এমপির ছেলেকে বাঁচাতে আমার মেয়েকে বলি দেয়া হচ্ছে: মিন্নির বাবা

প্রকাশিত: ৭:২০ অপরাহ্ণ, জুলাই ২০, ২০১৯

এমপির ছেলেকে বাঁচাতে আমার মেয়েকে বলি দেয়া হচ্ছে: মিন্নির বাবা

Manual8 Ad Code

বরগুনার চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী ও নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির স্বীকারোক্তি জবানবন্দি নেয়াকে একটি মহলের ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর।

এছাড়াও তার দাবি, ‘নির্যাতন ও জোরজবরদস্তি করে তার মেয়ের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়া হয়েছে।’

গতকাল দুপুরে ৫ দিনের রিমান্ড পূর্ণ না করেই কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয় মিন্নিকে।

এসময় আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের পাশাপাশি উৎসুক জনতাও ভিড় জমান। আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেনও।

ওইদিন সন্ধ্যায় আদালত প্রাঙ্গণে মোজাম্মেল হোসেন অভিযোগ করেন, ‘ভয়ভীতি দেখিয়ে আমার মেয়ের কাছ থেকে সাজানো জবানবন্দি আদায় করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মিন্নি কোনোভাবেই জড়িত নয়।’

আপ্লুত কণ্ঠে মোজ্জাম্মেল হোসেন বলেন, ‘মেয়ে আমার জীবন বাজি রেখে তার স্বামীকে রক্ষা করতে গেছে। এটাই কি তার অপরাধ?’

এর পর তিনি অভিযোগের তীর ছোড়েন বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর দিকে।

তিনি বলেন, ‘এসব কিছুই শম্ভু বাবুর খেলা। তার ছেলে সুনাম দেবনাথকে বাঁচানোর জন আমার মেয়েকে বলি দেয়া হচ্ছে।’

এদিকে জবানবন্দির পর আদালত থেকে বের করে ছোট পিকআপে তোলার সময় মিন্নি কিছু একটা বলার জন্য উদ্যত হয়েছিলেন। কিন্তু পাশে থাকা নারী পুলিশ সদস্য এ সময় তার মুখ চেপে ধরেন।

এসময় তিনি বলেন, ‘মিন্নি মা, মিডিয়ার সাথে কথা বল, তোকে নির্যাতন করা হয়েছে, আপনারা ওরে কথা বলতে দেন। আমার মেয়েকে জোর করে স্বীকারোক্তি নেয়া হয়েছে। আমার মেয়ে অসুস্থ, প্লিজ ওকে নির্যাতন করবেন না।’

তিনি চিৎকার করে আরও অভিযোগ করেন, ‘আমার মেয়ে অসুস্থ। গতকাল রাতে একজন পুলিশ সদস্য বাসায় এসে মিন্নির চিকিৎসাপত্র নিয়ে গেছেন। আর আজ আচমকা তাকে আদালতে হাজির করা হলো! আমার মেয়েকে জোর জবরদস্তি ও নির্যাতন করেই এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ঢাকা থেকে আইনজীবীরা আসবে শুনে পুলিশ নির্যাতন করে তড়িঘড়ি আমার মেয়েকে দিয়ে মিথ্যা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করিয়েছে। হত্যাকাণ্ডের মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে আমার মেয়েকে গ্রেফতার করে মামলায় জড়ানো হয়েছে। এখন আবার তাকে দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও রেকর্ড করানো হলো। এর মাধ্যমে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করার চেষ্টা হয়েছে।

Manual8 Ad Code

মিন্নির বাবা আরও বলেন, আমি আইনি লড়াই করে সত্যটা বের করব ইনশাল্লাহ।

এদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও তার ছেলের ওপর মিন্নির বাবার এমন গুরুতর অভিযোগ বিষয়ে শম্ভু দেবনাথের ছেলে সুনার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মিন্নির বাবা কী বলছে, আমি সেটা জানি না। তবে এ ধরনের অভিযোগ মিথ্যা ও অমূলক। এ বিষয়ে আমি কিংবা আমার পরিবারকে পেঁচিয়ে মন্তব্য করা মূর্খ লোকের কাজ। তবে আমার যেটা মনে হচ্ছে, আমাদের বিরোধী চক্র দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।’

Manual5 Ad Code

গত মঙ্গলবার দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ৯টার দিকে মিন্নিকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এ মামলায় মিন্নিসহ এ পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত ২ জুলাই ভোরে মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।

মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদে এ হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হওয়ায় পুলিশ তাকে এ মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন।

এর আগে গত শনিবার রাত ৮টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করেন নিহত রিফাত শরীফের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ। সেদিন তিনি রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান।

তিনি বলেন, ‘আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি আগে নয়ন বন্ডকে বিয়ে করেছিল। ওই বিয়ে গোপন করে রিফাত শরীফকে বিয়ে করে সে। বিষয়টি আমাদের জানায়নি মিন্নি এবং তার পরিবার। কাজেই রিফাত শরীফ হত্যার পেছনে মিন্নির মদদ রয়েছে। তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনলে সব বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাবে।’

দুলাল শরীফ আরও বলেন, ‘নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির বিয়ের বিষয়টি মিন্নি ও তার পরিবার সুকৌশলে গোপন করেছে। নয়ন বন্ডের স্ত্রী থাকাবস্থায় আমার ছেলে রিফাতকে বিয়ে করেছে মিন্নি। রিফাতের সঙ্গে বিয়ের পরও মিন্নি নয়নের বাসায় যাওয়া-আসা করত। নিয়মিতভাবে নয়নের সঙ্গে যোগাযোগ করত সে।’

গত ২৬ জুন রিফাতকে প্রকাশ্য সড়কে কুপিয়ে হত্যার সময় স্বামীকে বাঁচাতে মিন্নির চেষ্টার ভিডিও ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ঘটনাটি সারাদেশে আলোচনায় উঠে আসে।

Manual5 Ad Code

পরদিন শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে যে মামলাটি করেন, তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয় মিন্নিকেই।

সৌজন্যে : যুগান্তর

Manual3 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..