শূন্য থেকে যেভাবে কোটিপতি হলেন কোম্পানীগঞ্জ বিএনপি নেতা শাহাব উদ্দিন

প্রকাশিত: ৭:১৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৭, ২০১৯

শূন্য থেকে যেভাবে কোটিপতি হলেন কোম্পানীগঞ্জ বিএনপি নেতা শাহাব উদ্দিন

Manual6 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি মো. শাহাব উদ্দিন গ্রেফতার হওয়ার পর থানার ওসিকে দেওয়া হুমকির ঘটনায় সিলেট জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। শুধু তাই নয়, পুলিশ প্রশাসনেও এমন বক্তব্যে চলছে চুলছেড়া বিশ্লেষণ। দেশে যখন অপরাধ দমনে সরকার কঠোর, সেই সময় বিএনপি নেতার এমন বক্তব্যে সবাই হতবাক। বিএনপি নেতা শাহাব উদ্দিন গ্রেফতারের সময় ওসিকে লক্ষ্য করে বক্তব্য ছিলো ‍’” ইউএনও বিজেন ব্যানার্জিকে খেয়ে দিয়েছি। তোকেও খাব । সে টিকতে পারেনি, তুই পারবি না।’”

গত শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কোম্পানীগঞ্জ সদর থানা বাজারে অভিযান চালিয়ে শাহাব উদ্দিনকে গ্রেফতার করেন কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম। ২০১৮ সালে কোম্পানীগঞ্জ থানায় দায়েরকৃত চেক জালিয়াতির মামলায় ওয়ারেন্টভূক্ত পলাতক আসামী হওয়ায় শাহাব উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়। আটক বিএনপি নেতা শাহাব উদ্দিন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ গ্রামের আব্দুল বারীর ছেলে ।

যেভাবে শূন্য থেকে কোটিপতি :

Manual6 Ad Code

মাত্র দুই দশক আগেও ভোলাগঞ্জের রেইনট্রিয়ার ফরেস্ট থেকে কাঠ কেটে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করতেন শাহাব উদ্দিন। অর্থবিত্ত বলতে কিছুই ছিল না। থাকতেন কুড়েঘরে। নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে ভোলাগঞ্জে পাথর কোয়ারিতে চাদাবজির সাথে যুক্ত হন শাহাব উদ্দিন। গড়ে তুলেন ছোটোখাটো বাহিনী।

২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলে ভাগ্যের আমূল পরিবর্তন ঘটে শাহাব উদ্দিনের। দলীয় প্রভাব কাজে লাগিয়ে রাতারাতি কোটিপতি বনে যান তিনি। ভোলাগঞ্জের রোপওয়েকে লুটপাট করে প্রথমবারের মতো আলোচনায় আসেন তিনি। আলাদিনের অদৃশ্য প্রদীপের ছোয়ায় শাহাব উদ্দিন এখন শূণ্য থেকে কোটিপতি। রয়েছে সিলেট নগরীর চৌকিদেখিতে ২৫ কাঠা জমিতে আলিশান বাড়ি, ভোলাগঞ্জে সেবা ফিলিং স্টেশন নামের তেলের পাম্পসহ নামে বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি। স্থানীয়রা জানান, বর্তমানে কোম্পানীগঞ্জের শীর্ষ ধনী শাহাব উদ্দিন ।

Manual8 Ad Code

জানা গেছে, নব্বইয়ের দশকে ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারিতে বিক্ষিপ্ত ও বিছিন্নভাবে চাঁদাবাজির মাধ্যমে শাহাব উদ্দিনের উত্থানের সূচনা। সে সময় পাথর কোয়ারি এলাকার সরকারি পাথুরে ভূমি জবরদখল করে সেখানে প্লট তৈরি করে এসব পাথুরে প্লট বিক্রি করে তিনি হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। এছাড়া ধলাই নদীর উজানে তার বাহিনীর লোকজন বারকি নৌকা আটকিয়ে ব্যাপক হারে চাদাবাজি শুরু করে। মূলত এক সময় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নদীপথে অবৈধ চাদা আদায়ের অন্যতম হোতা বলা হত শাহাব উদ্দিনকে।

Manual7 Ad Code

রাতের আঁধারে অবৈধভাবে পাথর লুটপাটের সাথেও তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত বলে জানা যায়। তার বসতবাড়ির অদূরে ভোলাগঞ্জ দশ নম্বর এলাকার ভাটরাই ও পাড়ুয়া মৌজায় অবস্থিত হাজার একর খাস জমি জবরদখল করে ল্যান্ডলর্ড বনে যান শাহাব উদ্দিন। এখানকার মূল্যবান খাস জমি দখল করে তাতে হাহারো প্লট তৈরি করে অবৈধ পাথর ভাঙ্গার টমটম বসিয়ে শাহাব উদ্দিন বাহিনী প্রতিমাসে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

স্থানীয় ভূমি অফিস ও উপজেল নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের ততকালীন কর্তাব্যক্তিদের সহায়তায় এ বিপুল পরিমাণ সরকারি সম্পদ শাহাব উদ্দিন করায়ত্ব করতে সক্ষম হয়। সম্প্রতি এসব ভূমি তার কবল থেকে মুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হলেও অজানা কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি পদটি তিনি টাকার জোরে কিনে নিয়েছেন বলে রটনা আছে। উপজেলার সিনিয়র বিএনপি নেতা সিকন্দর আলী, হায়াত উল্লাহ, হানিফ খন্দকার, অ্যাডভোকেট কামাল হোসেন, রোকন মোহাম্মদ জিতু তালুকদার, শামসুদ্দিন, তোরাব আলী প্রমুখকে ডিঙ্গিয়ে শাহাব উদ্দিনের সভাপতি পদ প্রাপ্তিতে এলাকায় রহস্যের সৃষ্টি হয় বলে জানিয়েছেন একাধিক বিএনপি নেতা।

বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত শাহাব উদ্দিনের সাথে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের স্থানীয় কর্তাব্যক্তিদের সাথেও সখ্য। উপজেলার পাথর ও বালু মহালের অবৈধ উপার্জন ও বিভিন্ন মহালের দখল স্বত্ব বজায় রাখতেই তার এই ম্যানেজ করে চলা। অল্পসময়ে ব্যাপক বিত্ত বৈভবের অধিকারী শাহাব উদ্দিনের আয়ের উৎস এবং তার সম্পদ অর্জনের নেপথ্যের তথ্য সকলেরই জানা। কিন্তু অজানা কারণে তিনি রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

শাহাব উদ্দিনকে গ্রেপ্তারের পর নানান মহল থেকে হুমকি ও অনুরোধ আসতে থাকে ওসির ফোনে।

Manual3 Ad Code

এ ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি তাজুল ইসলাম একাত্তরের কথাকে জানান, শাহাব উদ্দিনকে গ্রেপ্তারের পর নানান মহল থেকে হুমকি ও অনুরোধ আসতে থাকে আমার ফোনে। গ্রেপ্তারের সময়ে শাহাব উদ্দিন আমাকে দেখে নেবারও হুমকি দিয়ে বলেন, ইউএনওকে খেয়েছি, তোকেও খাব।

উপজেলা চেয়ারম্যান শামীম আহমদ বলেন, বিএনপি সরকারের আমলে শাহাব উদ্দিন বাংকার (রেলওয়ের রোপওয়ের ভূমি, যা স্থানীয়ভাবে বাংকার নামে পরিচিত) লুটপাট শুরু করে। আমার জানামতে ভোলাগঞ্জে সরকারি জমিতে ১০০ টি টমটম মেশিন বসিয়ে সেগুলো ভাড়া দিয়ে সে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে কোম্পানীগঞ্জ থানায় নাশকতাসহ মোট ৫টি মামলা রয়েছে। ২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর আরো একবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি। সুত্র-একাত্তরের কথা

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..