সুরমার বুক কেটে হেলালের কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য

প্রকাশিত: ৯:০১ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২০

সুরমার বুক কেটে হেলালের কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য

Manual8 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : বর্ষায় ড্রেজার বসিয়ে চলে বালু উত্তোলন আর শুস্ক মৌসুমে এক্সক্যাভেটর ও কোদাল দিয়ে কাটা হয় মাটি। কয়েক বছর ধরে সিলেটের সুরমা নদীর বুকে চলছে এমন যজ্ঞ। বালু ও মাটি কেটে প্রতিবছরই কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করছেন কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। প্রকাশ্যে এসব চললেও নীরব রয়েছে জেলা-উপজেলা প্রশাসনসহ পরিবেশ অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

Manual1 Ad Code

সিলেট নগরী ও আশপাশ এলাকার কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে ৫-৭টি স্থানে প্রতিদিন শত শত ট্রাক মাটি উত্তোলন হচ্ছে। যত্রতত্র ও ইচ্ছামতো মাটি-বালু উত্তোলনের ফলে আগামী বর্ষা মৌসুমে অনেক স্থানে নদী ভাঙনের ঝুঁকি থাকছে। অবশ্য কিছু স্থানে জেগে ওঠা চরের মাটি কাটায় পানি প্রবাহে সহায়ক বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের কোনো অনুমতি বা ইজারাও নেওয়া হয়নি।

বাংলা ১৪২৬ সালে মাত্র ১৬ লাখ টাকায় সুরমা নদীতে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেয় স্থানীয় প্রশাসন। অথচ সুরমার ভাঙন রোধে গত বছর ১৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। আগামী বছরেও সমপরিমাণ টাকা বরাদ্দ দেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) সিলেটের সমন্বয়ক শাহ শাহেদা আক্তার বলেছেন, সুরমা নদী ও নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন। অবৈধ, অপরিকল্পিতভাবে মাটি-বালু উত্তোলনের ফলে অনেক স্থানে নদীর তীর ভেঙে যাচ্ছে।

শুস্ক মৌসুমে সুরমার পানি কমে এলে নদীর উত্তর পাশের বিভিন্ন স্থানে চর জেগে ওঠে। তখন শুরু হয় তীর ও বুক কেটে মাটি উত্তোলন। প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করছে বিভিন্ন আবাসিক প্রকল্প, ইটভাটা আর বসতভিটার জন্য। কোথাও এক্সক্যাভেটর দিয়ে, কোথাও শ্রমিক দিয়ে প্রতিদিন শত শত ট্রাক ও ট্রাক্টর মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি গাড়ি মাটি তিনি থেকে চারশ’ টাকা হিসাবে প্রতিদিন অন্তত কয়েক লাখ টাকার মাটি বিক্রি হয়।

সরেজমিন দেখা গেছে, সুরমার পশ্চিম দিকে সদর উপজেলার জাঙ্গাইল ও পূর্বদিকে একই উপজেলার মুক্তির চক পর্যন্ত ৫-৭টি স্থানে মাটি কাটা হচ্ছে। কান্দিগাঁও ইউনিয়নের জাঙ্গাইল এলাকায় নদী থেকে মাটি তুলে বিক্রি করছেন হেলাল উদ্দিন ও এমদাদুল হক নামে দুই ব্যক্তি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুল হক তাদের সহায়তা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিদিন সেখান থেকে কয়েকটি ট্রাকে করে অর্ধশত ট্রিপ মাটি বহন করা হয়। পাশাপাশি জাঙ্গাইল এলাকার পশ্চিম পাশে বিশ্বনাথ উপজেলার বাওনপুরে ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলন করছেন তারা। এ প্রসঙ্গে হেলাল উদ্দিন সমকালকে বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ, মাটি বিক্রি করে শ-দুইশ টাকা পাই।’ অবৈধভাবে মাটি উত্তোলনের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, অনুমতির জন্য আবেদন করেছি।

মুক্তির চক এলাকায় নদীতীরের মাটি উত্তোলন করে সেগুলো পাশের এমএইচবি ব্রিকস ফিল্ডে বিক্রি করা হচ্ছে কয়েক বছর ধরে। সেখানে একাধিক স্থানে এক্সক্যাভেটর, ড্রেজার ও শ্রমিকরা মাটি কাটার কাজ করছেন। একই এলাকার পূর্বতীর দক্ষিণ সুরমার কুশিঘাট, পশ্চিমভাগেও মাটি ও বালু উত্তোলন চলছে।

মুক্তির চক এলাকায় গিয়ে এ কাজে জড়িত কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় টুলটিকর ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমার জানামতে নদী তীরবর্তী কিছু মালিকানা জায়গা থেকে মাটি উত্তোলন করে বিক্রি করা হয়। কিছুদিন আগে হলেও নদী থেকে এখন কেউ মাটি তুলছে না।

Manual2 Ad Code

সুরমা নদীতে ড্রেজিংয়ে কোনো অনুমতি নেই জানিয়ে পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা বলেন, একসময় ড্রেজার দিয়ে বালু বা মাটি উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হতো। এখন আর হয় না।

Manual6 Ad Code

এ প্রসঙ্গে সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মহুয়া মমতাজ বলেন, মুক্তির চক এলাকায় আগে মাটি উত্তোলন হতো। অভিযানের পর বন্ধ রয়েছে। অন্য যেসব স্থানে মাটি উত্তোলন হচ্ছে, সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Manual1 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

February 2020
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
29  

সর্বশেষ খবর

………………………..