সিলেট ৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৬ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৩:৫৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ২১, ২০১৯
সিলেটের বিশ্বনাথে হঠ্যাৎ করেই ‘ছেলে ধরা’ আতঙ্ক বিরাজ করছে। ছেলে ধরা চক্র এলাকায় ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং শিশু-কিশোরদের তুলে নিয়ে হত্যা করে মাথা কেটে নিয়ে যাচ্ছে এমন গুজবে ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলার সর্বত্র। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে অভিভাবক মহল। প্রাইমারি স্কুল ও কিন্ডার গার্টেন স্কুলগুলোতে সতর্কতা করা হচ্ছে অভিভাবকদের। স্কুলগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি কমে গেছে। ছেলে ধরা আতঙ্কে গ্রামের শিশু-কিশোররা ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি চক্র প্রচার করছে ‘পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। সেখানে অন্তত এক লাখ শিশু-কিশোরের কল্লা (মাথামুন্ড) দিতে হবে। সে মতে ৪২টি দল সারাদেশে শিশু-কিশোরদের কল্লা সংগ্রহে কাজ করছে। এমনই গুজব ছড়িয়ে পড়ছে উপজেলার প্রতিটি ঘরে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে শিশু-কিশোরদের অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। স্কুলে-স্কুলে জারি করা হয়েছে সতর্কাবস্থা। বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতির হার আগের চেয়ে কমে গেছে। অনেক অভিভাবক ভয়ে সন্তানদের স্কুলেও পাঠাচ্ছেন না। অথচ বিশ্বনাথে কোথাও কল্লা কাটার ঘটনা ঘটেছে-এমন খবর বা তথ্য পাওয়া যায়নি।
ছেলে ধরা’ আতঙ্কে গ্রামের শিশুরা বাড়ি থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে। অপরিচিত লোক দেখলেই মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। এতে বিপাকে পড়েছে ভিক্ষুকরা। অপরিচিত কেউ ভিক্ষা চাইতে গেলে গৃহস্থরা ভিক্ষা না দিয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। প্রতিদিনই গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে ‘ছেলে ধরা’র খবর আসছে। তবে ঘটনা অনুসন্ধান করতে গেলে তার সুনির্দিষ্ট কোনো সত্যতা মিলছে না। উপজেলার আট ইউনিয়নে ছেলে ধরা আতঙ্ক বিরাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন জায়গায় ছেলে ধরাকে গণধোলাই দেয়া হচ্ছে এমন খবর প্রতিদিন এলাকায় ছড়াচ্ছে। এতে এলাকার নারীরা ‘ছেলে ধরা’ আতঙ্কে ভুগছেন।
এদিকে, কাউকে ছেলেধরা বলে সন্দেহ হলে গণপিটুনি না দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিতে পুলিশ দপ্তরের পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে আহ্বান জানানো হয়েছে। গতকাল শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে এই আহ্বান জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পদ্মা সেতু নির্মাণে মানুষের মাথা লাগবে বলে একটি গুজব ছড়ানোকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে মর্মান্তিকভাবে কয়েকজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। গুজব ছড়িয়ে দেশের অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা রাষ্ট্রবিরোধী কাজের সামিল এবং গণপিটুনি দিয়ে মৃত্যু ঘটানো ফৌজদারী অপরাধ।
ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হয়ে এ পর্যন্ত যতগুলো নিহতের ঘটনা ঘটেছে পুলিশ প্রত্যেকটি ঘটনা আমলে নিয়ে তদন্তে নেমেছে। এসব ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। বিশ্বনাথ সদর ইউপি চেয়ারম্যান ছয়ফুল হক বলেন, এটা গুজব। এমন মিথ্যা গুজবে কান না দেওয়ার আহবান জানান।
বিশ্বনাথ থানার ওসি শামসুদ্দোহা পিপিএম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত ছেলে ধরার কোনো সত্যতা পাইনি। এটা সম্পূর্ণ গুজব। তবে গুজবে কান না দেয়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ করছি।’ এলাকায় কাউকে ছেলে ধরা সন্দেহে আটক করলে পুলিশে হাতে তুলে দেয়ার আহবান জানান তিনি।
Sharing is caring!


………………………..

Design and developed by best-bd