ফেসবুকে প্রেম : সিলেটের রিসোর্টে প্রতারকের সঙ্গে মেডিকেল ছাত্রীর তিন রাত

প্রকাশিত: ১১:২৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৩, ২০২১

ফেসবুকে প্রেম : সিলেটের রিসোর্টে প্রতারকের সঙ্গে মেডিকেল ছাত্রীর তিন রাত

Manual6 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সুইমিং পুল। সাঁতার কাটছেন দু’জন। স্লিম, লম্বা, শ্যাম বর্ণের মেয়েটির আনন্দের শেষ নেই। প্রেমিকের সঙ্গে বেড়াতে এসেছেন। ঢাকা থেকে সিলেটে। শাহজালাল উপ-শহর এলাকার একটি তারকা হোটেলে ওঠেছেন দু’জন। প্রেমিক ছেলেটির নাম জুয়েল মাহবুব। দেখতে লম্বা না হলেও বেশ সুদর্শন। অনেকটা বোম্বের হিরোদের মতো। তরুণী মেয়েটির নাম রুক্সিনা রুহী (ছদ্মনাম)। একটি প্রাইভেট মেডিকেলের ডাক্তার। ওই সুইমিং পুলে জুয়েল বারবার ছবি তুলছেন, ভিডিও ধারণ করছে। কখনও সেলফি।

Manual6 Ad Code

এখানেই শেষ না। চা বাগানে, ইকোপার্কেও ধারণ করা হয়েছে অসংখ্য ছবি। রুহী অবাক হয়ে প্রশ্ন করেছেন কয়েকবার, ‘তুমি এতো ছবি, ভিডিও পাগল কেন!’ জুয়েলের সহজ উত্তর ছিল, ‘তোমার সঙ্গে ছবি, ভিডিও তুলতে ভালো লাগে। যখন পাশে থাকবে না তখন এগুলো দেখবো।’

Manual4 Ad Code

কিন্তু বিধিবাম! আনন্দের এসব ক্ষণ থাকেনি বেশিদিন। জুয়েলের প্রতারণার কথা জানতে পারেন রুহী। শেষ পর্যন্ত ওই ডাক্তার মেয়েটির অভিযোগের প্রেক্ষিতে মিরপুর থেকে গ্রেফতার করা হয় জুয়েল মাহবুবকে। উদ্ধার করা হয় অসংখ্য ছবি ও কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ‘প্রতারণা’র পুরো বর্ণনা দিয়েছেন জুয়েল।

Manual6 Ad Code

জানা যায়, প্রথম দেখাতেই সিলেটে বেড়াতে গিয়েছিলেন জুয়েল-রুহী। তিন রাত ছিলেন ওই তারকা হোটেলে। সেখানেই বিভিন্ন ভিডিও ধারণ করা হয়। ভিডিওগুলোর বেশিরভাগই গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত।

তবে ওই হোটেলে সময় কাটানোর আগে তাদের মধ্যে ফেসবুকে প্রথমে যোগাযোগ হয়। ফেসবুকের ছবি দেখইে একে-অন্যকে পছন্দ করেন। ঢাকার ইন্দিরা রোডের এক ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান জুয়েল। ব্যবসায়িক সুবিধার কারণে পরিবারের সঙ্গে থাকেন উত্তরা। সেখানে গাড়ির ব্যবসা রয়েছে তার। প্রায়ই ছুটে যান বিভিন্ন দেশে। এই ব্যস্ততার মধ্যেই যত্ন করে সময় দেন রুহীকে। এমনটিই জানতেন ওই তরুণী।

রুহী তখন ধানমন্ডি এলাকার একটি প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত। পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব। তারপর প্রেম। চুটিয়ে প্রেম বা লং ড্রাইভ.. সবকিছুতেই দু’জনের প্রচন্ড আগ্রহ। কিন্তু শর্ত দিয়ে দেন জুয়েল। প্রথম দেখাতেই ‘স্বামী-স্ত্রীর মতো’ সময় কাটাবেন। আমতা আমতা করছিলেন রুহী। চতুর জুয়েল বুঝিয়ে সম্মতি আদায় করেন। ঘটনাটি ২০১৯ সালের শুরুর দিকে। কথানুসারেই দেখা হয় এক সকালে। দু’জনের সঙ্গে দুটি ব্যাগ। রেস্টুরেন্টে সকালের নাস্তা সেরে সোজা বিমানবন্দর। তারপর পৌঁছে যান সিলেটে। সেখানে হোটেল কক্ষে যাওয়ার পর ফ্রেশ হওয়ার আগেই শুরু হয় জুয়েলের ভালোবাসার অত্যাচার। অবশ্য তার আগেই মাথায় হাত রেখে জুয়েলের প্রতিশ্রুতি নেন রুহী, শিগরিই বিয়ে করবেন তারা। কখনও একে-অন্যকে ছেড়ে যাবেন না ইত্যাদি। রুহী তখন যেনো স্বপ্নের রাজ্যে। এভাবে একে একে তিন দিন, তিন রাত কেটে যায়। ফিরে যাবেন ঢাকায় তারা। এরমধ্যেই ঘটে ঘটনাটি।

জুয়েল তখন ওয়াশ রুমে। সময় কম। দ্রুত বিমানবন্দর যেতে হবে, ফিরতে হবে ঢাকায়। জুয়েলের ফোনটি বাজছিলো বেশ কয়েকবার। এর আগেও এরকম অনেকবার কল এসেছে কিন্তু রুহী রিসিভ করেননি। এবার আনমনেই কলটি রিসিভ করেন। ওই প্রান্ত থেকে ভেসে আসছে একটি নারী কণ্ঠ। পরিচয় জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘আমি জুয়েলের স্ত্রী বলছি। আপনি কে?’

Manual2 Ad Code

ডাক্তার রুক্সিনা রুহী তখন হতভম্ব। যেনো মাথার ওপর আকাশটা ভেঙ্গে পড়ছে। আর সহ্য করা সম্ভব হয়নি। লাইন কেটে দেন চিকিৎসক তরুণী। যদিও তখন বিশ্বাস-অবিশ্বাসের মধ্যেই ছিলেন তিনি। মনে হচ্ছিলো কেউ হয়তো মজা করছে। জুয়েলের কোন বান্ধবী হতে পারে। তবুও বিমর্ষ চেহারা, দগ্ধ মন নিয়ে ঢাকায় ফেরেন। পথে, বিমানে বারবার জুয়েল জানতে চেয়েছে কি হলো? নিশ্চুপ ছিলেন রুহী। বিমানে ওঠার আগে জুয়েলের ফোনটি বারবার বাজছিলো কিন্তু রিসিভ করেনি। এতে রুহী নিশ্চিত হয়ে যান তিনি এক প্রতারকের খপ্পড়ে পড়েছেন।

বিষয়টি আরও যাচাই করতে ঢাকায় ফিরে জুয়েলের এক বন্ধুকে মেসেঞ্জারে কল দেন। যার সঙ্গে এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই পরিচয়। সন্দেহের সত্যতা পান তরুণী। তার প্রেমিক বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জনক! মিথ্যা পরিচয়েই প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠেছিলো তাদের!

চিকিৎসক তরুণী বেশ কয়েকদিন ফোন বন্ধ করে বাসায় বন্দি জীবন কাটান। ফোনটি খোলার পর প্রেমিকের কল। তিনি সম্পর্ক রাখতে চান। বিয়ের দরকার নেই। তরুণী জানিয়ে দেন, কোনোভাবেই তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখা সম্ভব না।

তারপর থেকেই হুমকি-ধমকি দিতে থাকে ছেলেটি। ফোনে, মেসেঞ্জারে একই হুমকি। সম্পর্ক না রাখলে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি, ভিডিওগুলো ফেসবুকে, ইউটিউবে ছড়িয়ে দেয়া হবে। ফোন, ফেসবুক বন্ধ রাখেন। ডাক্তার রুহী ঢাকা ছেড়ে চট্টগ্রামে চলে যান। সেখানেও শান্তি নেই। স্বস্তি নেই। ঠিকানা সংগ্রহ করে হাজির হয় জুয়েল। যে কোনোভাবে এই তরুণীকে তার চাই।

শেষ পর্যন্ত সিটিটিসি’র সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহযোগিতা নেন এই তরুণী। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ওই তরুণের অবস্থান শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয় তাকে। জব্দ করা হয় ছবি, ভিডিও।

সিটিটিসি’র সাইবার ক্রাইম ইউনিটের উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, এরকম অনেক ঘটনা রয়েছে। আসামিকে গ্রেফতার ও ভিকটিমকে সুরক্ষা দিয়ে তদন্ত করেছি। আমরা মামলা ছাড়াও অনেককে সহযোগিতা করি। অভিযোগকারীদের মধ্যে মামলা করতে চান খুবই কম। তাদের হার ৩০ ভাগের বেশি না বলে জানান তিনি।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

January 2021
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  

সর্বশেষ খবর

………………………..