ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে সাংবাদিকের আত্মহত্যার চেষ্টা

প্রকাশিত: ১২:২৬ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২২, ২০১৯

ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে সাংবাদিকের আত্মহত্যার চেষ্টা

Manual5 Ad Code

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সুইসাইট নোট লিখে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন একটি বেসরকারি টেলিভিশনের ঢাকা অফিসের সাংবাদিক। তার নাম মো. সাইফুর রহমান শাকিল।

শনিবার রাতে ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন শাকিল। স্বজন ও সহকর্মীরা তাকে সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করালে এ যাত্রায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফেরেন শাকিল।

Manual4 Ad Code

ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শাকিল এখন আশঙ্কামুক্ত। তার পেট থেকে ক্ষতিকারক পদার্থ বের করে নেয়া হয়েছে। সহকর্মীরা সময়মতো হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন বলেই এ যাত্রায় বেঁচে গেলেন শাকিল।

এদিকে আত্মহত্যার চেষ্টার আগে শনিবার (৬ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টায় ‘স্বপ্ন চাষী’ নামে নিজের ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস লিখেন বেসরকারি সময় টেলিভিশনের ক্যামেরাপারসন শাকিল।

আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পরও কর্মক্ষেত্রে পর পর দুবছর কাজের মূল্যায়ন পাননি বলে হতাশা থেকে এই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন বলে ওই স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন শাকিল।

ফেসবুক পেজে দেয়া সাইফুর রহমান শাকিলের সেই স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো-

‘আমার মৃত্যুর জন্য সময় টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ দায়ী।

Manual4 Ad Code

২০১১ সাল থেকে সময়ের সাথে পথচলা শুরু। আজকের দিনটি পর্যন্ত একাগ্রতা, সততা ও ভালোবাসা দিয়ে কাজ করেছি। কখনও কাজের প্রতি, দায়িত্বের প্রতি অবহেলা করিনি। কখনও বলিনি আমার কর্মঘণ্টা শেষ, এখন আমি আর কাজে যেতে পারব না। কখনও কাজে গিয়ে বলিনি আমার রিপ্লেস পাঠাতে। তবু বছর শেষে শূন্যহাত পর পর দুবার।

যখন সময়ে যোগ দিয়েছিলাম, তার কয়েক মাস পর আরও দুটি চ্যানেলে ভালো বেতনে চাকরির অফার পেয়েছিলাম। আমাদের ব্যাচের অনেকেই চলে গিয়েছিল সময় ছেড়ে। আমি যাইনি। কারণ সময়ের প্রতি ভালোবাসা। সময়ের শুরুটা আমাদের হাত দিয়ে। নিচতলা থেকে ১০ তলা সিঁড়ি ডিঙিয়ে হেঁটে হেঁটে উঠেছি। প্রতিটি সিঁড়ির সাথে জড়িয়ে আছে গভীরতা, পরম মমতা।

ধরেই নিলাম কাজের কোয়ালিটির বিচারে হয়তো আমার ফলাফলটা খুব বেশি ভালো নয়, কিন্তু বছর শেষে যে শ্রমটুকু দিয়েছি তার মূল্যায়ন তো করতে পারত সময় টিভির মালিকপক্ষ?

কিন্তু পর পর দুই বছর করেনি। এবার আমাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জো ভাই (আহমেদ জুবায়ের) আশ্বাস দিয়েছিলেন আমাদের দেখবেন। কথা দিয়ে কথা রাখেননি জো ভাই।

এই অপমান কর্মজীবনকে বিষাক্ত করে তোলে। কাজের প্রতি তৈরি হয় অনীহা। আর জীবন হয়ে ওঠে গ্লানির। তাই মৃত্যু দিয়ে সময় টিভির মালিক পক্ষের অন্যায় নীতির প্রতিবাদ করে যেতে চাই।

হয়তো অনেকে ভাববেন চাকরিটা ছেড়ে দিলেই তো হয়। হ্যাঁ, হয়। আমার হাত-পা আছে, অল্পসল্প মেধা আছে, তা দিয়ে হয়তো জীবন চালাতে ঠেকায় পড়ব না।

আমিও অনেকক্ষণ ধরে কী করব ভাবছিলাম। চাকরিটা ছেড়ে দিলে সময় টিভির কিচ্ছু যায় আসে না। তাই বেশ কয়েকজন সহকর্মীর সাথে আলাপ করলাম, তারা বলল- শ্রম আদালতে যেতে। কিন্তু আদালতের প্রতি বিশ্বাস নেই আমার।

জানি মৃত্যু কোনো সমাধান নয়, কিন্তু অপমান বোধ থেকে তো মুক্তি পাওয়া যাবে। গতবারও এমন হয়েছিল, অপমানে সহকর্মীদের সামনে মুখ দেখাতে আর নিজেকে স্বাভাবিক করতে অনেক সময় লেগেছে। এবারও সে ঘটনার পুনরাবৃত্তি।

আমিসহ কয়েকজনের প্রতি চরম বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে মালিকপক্ষ। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি- আমার মৃত্যু দিয়ে এমন জগণ্য বৈষম্যের প্রতিবাদ করে যাই। হয়তো আমার মৃত্যু দিয়ে রচিত হবে আমার সহকর্মীদের সুদিন।

জানি, আমার মৃত্যুতে সময় টিভি লাভবান হবে। অন্তত মাসে ৩০ হাজার টাকার সাশ্রয় হবে। যেহেতু পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছি, সুতরাং চাওয়া-পাওয়ার আর কিছু নেই, চাকরি হারানোর ভয়ও নেই। শুধু মালিকপক্ষের কাছে অনুরোধ- আমার মৃত্যুর পর সময় টিভি থেকে আমার সামান্য জমানো অর্থ যা পাব তা যেন আমার স্ত্রীর হাতে তুলে দেয়। কেননা আমার দুটি সন্তান। সদ্য জন্ম নেয়া ছেলেটির মুখে যেন দুধটুকু তুলে দিতে পারে।

আমি পারতাম নীরবে বিদায় নিতে। মৃত্যুকে বরণ করতে। কিন্তু আমি চাই আমার মৃত্যুটা সবাইকে জানিয়ে হোক। কারণ আমাকে তিল তিল করে সময় টিভির মালিকপক্ষ মৃত্যুর দিকে ধাবিত করেছে। তাই আজ রাতটি আমার শেষ দিন।

আজ অথবা আগামীকাল সময় টিভির সামনে আমি মৃত্যুকে বরণ করে নিব।

ভালো থাকবেন সবাই। আমাকে ক্ষমা করবেন। আর যারা আমাকে ভালোবাসেন তাদের কাছে অনুরোধ আমার মৃত্যুর পর একটি বার প্রতিবাদ করবেন সময় টিভির এমন বৈষম্যমূলক আচরণের। আর সরকারের প্রতি অনুরোধ আমরা মিডিয়াকর্মীরা চরম নির্যাতনের শিকার হই বারবার। আমাদের দিকে মানবিক দৃষ্টিটা রাখুন।’

Manual6 Ad Code

Manual8 Ad Code

জানা গেছে, শনিবার রাতে শাকিলের ওই স্ট্যাটাস দেখে তার বন্ধুবান্ধব, স্বজন ও সহকর্মীরা বিচলিত হয়ে পড়েন। স্ট্যাটাসটির মন্তব্যের ঘরে প্রায় ২০০ জন তাকে আত্মহত্যা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেন। অনেকেই ছুটে আসেন শাকিলের বাসায়।

তবে শাকিল তার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। শনিবার মধ্যরাতে নিজ বাসায় আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি।

এ বিষয়ে সিনিয়র সাংবাদিক সালেহ বিপ্লব ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আত্মহত্যার চেষ্টা করে সফল হননি শাকিল। সময় টিভির ক্যামেরাপারসন। পেশাগত হতাশা থেকে এ আত্মহত্যার চেষ্টা, ফেসবুকে তাই লিখেছিলেন ঘুমের ওষুধ খাওয়ার আগে। শাকিল এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, আশঙ্কামুক্ত। আমি শাকিলকে এটুকুই বলব- আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়, পাপ।’

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..