মাদকের হাট কোম্পানীগঞ্জ : পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ

প্রকাশিত: ৩:৩৪ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৯, ২০১৯

মাদকের হাট কোম্পানীগঞ্জ : পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ

Manual3 Ad Code

পাথর রাজ্য সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ। বালু পাথরের জন্য অঞ্চলটির পরিচিতি সারাদেশে খ্যাত হলেও বর্তমানে এই রাজ্যের মাদকের ব্যবসাও ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে পাথররাজ্যের পাশাপাশি মাদকরাজ্যের নিরাপদ হাট হয়ে উঠবে কোম্পানীগঞ্জ-এমনটাই আশংকা স্থানীয়দের।

বিশেষ করে পাড়ুয়া গ্রামের সাকেরা পয়েন্ট এখন মাদক ব্যবসায়ীদের নিরাপদ আস্তানা। এই আস্তানায় দূর দূরান্ত থেকে জড়ো হয় বিভিন্ন শ্রেণীর মাদক সংশ্লিষ্ট মানুষ। কেউ মাদক সেবনে, আবার কেউ পাইকারী মাদকদ্রব্য ক্রয়ে। অর্থ্যাৎ সিলেট অঞ্চলের বৃহত্তম মাদক হাট এখন কোম্পানীগঞ্জের সাকেরা পয়েন্ট।

Manual5 Ad Code

স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। ছোটখাটো ব্যবসায়ীদের মাঝে মধ্যে গ্রেফতার করা হলেও মাদকের বড় ব্যবসায়ীরা অজ্ঞাত কারণে থাকছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। তাদের মতে, পুলিশ চাইলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এ উপজেলার মাদক ব্যবসা নির্মূল সম্ভব। যদিও এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তারা।

Manual6 Ad Code

সরেজমিন দেখা যায়, স্থানীয় ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারির পাথর সরবরাহের পরিবহন সংস্থাগুলোর অফিস সাকেরা ক্র্যাশার মিলের সামনে। এ থেকে সিলেট-ভোলাগঞ্জ রাস্তার পাড়ুয়া গ্রামের সেই স্থানটির নাম হয়ে যায় সাকেরা পয়েন্ট। এখানে পাইকারি ও খুচরা দামে মাদকের কেনাবেচা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীদের আনাগোনা থাকায় তাদেরকে টার্গেট করে গড়ে উঠেছে এই মাদক ব্যবসা।

৫ বছর আগে শুধু ভারতীয় মদ আর গাঁজা পাওয়া গেলেও তিন বছর ধরে এ হাটে যুক্ত হয়েছে মরণ নেশা ইয়াবা। এখান থেকে উপজেলার গ্রামে গ্রামেও চলে যায় মাদকের হোম ডেলিভারি। এর ফলে মাদক সহজেই পৌঁছে যাচ্ছে স্থানীয় তরুণ আর শিক্ষার্থীদের হাতে।

পাড়ুয়া গ্রামের এক ইয়াবা সেবনকারী নাম প্রকাশ না করে বলেন, সাকেরা পয়েন্টে ইয়াবার আড়ত রয়েছে। এখানে ইয়াবাই বেশি চলে। এর পাশাপাশি ভারতীয় মদ ও বিয়ার এবং গাঁজাও পাওয়া যায়।

Manual8 Ad Code

তিনি জানান, সাকেরা পয়েন্ট এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে রয়েছেন পাড়ুয়া বদিকোনা গ্রামের বাসিন্দা শাহ নূর। তিনি খুচরা ও পাইকারি ইয়াবা সরবরাহ করেন। পাড়ুয়া বাজারের বাসিন্দা পাইকারি ব্যবসায়ী সুহেল। পাড়ুয়া আলুঘাট এলাকার ইয়াবা ব্যবসায়ী রহমত আলী। এ ছাড়াও রয়েছেন বদিকোনা গ্রামের রফিক মিয়া, ইব্রাহিম মিয়া, পাড়ুয়া গ্রামের কালা মিয়া, পাড়ুয়া বাজার এলাকার লিটন মিয়া, ভোলাগঞ্জ গ্রামের খসরু, পাড়ুয়া গ্রামের জাফর মিয়া, ইরন মিয়া, শাহ জাহান, আজিম উদ্দিন ও মতিন মিয়া। এর মধ্যে কালা মিয়া কয়েকবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। পরে জামিন নিয়ে আবারও ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। মাদকের হোম ডেলিভারি দেয় কালার ভাই আমির আলি।

Manual1 Ad Code

সব ধরনের মাদকের খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতা পাড়ুয়া মাঝপাড়া গ্রামের খলিল মিয়া। তার পরিবারের কয়েকজন সদস্যও মাদক ব্যবসায় জড়িত। পুলিশের হাতে কয়েকবার আটক হলেও জামিনে বের হয়ে আবারও মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। সাকেরা এলাকার সবচেয়ে বড় মাদক ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান। ২৮ মে ৫৬০ পিস ইয়াবাসহ তাকে আটক করে র‌্যাব-৯-এর একটি দল। মোস্তাফিজের অবর্তমানে তার ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে নিচ্ছেন নয়াগাঙের পাড় গ্রামের সাদ্দাম হোসেন। আর হোম ডেলিভারিতে রয়েছেন জাফর, হিরণ, সুহেল ও কামরান।

সাকেরা পয়েন্টের মাদকের উৎসের খোঁজ করতে গিয়ে জানা যায়, এখানে মদ, গাঁজা, বিয়ার ও ফেনসিডিল আসে ভারত সীমান্ত দিয়ে। পরে তা কোম্পানীগঞ্জ হয়ে চলে যায় সিলেট শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। আর ইয়াবা আসে মিয়ানমার থেকে ভারতের মনিপুর হয়ে সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে। পরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার খাগাইল, গোয়াইনঘাট উপজেলার মিত্রি মহল ও ভরের ঘাট এলাকায় আনে ডিলাররা। এসব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা কম থাকায় ইয়াবা সরবরাহের বিশাল একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..