সিলেট ২৮শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৬ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৩:৫৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২, ২০২০
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ গোপন করে ৩ বছর ধরেই জাফলংয়ের ডাউকি নদী থেকে পাথর উত্তোলন করছিল প্রভাবশালীরা। কৌশল বদল করে এবারও ইসিএ এলাকা থেকে পাথর উত্তোলনে মরিয়া চক্রটি। চিহ্নিত এ চক্র থেকে সুবিধা আদায়ে গোয়াইনঘাট উপজেলার নিজাম উদ্দিন শায়েস্তা নামের এক ব্যক্তি ২৯ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট করেন। রিটের শুনানি শেষে ইসিএ এলাকা থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধের নিষেধাজ্ঞাও আসে।
কিন্তু নিজাম উদ্দিন যে অসৎ উদ্দেশ্যে রিটটি করেছিলেন, তা ফাঁস হয়ে যায় রিটটি প্রত্যাহার আবেদনের মধ্য দিয়ে। কিন্তু রিটটি জনস্বার্থে হওয়ার এটি যাতে প্রত্যাহার করা সম্ভব না হয়, সে ব্যাপারে সচেষ্ট প্রশাসন। সিলেটের ডিসি এম কাজী এমদাদুল ইসলাম জানান, রিট যাতে প্রত্যাহার করতে না পারে, সে লক্ষ্যে আদালতে লড়াই করা হবে। আর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ মাহমুদ বাশার জানান, বিষয়টি নজরে এসেছে, কেউ যাতে জনস্বার্থে করা আদালতের রায় নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রত্যাহার না করতে পারে, সে অনুযায়ী আদালতে বক্তব্য তুলে ধরা হবে।
পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, আদালতকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতেই রিট করা হয়েছিল। পাথরখেকোদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে এখন প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছে। বিপর্যয় ঠেকাতে পাথর উত্তোলন বন্ধে ২০১১ সালে জাফলংয়ের ডাউকি নদীকে ইসিএ এলাকা ঘোষণার জন্য হাইকোর্টে রিট করে পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। আদালত ২০১৩ সালে ডাউকি নদীসহ ১৪.৯৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে ইসিএ ঘোষণা করে। ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি গেজেট প্রকাশ করে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়। তবে অদৃশ্য কারণে সেটি সিলেট পৌঁছায় ২০১৬ সালে। এতে যান্ত্রিক বা ম্যানুয়াল বা অন্য কোনো উপায়ে পাথরসহ সব ধরনের খনিজ পদার্থ উত্তোলন নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু গেজেট বাস্তবায়নে বড় কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি ৪ বছরে। বাস্তবায়ন কমিটি একের পর এক বৈঠক করে ২০১৭ সালের শেষদিকে এসে সীমানা চিহ্নিত করার মধ্য দিয়েই দায়িত্ব শেষ করা হয়।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বলছে, ইসিএ ঘোষণার পরও পাথর উত্তোলন বন্ধ করা যায়নি। কারণ হিসেবে তারা হাইকোর্টের আরেকটি আদেশকে দায়ী করছে। তারা বলছেন, ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর জাফলং বল্লাঘাট পাথর উত্তোলন ও সরবরাহকারী শ্রমিক বহুমুখী সমবায় সমিতির করা রিট আবেদনের পর হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ ম্যানুয়ালি পাথর তুলতে বাধা না দিতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দেন। সেই আদেশের ওপর ভিত্তি করে ৩ বছর ধরে ধ্বংসযজ্ঞ চলে ইসিএ এলাকায়। তবে বাপা’র দাবি, সমিতির রিট আবেদনে হাইকোর্টের অপর বেঞ্চের ইসিএ এলাকা ঘোষণার বিষয়টি গোপন করা হয়েছিল। বাপা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কীম চৌধুরী বলেন, আদালতে করা ওই রিটে ইসিএ এলাকার কথা তুলে ধরা হলে আদালত এ ধরনের আদেশ দিতেন না। আর এ কারণেই সেটি গোপন করা হয়েছে। রিটকারীর সঙ্গে প্রভাবশালীদের যে আঁতাত হয়েছে তা স্পষ্ট।
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ইইউ শহিদুল ইসলাম বলেন, আদালতের কাছে তথ্য গোপন করা বড় অপরাধ, যারা তথ্য গোপন করেছে, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। তিনি বলেন, যেহেতু জাফলং নিয়ে প্রতিবছর রিট হয়, এক্ষেত্রে রায়ের আগে কমিশন পাঠানোর বিধানটি প্রতিপালিত হলে আদালতকে কেউ ভুল বোঝাতে পারত না। যদিও পরিবেশ মন্ত্রণালয়, খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং সিলেট জেলা প্রশাসন আদালতে ইসিএ’র তথ্য উপস্থাপন করার ফলে সেই রিট ৬৭তম শুনানিতে ২৪ জুলাই খারিজ করে দেন আদালত।
তবে রিটকারী নিজাম উদ্দিন সুবিধা নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেছেন, কারও কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে নয়, যেহেতু আদালতের নির্দেশেই ইসিএ ঘোষণা হয়েছে। তাই সেখান থেকে পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞার জন্য আর রিটের প্রয়োজন নেই। তাই বাড়তি খরচ না করে নন প্রসিকিউশনের জন্য আবেদন করেছি। এ বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ মাহমুদ বাশার জানান, জনস্বার্থে করা রিট আবেদন চাইলেই প্রত্যাহার করা যাবে না। ইতিমধ্যে গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে বেশকিছু তথ্য জোগাড় করেছি। জানুয়ারিতে শুনানি হবে, তখন আদালতে এসব উপস্থাপন করা হবে। সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম জানান, আদালতের আদেশের কারণে ইসিএ ঘোষণা করা হলেও ডাউকি নদী থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ করা যায়নি। এবার যেহেতু সেই রিট খারিজ হয়েছে এবং ফলে ইসিএ বাস্তবায়ন সহজ হবে। তবে রিট প্রত্যাহারের আবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেটা প্রত্যাহার করে কাউকে ব্যবসা করতে দেয়া হবে না। প্রয়োজনে জেলা প্রশাসন আদালতে যাবে যাতে জনস্বার্থে করা রিটটি প্রত্যাহার না হয়। তিনি বলেন, ইসিএ ঘোষণার পর জাফলংকে এখন আর পাথর কোয়ারি বলা যাবে না। তাই এখান থেকে যারা পাথর উত্তোলনের চিন্তা করছেন, তারা যত বড় প্রভাবশালী হোক না কেন, সফল হবে না।
Sharing is caring!


………………………..

Design and developed by best-bd