মিন্নিকে ফাঁসাতে ও খুনীদের বাঁচাতে, পুলিশের কাটপিস ভিডিও

প্রকাশিত: ৬:৪২ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩০, ২০১৯

মিন্নিকে ফাঁসাতে ও খুনীদের বাঁচাতে, পুলিশের কাটপিস ভিডিও

Manual3 Ad Code

রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় প্রথমে একটি মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল করা হয়েছিল। এরপর ভাইরাল করা হয়েছিল জেলা পুলিশের নিয়ন্ত্রণাধীন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনের একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজও। পুলিশের হাত ঘুরে গণমাধ্যমে আসা দ্বিতীয় ফুটেজটি ভাইরাল হওয়ার পর রিফাতের বাবা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মিন্নির সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলেছিলেন। প্রায় ২১ মিনিটের সেই ভিডিও ফুটেজটি কেটেছেঁটে ১১ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডের অংশই বাদ দেওয়া হয়। অন্তত চারবার ফুটেজটি কেটে এডিট (সম্পাদনা) করে উপস্থাপন করা হয় ৯ মিনিট ৩ সেকেন্ডে।

পুলিশের সরবরাহ করা সেই ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর খুনের পেছনে মিন্নির সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে তাঁকে গ্রেপ্তার করার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন রিফাতের বাবা। পরের দিন একই দাবিতে মানববন্ধন করার পর খুনের মামলার প্রধান সাক্ষী ও রিফাতের স্ত্রী মিন্নিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির স্বজনরা বলছে, খুনিদের আড়াল করতে ওই হত্যাকাণ্ডের পরপরই অপপ্রচার চালানো হয়েছিল। তারই অংশ হিসেবে গণমাধ্যমে পুলিশের সিসিটিভি ফুটেজ ছড়িয়ে রিফাতের পরিবারের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি করা হয়।

Manual3 Ad Code

বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে ২৬ জুন সকালে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই সময় মোবাইল ফোনে ধারণ করা একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর রিফাত হত্যা নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় বইতে থাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবাদে যারাই ভিডিওটি দেখেছে, তারা রিফাতের স্ত্রী মিন্নিকে ‘সাহসিকা’ বলে ধন্যবাদ জানিয়েছে। হঠাৎ করেই ৫ জুলাই রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনার আরেকটি সিসিটিভি ফুটেজ বেসরকারি একটি টেলিভিশনে প্রচারিত হয়। একটি মিডিয়ায় প্রচারের পর এ নিয়ে বরগুনার সাংবাদিকরা পুলিশ প্রশাসনের ওপর খেপে যান।

বরগুনা পুলিশ সুপারের সঙ্গে ৬ জুলাই দেখা করেন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। একই সঙ্গে তাঁরা পুলিশ সুপারের কাছে ক্ষোভের কথা বলেন। একটি মিডিয়াকে কেন ভিডিওটি সরবরাহ করা হলো তাও জানতে চান তাঁরা। তখন পুলিশ সুপার তাঁর কার্যালয়ে আসা সব সাংবাদিককে তাঁদের কাছে থাকা ভিডিও ফুটেজটি সরবরাহ করেন। ওই ঘটনার পরই বেশির ভাগ সাংবাদিক পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া ভিডিও ফুটেজটি নিয়ে নিউজ করেন। পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে ভিডিও ফুটেজ নিয়েছেন এমন অন্তত দুজন সাংবাদিক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কালের কণ্ঠকে।

Manual5 Ad Code

জেলা পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া একটি সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এটির বিভিন্ন অংশ কেটেছেঁটে উপস্থাপন করা হয়েছে। মোট সাতবার ফুটেজটি কেটে এডিট করা হয়েছে। ছয় মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের ফুটেজে দেখা যায়, প্রথমে সকাল ৯টা ৫৮ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড থেকে ১০টা ৩৩ সেকেন্ড পর্যন্ত কাটা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ১০টা ২ মিনিট থেকে ১০টা ৪ মিনিট ৪ সেকেন্ড পর্যন্ত কাটা হয়েছে। তৃতীয় ধাপে ১০টা ৪ মিনিট ৩৯ সেকেন্ড থেকে ১০টা ৫ মিনিট ৪০ সেকেন্ড পর্যন্ত কাটা হয়েছে। চতুর্থ ধাপে ১০টা ৬ মিনিট ৯ সেকেন্ড থেকে ১০টা ৯ মিনিট ৫২ সেকেন্ড পর্যন্ত কাটা হয়েছে। পঞ্চম ধাপে ১০টা ১০ মিনিট ৪২ সেকেন্ড থেকে ১০টা ১২ মিনিট ১ সেকেন্ড পর্যন্ত কাটা হয়েছ। ষষ্ঠ ধাপে কাটা হয়েছে ১০টা ১২ মিনিট ১৯ সেকেন্ড থেকে ১০টা ১২ মিনিট ৪৮ সেকেন্ড পর্যন্ত। সর্বশেষ ১০টা ১৬ মিনিট ১ সেকেন্ড থেকে ১০টা ২৩ মিনিট ১৭ সেকেন্ড পর্যন্ত কাটা হয়েছে।

Manual4 Ad Code

ওই ঘটনার পর জাতীয় দৈনিকে কর্মরত এক সাংবাদিক জেলা পুলিশের সঙ্গে দ্বিতীয় ভিডিও ফুটেজটি নিয়ে কথা বলতে যান। তখন পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ওই সাংবাদিককে একটি সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ সরবরাহ করেন। প্রায় ২১ মিনিটের সেই ভিডিওটি কেটেছেঁটে ১১ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডই বাদ দেওয়া হয়। অন্তত চারবার ফুটেজটি কেটে এডিট করে ৯ মিনিট ৩ সেকেন্ডের উপস্থাপন করা হয়। সেই ফুটেজের ১০টা ৬ মিনিটের পর ২ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের ভিডিও পাওয়া যায়নি। ১০টা ১১ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের পর এক মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের ভিডিও নেই। এ ছাড়া ১০টা ১৫ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের পর ৭ মিনিট ৫৬ সেকেন্ডের ভিডিও সেই ফুটেজে নেই।

Manual8 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..