাহারে অর্ধহারে জীবন পরিচালনা করতে হচ্ছে তাদের। ১৬ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে কঠোর থেকে নামিয়ে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ, অসহায় দিনমজুর, শ্রমিকদের সরকার নানা প্রনোদনা ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে। অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় এবার সমাজসেবী, বিত্তবানদের খাদ্য সামগ্রী বিতরণে তেমন নাড়া পড়েনি। কিন্তু মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত মানুষের কষ্টের সীমা নেই। তাদের চেয়ে দিনমজুর, অসহায় গরিবরা কষ্টে জীবন-যাপন করছেন।

Manual2 Ad Code

সমাজের গরিব অসহায়দের পূঁজি করে তাদেরকে নগদ অর্থ ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করার নামে প্রতারণার নতূন ফাঁদ সৃষ্টি করেছে একটি চক্র। ইউ, কে কল্যাণ ট্রাস্ট জামায়িকা এন্ড বাংলাদেশ সুনামগঞ্জ জেলা নামে এ চক্রটি খাদ্য সামগ্রী ও নগদ অর্থ দেয়ার নামে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। কিন্তু খাদ্য সামগ্রী বা নগদ অর্থের দেখা পাচ্ছেন না গরিবরা।

Manual6 Ad Code

জানা গেছে, এ কল্যাণ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ছাতক, দোয়ারাবাজার, দক্ষিন সুনামগঞ্জ ও কোম্পানী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মাঠ কর্মী সেজে নির্ধারিত ফরম পূরণ করে জনপ্রতি ১৬০ থেকে ২০০ অগ্রীম আদায় করছে প্রতারক চক্র। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে এ প্রতারণার জাল ফেলে আসছে তারা। তাদের ফরমে উল্লেখ করা খাদ্য সামগ্রী ও নগদ অর্থের হিসেবে ৩০ কেজি চাল, ৫ কেজি আঠা, ২ কেজি চিনি, ২ কেজি ডাল, ৫ কেজি দুধ, ১ কেজি হুইল ফাউডার, ২টি সাবান, ১টি ছাতা, ১টি মশারি ও নগদ ১৫০০ টাকা প্রতি জন অসহায় গরিবদের দেয়া হবে। এছাড়া খাদ্য গ্রহণকারীর নাম ঠিকানার সাথে এনআইডির নম্বরসহ পাসপোর্ট সাইজের ২কপি ছবি সংযুক্ত করে জমা দেয়ার সময় প্রতি ফরম ফ্রী ২ ডলার এবং বাংলাদেশি টাকায় ১৬০ টাকা। কল্যাণ টাস্টের প্রতিষ্ঠা উল্লেখ করা হয়েছে অবসর প্রাপ্ত লেফটেনেন্ট কর্ণেল মো: ফয়সল আহমেদ, আমেরিকা প্রবাসী। সাথে রয়েছে (০১৩০৯-৩৩৪৯৮৫) মোবাইল নম্বর। দীর্ঘ এক সপ্তাহ ধরে সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন গ্রামে প্রবেশ করে চক্রটি প্রতি গ্রাম থেকে ১০-১২ জনের অসহায় মানুষের নামের তালিকা তৈরি করে নির্ধারিত ফরম পূরণ শেষে জনপ্রতি ১৬০-২০০টাকা অগ্রীম আদায় করে নিচ্ছে। প্রায় ৫ শতাধিক মানুষকে এ ফরম বিতরণ করে চক্রটি। কল্যাণ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে নগদ টাকা ও খাদ্য সামগ্রী পাওয়ার আসায় স্মরল মনে মানুষজন ফরম পূরন করে টাকা দিয়েছেন।

Manual7 Ad Code

গত বৃহস্পতিবান (১৫ জুলাই) বিকেলে সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার হাছনবাহার গ্রামে গিয়ে এ প্রচারনা চালিয়ে ফরম পূরণ শেষে নগদ টাকা গ্রহণ করে চক্রটি। পরে গ্রামের বিজ্ঞ মানুষের নজরে আসলে বিষয়টি সন্দেহ হয়। এক পর্যায়ে প্রতারক চক্রের সদস্য, ছাতকের চরমহল্লা ইউনিয়নের ছোট কেজাউড়া গ্রামেন চান মিয়ার ছেলে মহি উদ্দিন হেলাল (৪৫) নামের একজন ও ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের ব্রাক্ষনগাঁও গ্রামের রিকশা চালক জসীমকে আটক করে জনতা। অবশ্যই জনতা রিকশা চালাককে না দিয়ে গণধূলাই দিয়েছেন প্রতারক মহি উদ্দিন হেলালকে। ওই প্রতারক হেলাল গোকিন্দগঞ্জ নতূনবাজারে পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকে। পরে স্থানীয় লোকজনরা তাদের ইউপি চেয়ারম্যানদের সাথে আলাপ করে ছেড়ে দেন। ওইদিন রাতেই রিকশা চালক জসিম উদ্দিন প্রতারক হেলালকে গোবিন্দগঞ্জে নিয়ে আসলে উত্তেজিত জনতা প্রতারককে মারপিট করার চেষ্টা করলে স্থানীয় লোকজনের হস্তক্ষেপে রক্ষা পায়।

Manual1 Ad Code

বিষয়টি নিয়ে পরদিন শুক্রবার (১৬ জুলাই) বিকেলে স্থানীয় গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ হল রুমে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৈঠকের আগেই জিম্মাদার রিকশা চালক জসিম মিয়ার কাছ থেকে অদৃশ্য হয়ে আত্মগোপনে চলে যায় প্রতারক মহি উদ্দিন হেলাল। যে কারণে প্রতারণার বিষয়টি রয়ে গেছে অধরায়।

স্থানীয় মানুষের ধারণা, কল্যান ট্রাস্টের নাম, প্রতিষ্ঠাতার অবসর প্রাপ্ত সেনা অফিসারের নাম দিয়ে সবার নিচে তার মোবাইল নম্বর বসিয়ে এ প্রতারণা করে আসছে হেলাল। তার সাথে বৃহত্তর সিলেট বিভাগে এমন প্রতারণা করে বেড়াচ্ছেন চক্রের একাধিক সদস্য। তাদের মাধ্যমেই প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। প্রতারক মহি উদ্দিন হেলাল বলেন, কল্যান ট্রাস্টটির বৈধতার বিষয়ে তার জানা নেই। তবে সপ্তাহ খানেক আগে সিলেট নগরির পাঠানটুলা এলাকার তার পূর্ব পরিচিত কামরুল ইসলামের মাধ্যমে এ কাজ তিনি পেয়েছেন। তিনি কমিশন হিসেবে ফরম বিক্রি করছেন। প্রতি জনের কাছ থেকে ফরম ফ্রির টাকাও গ্রহণ করেছেন। পরে কামরুলের ০১৭২০-৬৯৮৬৩০ নম্বরে বিকাশে ১৫০০ টাকা পাটিয়ে দিয়েছে প্রতারনার বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ (সৈয়দেরগাঁও) ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আখলাকুর রহমান জানান দোয়ারাবাজার টেংরা থেকে লোকজন মোবাইল ফোনে ঘটনাটি আমাকে অবগত করেন, সাতে সাতে গ্রাম পুলিশ তার বাসায় পাঠাই তাকে পাওয়া জায়নি সে এখন পলাতক।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

July 2021
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  

সর্বশেষ খবর

………………………..