বিদ্যুৎহীন নগরীতে পানির জন্য হাহাকার

প্রকাশিত: ৫:২৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৮, ২০২০

বিদ্যুৎহীন নগরীতে পানির জন্য হাহাকার

Manual8 Ad Code

নিজস্ব প্রতিনিধি :: গ্রিডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২৪ ঘন্টার বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎহীন সিলেট নগরী। এ অবস্থায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। বাসা-বাড়িতে দেখা দিয়েছে তীব্র পানির সংকট। পানির জন্য মানুষের মধ্যে হাকার চলছে। অনেকে বাসা-বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। পানির দোকানগুলোতে মানুষের দীর্ঘ লাইন। পানির সন্ধানে মানুষ ছুটছেন হন্তদন্ত হয়ে।

এদিকে তীব্র পানির সংকটেও কিছু মানবিক মানুষ এগিয়ে এসেছেন মানুষের পাশে। নগরের মণিপুরি রাজবাড়ি এলাকার ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শান্তনু দত্ত সন্তু নিজ উদ্যাগে স্থানীয়দের পানি সরবরাহ করছেন। তিনি বলেন, ‘সকাল ৭টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত মানুষকে পানি দিয়েছি। বিদ্যুৎ না আসা পর্যন্ত মানুষকে আমি পানি সরবরাহ করব।’

সুবিদবাজার পয়েন্টের মিতালি কমপ্লেক্সের সামনে স্থানীয় একটি এক পরিবার মানবিক উদ্যোগ নিয়েছেন। তারা জেনারেটরের মাধ্যমে পানি তুলে মানুষের মাঝে পানি সরবরাহ করছেন। গত রাতেও তারা ১ হাজার পরিবারকে বিনামূল্যে পানি সরবরাহ করছে।

দুপুর দেড়টার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, পানি নিতে সুবিদবাজার পয়েন্টের মিতালি কমপ্লেক্সের সামনে মানুষের দীর্ঘ লাইন। দূরদূরান্ত থেকে তারা এখানে ছুটে আসছেন। কারও হাতে কলস, কারও হাতে জগ, বালতি, ড্রাম ইত্যাদি। সারিবদ্ধভাবে এখান থেকে পানি সংগ্রহ করে ফিরছেন একজন একজন করে। পানি সংগ্রহের পর তাদের মুখে দেখা গেছে তৃপ্তির হাসি। যেন তারা যুদ্ধ জয় করেছেন।

Manual4 Ad Code

পানি নিতে আসা ছালেহা বেগম নামের এক নারী বলেন, ‘বাবা মনে ওর যুদ্ধ জয় করছি। পানির অভাবে গোসল করতে পারিছি না। খুব কষ্ট করছি রাত থেকে। তারা ফ্রি পানি দিয়া যে উপকার করছইন। রাইত থাকি ঘরে পানি নাই। খুব কষ্ট করছি। এখন তো তুড়া নিলাম। রাতে কারেন্ট না আইলে কিতা করতাম চিন্তা কররাম।’

Manual7 Ad Code

ছালেহার মতো চিন্তা সুমন আহমদেরও। সুমন আহমদ পেশায় রিকশা চালক। তিনি এখানে এসছেন পানি নিতে। বলেন, ‘আমরা তো গরীব মানুষ। টেকা দিয়া পানি কিনি খাওন কষ্ট অইব। এরা ফিরি দিতাছে এর লাগি খুব উপকার হচ্ছে। লাইতে (রাতে) যদি কারেন্ট না আইয়ে (না আসে) কিলা পানি পাইমু এই চিন্তা করতাছি। রাতে কিতা আবার পানি দিব নি মাইনষে ফিরি (ফ্রি)।’ নগরের প্রায় প্রতিটি পাড়া-মহল্লাতেই এখন পানির জন্য হাহাকার চলছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাওলদারপাড়া, শিবগঞ্জ, রায়নগর, কুমারপাড়া, ঝরনারপাড়, শেখঘাট, চালিবন্দর, লামাবাজার, নগরের বাগবাড়ি, মদিনা মার্কেট, পাঠানটুলা, কালীবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা পানির অভাবে গৃহস্থালি কাজ থেকে শুরু করে গোসল ও নিত্যক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারছেন না। এসব এলাকায় সুপেয় পানিরও অভাব দেখা দিয়েছে।

Manual4 Ad Code

এ ব্যাপারে সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘টানা বিদ্যুৎ না থাকায় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বিদ্যুতের অভাবে কোনো পানি সরবরাহ করা যায়নি। আমরা মানুষের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে নগরীতে মাইকিং করছি।’

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী (বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন দুপুরে জানান, নগরের কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করার চেষ্টা করছি। প্রায় ৪ শতাধিক কর্মী অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র সংস্কারে কাজ করছেন। দ্রুততার সঙ্গে সব এলাকাতেই বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি।

গত মঙ্গলাবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে সিলেটের আখালিয়ার কুমারগাঁও বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুন লাগার দুই ঘণ্টা পর পৌনে একটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও নগরীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি।

Manual6 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

November 2020
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..