সিলেটের মেয়েটি ঢাকার দশম তলায় গ্রিল ধরে ঝুলে ছিল কেন?

প্রকাশিত: ৯:২০ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩০, ২০১৯

সিলেটের মেয়েটি ঢাকার দশম তলায় গ্রিল ধরে ঝুলে ছিল কেন?

Manual6 Ad Code

আজ মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকের ঘটনা। রাজধানীর কাকরাইলের কর্ণফুলী গার্ডেন সিটির উল্টো দিকের ফুটপাতে ভিড় করেছেন পথচারীরা। তাঁদের বিস্ফারিত চোখ কর্ণফুলী গার্ডেন সিটির ঠিক পেছনের ভবনটির দিকে। ১৫ তলা ভবনের দশম তলার বারান্দার বাইরে ঝুলে আছে একটি মেয়ে। একটু-ওদিক হলেই নির্ঘাত মৃত্যু। ভবনটি থেকে সড়ক এত দূরে যে চিৎকার করে মেয়েটির উদ্দেশে বলা কোনো কথাই তার কানে যাচ্ছে না। বারান্দায় একটু পরপর এক নারী আসা–যাওয়া করছেন। একপর্যায়ে তিনি বারান্দা থেকে বের হওয়ার গ্রিলের তালা খুলে দেন। দূর থেকে বেশি বোঝারও উপায় নেই।

সার্কিট হাউস রোডের অ্যাপার্টমেন্ট ‘গাউছিয়া ডাইনেস্টি’। ভবনটির সামনে যেতেই দেখা গেল মেয়েটি আর ঝুলে নেই। ভবনের সামনে পুলিশের কয়েকজন সদস্য দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁরাও ওয়্যারলেসের মাধ্যমে ঘটনাটি সম্পর্কে জেনেছেন। তবে তাঁরা নিশ্চিত নন কোন তলায় ঘটনাটি ঘটেছে। ভবনের লোকজনও জানেন না। কথা হলো ভবনের ম্যানেজার আবদুস সাত্তারের সঙ্গে। তিনিও ঘটনা সম্পর্কে জানেন না। আমি তাঁকে ছবি দেখালাম। তিনি বারান্দায় আসা-যাওয়া করা নারীকে চিনতে পারলেন, দশম তলার ‘লাভলী ম্যাডাম’। এই তথ্য পেয়ে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মো. জহিরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একদল সদস্য ভবনের দশম তলার (লিফটের ৯) ‘বি-১০’ নম্বর ফ্ল্যাটে যান।

পুলিশ কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম ফ্ল্যাটের বারান্দায় ঝুলে থাকা মেয়েটির বিষয়ে জানতে চাইলে লাভলী রহমান বললেন, যে মেয়েটি ঝুলে ছিল তার নাম খাদিজা। তিনি জানান, খাদিজা ও হেলেনা তাঁর দুই গৃহকর্মী। তাঁর দাবি, দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয় এবং ঝগড়ার একপর্যায়ে খাদিজা বারান্দার বেষ্টনীর ফোকর গলে বাইরে ঝুলে থাকে। লাভলী সবার সামনেই খাদিজাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন।

Manual2 Ad Code

লাভলী একসময় আবু বকর নামের এক ব্যক্তিকে ফোন করেন এবং বলেন আগামীকাল বুধবারের মধ্যেই যেন তিনি এসে খাদিজাকে ফিরিয়ে নিয়ে যান। লাভলী জানান, আবু বকর খাদিজার মামা এবং তিনিই এক বছর আগে খাদিজাকে লাভলীর কাছে রেখে যান। খাদিজার বাড়ি সিলেটে।

Manual3 Ad Code

এক পর্যায়ে গ্রিলের তালা খুলে দেন গৃহকর্ত্রী লাভলী রহমান। সার্কিট হাউস সড়ক, রমনা, ঢাকা, ৩০ জুলাই। ছবি: আবদুস সালামভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মো. জহিরুল ইসলাম এবার লাভলী রহমানকে খাদিজাকে ডেকে আনতে অনুরোধ করেন। প্রথমে তিনি খাদিজাকে আনতে রাজি হননি। কয়েকবার অনুরোধের পর তিনি খাদিজাকে ডাকেন। তবে খাদিজা আসে না। তারপর জহিরুল ইসলাম নিজেই উঠে গিয়ে খাদিজাকে বসার ঘরে নিয়ে আসেন। খাদিজার বয়স ১৪ কি ১৫ বছর হবে। খাদিজাকে সোফায় বসতে বললে লাভলী রহমান বাধা দিয়ে বলেন, ‘ও আমার চাকর ও কেন বসব! ও দাঁড়িয়েই থাকব।’ খাদিজা মাথা নত করে দাঁড়িয়েই থাকল। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লাভলীকে অন্য ঘরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন।

Manual6 Ad Code

লাভলী চলে যাওয়ার পর তিনি খাদিজার কাছে জানতে চাইলেন, কেন এমনটি করেছে। কিন্তু খাদিজা কোনো জবাব দিল না। বারবার প্রশ্ন করেও তার মুখ দিয়ে একটি শব্দও বের করা গেল না। পরে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো কেউ তাকে মারধর করে কিনা। সে মাথা নেড়ে জানাল, কেউ তাকে মারে না। কিন্তু জানা গেল না, কেন সে বারান্দার বাইরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝুলে ছিল।

Manual5 Ad Code

বের হওয়ার সময় লাভলী পুলিশ পরিদর্শক জহিরুল ইসলামকে জানালেন, তিনি খাদিজার বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি করবেন।

ভবনের নিচে এসে ভবন ম্যানেজার আবদুস সাত্তারের সঙ্গে কথা হলো। তিনি জানালেন, খাদিজা সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। খাদিজাকে তিনি আজই প্রথম দেখলেন।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..