ব্যর্থ সিসিক! নগর পরিষ্কারে বৃটিশরা

প্রকাশিত: ৮:০৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯

ব্যর্থ সিসিক! নগর পরিষ্কারে বৃটিশরা

Manual7 Ad Code

উন্নয়ণ নাকি দুর্ভোগ বিভিন্ন আলোচনায় জড়িত সিলেট সিটি কর্পোরেশন। নগরীতে চলছে খুঁড়াখুড়ি। মেয়র বলছেন, ধৈর্য্যধারণ করার জন্য। জনসাধারণ বলছেন, এভাবে একসাথে করে জনদুর্ভোগ বাড়ছে। এই ভিন্নমত নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। আর তার মেয়র হলেন বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। দায়িত্বে থাকা ক্ষমতাশীন দলের বিভিন্ন কাউন্সিলর সহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন মেয়র যা করছেন তা সবকিছু অপরিকল্পনীয়।

মেয়রের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী এই উন্নয়ণের একটি অংশ হলো সিলেট সিটিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা। এর সুবাধে মেয়র সিলেটের স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে নামেন পরিষ্কার অভিযানে। উদ্যোগ নেন বাংলাদেশের ঐতিহ্য সিলেটে অবস্থিত সুরমা নদীর সৌন্দর্য্যবর্ধনসহ নদীর তীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।

প্রায়ই, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযান করতে দেখা যায়। দ্বিতীয় লন্ডনখ্যাত এই সিলেটের সুরমা নদীর তীর পরিষ্কার করতে আসলেন যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্যরা। তবে ফলাফল ভালো করতে গিয়ে খারাপ মন্তব্যটাই বেশি। সিলেটের সুশীল সমাজের চোখে বিষয়টি লজ্জাজনক বলে মনে হচ্ছে।
গত সোমবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পাড়ে চাঁদনীঘাট এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এ কার্যক্রম পরিচালনা করেন ইংল্যান্ডের কনজারভেটিভ পার্টির পল স্কালি এমপি, কনজারভেটিভ ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এনি মারগারেট মেইন এমপি এবং বব ব্ল্যাকম্যান এমপির নেতৃত্বে ২২ সদস্যের প্রতিনিধি দল। তারা সিলেটে গত কয়েক মাস ধরে চলমান ‘ক্লিন সুরমা, গ্রীন সিলেট’ প্রজেক্টের সাথে একাত্মতা পোষণ করে এ পরিচ্ছন্নতা অভিযানে নামেন।

Manual8 Ad Code

এসময় এমপিরা বলেন, সিলেট তথা বাংলাদেশের সাথে আমাদের সম্পর্ক অনেক বন্ধুত্বপূর্ণ। এখানকার তরুণ সমাজ যেভাবে পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে এসেছে, তা আসলেই দৃষ্টান্তস্বরূপ। আমরাও তাদের সাথে পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে এখানে অংশগ্রহণ করতে পেরে গর্বিত। তারা সুরমা নদীর পাড় পরিষ্কার রাখতে সকলের প্রতি আহবান জানান এবং এ সংক্রান্ত যেকোন প্রয়োজনে সিটি কর্পোরেশনকে তাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

Manual8 Ad Code

এই পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান নিয়ে নানান ভাবনা সৃষ্টি হয় নগরে বসবাসকারী। এই বিষয়ে নিয়ে আলাপ হয় সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদের সাথে। তিনি জানান, এটা আমাদের জন্য কাম্য নয়, এই বিষয়টি প্রমাণ করে এটা সিসিক মেয়রের ব্যর্থতা। ময়লা আবর্জনা থাকার কারণে সুযোগ পেয়েছেন বৃটিশ এমপিরা। সবদিক থেকে বিবেচনা করে এটা আমাদের জন্য কাম্য নয়।

Manual1 Ad Code

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ জানান, বৃটিশ এমপিদের নগরীতে পরিষ্কার-পরিচ্ছনতা অভিযান আমাদের জন্য লজ্জাজনক। আমরা অনেক কাউন্সিলর এই বিষয়ে কিছু জানিনা, দৈনন্দিন ৩২০ টাকা হারে সিসিকের ৩০০ জন কর্মী নগরী পরিষ্কার করে থাকেন। তিনি জানান, যারা এই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন তারা রাজনৈতিক অপপ্রচারে লিপ্ত। আমি মনে করি, বৃটিশ এমপিদের দিয়ে পরিষ্কার করিয়ে দেখাতে চাচ্ছেন নগরীতে বিএনপির মেয়র থাকায় সরকার উন্নয়নে বরাদ্ধ দিচ্ছে না। এধরনের কাজ নালিশ পার্টির। যারা সবসময় দেশের বিরুদ্ধে বিশ্বের নানা দেশের কাছে অপপ্রচার চালিয়ে নালিশ দিয়ে আসছেন। তাদের বিরুদ্ধে সিটি কর্পোরেশন থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

বিষয়টি নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র (১) ও ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী জানান, প্রতিদিন সিটি কর্পোরেশনের ৩০০জন শ্রমিক দিন-রাত এই নগরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত থাকে যা দৃশ্যমান। যতক্ষণ পর্যন্ত নগরী বা আমাদের আঙ্গিনা পরিচ্ছন্নতা রাখার মনমানষিকতা তৈরি না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত পরিচ্ছন্নতা কর্মী দিয়ে নগরী পরিস্কার রাখা দূরহ হয়ে যাবে। যেখানে আমরা জনপ্রতিনিধিরা মেয়রের নেতৃত্বে এই নগরীর উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছি, যা চলমান, সেখানে ৩ বৃটিশ এমপি যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া লোক দেখানোর কর্মকা- কিভাবে করেন। যা শুধু হাস্যকরই নয় অনভিপ্রেত ও অনাধিকার চর্চাও বটে!

Manual6 Ad Code

এই বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের ১৬, ১৭ ও ১৮ নং ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর শাহানারা বেগম বলেন, আমরা ক্লিন সিটির নাগরিক। আমরা দিন-রাত মেয়রের নেতৃত্বে নগরী পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্নতা এবং উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। বৃটিশ এমপিদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি দেশে-বিদেশে আমাদের সুনাম ক্ষুণœ হয়েছে। তবে বিষয়টি অনাকাঙ্খিত।

এই বিষয়ে নগরীর জল্লারপাড়ের বাসিন্দা শ্যামলী বেগম নামে এক গৃহবধু বলেন, মনে করেন আমার ঘরে কিছু মেহমান এসেছেন। তারা যদি এসে, ঘর পরিস্কারের কাজ শুরু করেন, তাহলে মনে করতে হবে আমি অপরিষ্কারভাবে ঐ ঘরে বসবাস করে আসছি। এই উদাহরণ থেকেই বলছি, বৃটিশ এমপিদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান আমাদের জন্য অপমানজনক।

সিলেটের চাকরীর খবরের সম্পাদক ও প্রকাশক সাইফুল ইসলাম নাহেদ জানান, বৃটিশ এমপিদের নগরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও নগরবাসীর জন্য লজ্জাজনক। বাংলাদেশ থেকে কোন প্রতিনিধি দল যুক্তরাজ্যে গিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছনতা অভিযানে কি অংশ নিতে পারবেন? নগরবাসীর জন্য চরম লজ্জাজনক এই বৃটিশ এমপিদের পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান।

তবে এই বিষয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনাকারী কমিটির সমন্বয়ক ইফতি সিদ্দিকী সিটি কর্পোরশনের এ বিষয়টি জানেননা বলে ব্যতিক্রমী বক্তব্য দিয়েছেন।

এ বিষয়ে সিসিক সচিব মোহাম্মদ বদরুল হক জানান, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানিনা, তবে সংবাদটি গণমাধ্যমে দেখেছি। তবে ইফতি সিদ্দিকী বলছেন তিনি সিসিকের সহযোগিতায় বৃটিশ এমপিদের দিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এই কর্মসূচিতে সিসিকের অন্যান্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

September 2019
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..