রিমান্ডের নামে মিন্নিকে নির্যাতন: ডাক্তার দেখাতে ঢাকায়

প্রকাশিত: ৫:৫৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৯

রিমান্ডের নামে মিন্নিকে নির্যাতন: ডাক্তার দেখাতে ঢাকায়

Manual4 Ad Code

মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেছেন, রিমান্ডের নামে মিন্নিকে যে নির্যাতন করা হয়েছে তার ভয়াবহতা নিয়ে সে ভুগছে। তার হাঁটুতে ব্যথা, জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা। এ কারণে তাকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে এসেছি।

তিনি বলেন, পুলিশ ওর মাথায় পিস্তল ধরেছে। নির্যাতন করেছে। ভয়ভীতি দেখিয়েছে। এরপর থেকেই ও বিষণ্নতায় ভুগছে। ওর একান্ত চিকিৎসা প্রয়োজন, এ জন্যই ঢাকায় আসা। রোববার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করার পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন মিন্নির বাবা। কতদিন ঢাকায় থাকবেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা বলা যাচ্ছে না। চিকিৎসা যতদিন লাগবে ততদিন।

মোজাম্মেল হোসেন বলেন, প্রভাবশালী একটি কুচক্রী মহলের কাছ থেকে মিন্নি রেহাই পেল না। যে কারণে সে সাক্ষী থেকে আসামি। এখনও ভয়ভীতি আছে। অনেক সময় আকার-ইঙ্গিতে বুঝতে পারছি আমাকে ভয়ভীতি দেখানোর চেষ্টা করতে চায়। সবসময় আমাদের ফলো করে। আমি একধরনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

Manual5 Ad Code

এর আগে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি সুপ্রিম কোর্ট বারে তার আইনজীবী জেড আই খান পান্নার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরও উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষাতে মিন্নি আইনজীবীর পা ছুঁয়ে সালাম করেন।

এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শের বিষয় আছে। আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শের বিষয় আছে। চার্জশিটের কথাতো আগাগোড়াই বলেছি এটা একটা মনগড়া উপন্যাস। মূলত মূল আসামিদের এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য এ ধরনের কারবার করা হয়েছে। নাথিং নিউ। জজ মিয়া এবং জাহালমের আরেকটা সংস্করণ।

আদালতে মিন্নির দেয়া জবানবন্দি প্রকাশের বিষয়ে কোর্টের এ আইনজীবী বলেন, দেখেছি। আমি তো কোর্টে বসেই দেখেছি। আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত যখন আমাদের দেখাতেবলেছিল তখন একনজর দেখেছি। সেটাও (১৬৪ ধারার জবানবন্দি) একটা উপন্যাস। সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি কোর্টকে বলেছেন, এত সুন্দর করে লেখা যা চিন্তার বাইরে। সুস্থ মাথায় এত সুন্দরভাবে লেখতে পারে না।

এটা প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন? জবাবে জেড আই খান পান্না বলেন, আগেই করা হয়েছে। মিন্নি নিজে জেলখানা থেকে করেছে।

আরেক প্রশ্নে আইনজীবী বলেন, এটাতো পুলিশের কাছে ছিল। সেখানটা বাদে তো আর আসতে পারে না। ইতির্পূবেও আমরা দেখেছি এটা গণমাধ্যমে এসেছে। কোর্টের কাছে দেয়ার পূর্বে এটা প্রকাশিত হয়েছে।

এটা কি ঠিক হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা ঠিক হয়নি। এটা আদালত অবমাননা।

সাক্ষাতের পর মিন্নির বাবা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমাদের ঢাকায় আসার উদ্দেশ্যে হলো- সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না স্যারের সঙ্গে দেখা করা এবং তার সঙ্গে আইনি পরামর্শ নেয়া।

Manual2 Ad Code

এর আগে শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মিন্নি ও তার বাবা বরগুনার আমতলী থেকে লঞ্চে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।

গত ২ সেপ্টেম্বর মিন্নিকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আপিল বিভাগের চেম্বারজজ আদালত বহাল রাখায় কারাগার থেকে মুক্তি পান মিন্নি। আদালতে মিন্নির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দীন।

গত ২৯ আগস্ট মিন্নিকে স্থায়ী জামিন দেন হাইকোর্ট। তবে জামিনে থাকাকালে গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলা যাবে না বলে শর্ত দেন আদালত।

Manual2 Ad Code

হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে মিন্নির জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। তবে ওই আবেদনে কোনো সাড়া না পেয়ে নিয়মিত আবেদনের সিদ্ধান্ত নেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।

Manual8 Ad Code

উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয় রিফাত শরীফকে। স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি হামলাকারীদের সঙ্গে লড়াই করেও সন্ত্রাসীদের ঠেকাতে পারেননি। গুরুতর অবস্থায় রিফাতকে ওইদিন বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিফাত শরিফের মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ ও পাঁচ-ছয়জনকে অজ্ঞাত করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন।

পরে ১৬ জুলাই সকাল পৌনে ১০টায় মিন্নিকে তার বাবার বাড়ি বরগুনা পৌর শহরের নয়াকাটা-মাইঠা এলাকা থেকে পুলিশ লাইন্সে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ৯টায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

পরদিন (১৭ জুলাই) মিন্নিকে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করলে বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

September 2019
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..