নারী অপহরণ, নির্যাতনে একট্টা বিএনপি নেতা-আওয়ামী লীগ নেত্রী

প্রকাশিত: ৩:৪১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২০

নারী অপহরণ, নির্যাতনে একট্টা বিএনপি নেতা-আওয়ামী লীগ নেত্রী

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : ঝালকাঠিতে এক নারীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় ও নির্যাতনের পরে চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শারমিন মৌসুমি কেকা ও শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান তাপুসহ ছয়জনের নামে আদালতে মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝালকাঠির নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ নির্যাতিত নারী পারভীন আক্তার (৩০) বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।

আদালতের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. শহিদুল্লাহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে এজাহার গ্রহণের নির্দেশ দেন। পাশাপশি বাদীর সম্পূর্ণ নিরাপত্তা প্রদানের আদেশ দেন তিনি।

মামলার অপর আসামিরা হলেন, তাপুর বোন সেলিনা আক্তার লাকি, আইরীন পারভীন এ্যানি, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী রাখি আক্তার এবং ফাতেমা শরীফ।

মামলার বিবরণে জানা যায়, শহরের পূর্ব চাঁদকাঠি এলাকার বোরহান উদ্দিন খান তাঁর প্রথম স্ত্রী সেলিনা আক্তার লাকিকে এক বছর আকে তালাক দেন। পরে তিনি গত ১০ জুলাই পারভীন আক্তারকে বিয়ে করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয় প্রথম স্ত্রী ও তাঁর পরিবারের লোকজন। গত ৩০ আগস্ট সন্ধ্যায় প্রথম স্ত্রী সেলিনা আক্তার লাকি, তার ভাই ঝালকাঠি শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান তাপু ও তাঁর সহযোগী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শারমিন মৌসুমি কেকা সহ ৮-১০ জন তাদের বাসায় যায়। এসময় তাঁরা ঘরের ভেতরে ঢুকে পারভীন আক্তারকে মারধর করেন। তারা নগদ দুই লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নেয় বলে দাবি ভূক্তভোগীর।

পরে ওই নারীকে জোড়পূর্বক অপহরণ করে শহরের বিআইপি সড়কের হিলটন নামে একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে একটি কক্ষে আটকে রাখে তারা। রাতভর তাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে পারভীনকে। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে চুন লাগিয়ে দেয়। নির্যাতন শেষে ওই নারীর চুল কেটে দেয় তারা। পরে তাঁর কাছ থেকে কয়েকটি সাদা কাগজে সাক্ষর নেওয়া হয়। ওই নারীর ভাই নুরুজ্জামান হাওলাদারকে ফোন করে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ চায় আসামিরা। পরের দিন দুপুরে মুক্তিপণের টাকা দিলে নির্যাতিত নারীকে প্রায় অচেতন অবস্থায় ছেড়ে দেয় আসামিরা।

নির্যাতনের ভয়াবহ বর্ননা দিয়ে পারভীন আক্তার বলেন, নির্যাতনের এক পর্যায়ে শারমিন মৌসুমি কেকা, তাপু, তাঁর বোন ও সহযোগিরা মিলে আমাকে সারা রাত নির্যাতন চালিয়ে কিছু কাগজপত্রে সই নেয়। আমাকে মামলা না করার জন্য হুমকি দেয় তারা। তাদের ভয়ে আমি ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাও করাতে পারিনি।

পারভীনের স্বামী বোরহান উদ্দিন খান বলেন, কেকা ও তাপুর ভয়ে আমার স্ত্রীকে সদর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে বাবার বাড়িতে রাখি। সেখানে লোক পাঠিয়েও আসামিরা আমার স্ত্রী ও তাঁর পরিবারকে হুমকি দেয়। এ ঘটনা কাউকে জানালে গুম ও খুন করে ফেলার ঘোষণা দেয়। আমরা তাদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলাম। মামলা দায়ের করার পরেও আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

মামলার আসামি ঝালকাঠি শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান তাপু বলেন, আমার বোনকে সঠিক নিয়মে তালাক দেওয়া হয়নি। সে এখনো বোরহানের স্ত্রী। প্রথম স্ত্রীকে না জানিয়ে সে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীকে কোন নির্যাতন করা হয়নি। এ ঘটনা সম্পূর্ণ সাজানো।

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শারমিন মৌসুমি কেকা বলেন, সম্পূর্ণ মিথ্যা একটি বানোয়াট ঘটনা। পারিবারিক একটি ঘটনায় আমাকে অহেতুক জড়ানো হয়েছে। সামনে পৌরসভা নির্বাচন এ নির্বাচনে আমি মেয়র প্রার্থী, তাই আমাকে রাজনৈকিভাবে হেও করার জন্য মামলায় জড়ানো হয়েছে।

ঝালকাঠি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খলিলুর রহমান বলেন, মামলার এখনো কাগজপত্র হাতে এসে পৌঁছায়নি। আদালতের আদেশ পেলে, নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

September 2020
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..