সৌদি থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরলেন সিলেটের ২২ নারী

প্রকাশিত: ৬:৫৬ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৩০, ২০১৯

সৌদি থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরলেন সিলেটের ২২ নারী

Manual5 Ad Code

‘সৌদির কপিলরা (গৃহকর্তা) অনেক খারাপ। কাজ করতে একটু দেরি হইলেই অনেক মারে। আমি দেয়াল মুছতে একটু দেরি করায় তিন দিন আমারে মারছে। এক সপ্তাহ কোনো খাওন (খাবার) না দিয়া একটা রুমে বন্দি কইরা রাখছে। তাদের নির্যাতন সহ্য করতে না পাইরা পালাইয়া আইছি। আর কয়েকদিন ওই কপিলের বাসায় থাকলে আমি মারা যাইতাম। ভাল কইরা বাঁচতে সৌদি গেছলাম, এখন কোনো রকম জীবন বাঁচাইয়া ফিরা আইছি।’

কথাগুলো বলছিলেন সৌদি আরবে নিয়োগকর্তা কর্তৃক নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরে আসা সিলেটের রুহেনা বেগম (২৫) (ছদ্মনাম)।

সোমবার (২৬ আগস্ট) আমিরাত এয়ারওয়েজের দু’টি বিমান যোগে দুই দফায় ১২ ঘণ্টায় দেশে ফিরেন ১১০ নারী গৃহকর্মী।  বিকেল ৫.২৫ মিনিটে ৪৫ জন ও রাত ১১.২০ মিনিটে ৬৫ জন নারী গৃহকর্মী দেশে ফিরেছেন। এই ১১০ জনের মধ্যে ২২জন ছিলেন সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা। ২২ জনের মধ্যে হবিগঞ্জ জেলার ৯ জন, সুনামগঞ্জ জেলার ৭ জন, সিলেট জেলার ৫ জন ও মৌলভীবাজার জেলার ছিলেন ১ জন।

রুহেনা বেগমের সাথে কথা বলে জানা যায়, সিলেটের চন্ডিপুল এলাকায় স্বামী ও ৬ বছরের মেয়েকে নিয়ে বাস করতেন হবিগঞ্জের রুহেনা বেগম (২৫) (ছদ্মনাম)। স্বামী যখন যে কাজ পেতেন করতেন। এর মধ্যে অনেক ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন রুহেনার স্বামী। তাই সংসারের অভাব দূর করতে ও ঋণ পরিশোধ করতে অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তখন এক দালাল এসে সৌদি গিয়ে কাজ করে টাকা আয় করার পরামর্শ দেয়। তার পরামর্শ অনুযায়ী ৯ মাস আগে সৌদি আরব যান রুহেনা। সেখানে গিয়ে এক কপিলের (গৃহকর্তা) বাসায় গৃহকর্মীর কাজে যোগ দেন রুহেনা। কাজে যোগ দেওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে কপিল ও তার স্ত্রী অমানুষিক নির্যাতন করতো তাকে। দেশে স্বামী ও সন্তানের কথা চিন্তা করে নির্যাতন সহ্য করেই ৭ মাস কাজ করেন রুহেনা। এর মধ্যে ৫ মাসের বেতন বাকী রাখেন গৃহকর্তা। পরে নির্যাতনের পরিমাণ বেড়ে গেলে পালিয়ে আসেন তিনি। সৌদির সড়কে এক বৃদ্ধ বাঙালীর সহযোগিতায় এম্বাসিতে যান । দুই মাস এম্বাসিতে থাকার পর গত সোমবার দেশে ফিরেন তিনি।

Manual4 Ad Code

রুহেনা বলেন, অনেক কষ্ট করে কাজ করেছি ৭ মাস। কাজ করতে সামান্য দেরি হলেই অনেক নির্যাতন করতো। আমার ৫ মাসের বেতনও পাওনা আছে। কিন্তু নিজের জীবন বাঁচাতে পালিয়ে আসি আমি। এম্বাসিতে আমার মত আরো ১৫০ নারী পেয়েছি আমি। সবাই কপিলের নির্যাতনের শিকার। কারো হাত ভাঙা আরো পা ভাঙা। প্রতিদিনই ১০ থেকে ১২ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়ে এম্বাসিতে আসে।

Manual5 Ad Code

একই দিনে নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরেন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার শিদ্দরপাশা গ্রামের তাহমিনা বেগম (১৯) (ছদ্মনাম)। দশম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন তাহমিনা। এরপরই বিয়ে হয় তার। বিয়ের পর সংসারের অভাবের জন্য দালালের মাধ্যমে ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে সৌদি যান তিনি। তার বয়স কম হওয়া ভুয়া জন্মনিবন্ধন দিয়ে ২৫ বছর দেখিয়ে তাকে সৌদি পাঠানো হয়। রুহেনার মত তিনিও গৃহকর্তার নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরে আসেন।

তাহমিনা বেগম বলেন, না বুঝে এভাবে বিদেশ যাওয়া ঠিক না। ওই দেশের মালিকরা কাজ করায় কিন্তু বেতন দেয় না। মারপিট করে, বাসায় বন্দি করে রাখে, অসুখ হলে চিকিৎসা করায় না, বাড়িতে কল করতে দেয় না। বিদেশ যাওয়া আর জেলা যাওয়া সমান। অনেক কষ্টে পালিয়ে আসছি। মালিকের বাসা থেকে পালানোর পর সৌদিতে সফর জেলে থেকে দেশে ফিরেছি।

Manual7 Ad Code

ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ১২ ঘণ্টায় দেশে ফেরা ১১০ নারী গৃহকর্মীর মধ্যে ২২ জন সিলেট বিভাগের। ওই ২২ জনের মধ্যে হবিগঞ্জ জেলার ৯ জন, সুনামগঞ্জ জেলার ৭ জন, সিলেট জেলার ৫ জন ও মৌলভীবাজার জেলার ছিলেন ১ জন ছিলেন। সোমবারে হযরত শাহজালাল (রা.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ওই ২২ নারী নিজ নিজ বাড়িতে ফিরেছেন বলে জানান ব্র্যাকের তথ্য কর্মকর্তা আল আমিন নয়ন।

Manual1 Ad Code

ব্র্যাকের তথ্য কর্মকর্তা আল আমিন নয়ন বলেন, নির্যাতনের শিকার হয়ে ফিরে আসা নারীদের আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী সাহায্য করার চেষ্টা করি। বিমানবন্দরে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম থেকে সকলকে জরুরি সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। নিরাপদে বাড়ী পৌঁছানোর জন্য ব্যবস্থা করে দিয়েছি আমরা।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

August 2019
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  

সর্বশেষ খবর

………………………..