ধর্ম ত্যাগ করেও তসলিমাকে পাননি কুলাউড়ার লিটন

প্রকাশিত: ৯:০৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ১২, ২০১৯

ধর্ম ত্যাগ করেও তসলিমাকে পাননি কুলাউড়ার লিটন

Manual6 Ad Code

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার লিটন দাস (২৫) পেশায় কাঠমিস্ত্রী। কাজের সূত্রে বছর দুয়েক আগে একই এলাকার জহুর উদ্দিনের বাড়িতে যান তিনি। সেই থেকে জহুর উদ্দিনের স্কুল পড়ুয়া মেয়ে কুলসুমা বেগম তসলিমা(১৭)-এর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে লিটন দাসের।

তসলিমাকে পেতে মাস ছয়েক পূর্বে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন লিটন দাস। এরপর থেকে তার নাম হয় আব্দুল আজিজ। কিন্তু তসলিমাকে আর পাওয়া হয়নি তাঁর। গত ৪ জুলাই রহস্যজনকভাবে মারা যায় কুলসুমা বেগম তসলিমা। এই মৃত্যু নিয়ে এলাকায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রেমঘটিত কারণে পরিবারের লোকজনের নির্যাতনে তসলিমা মারা যেতে পারেন বলে ধারণা স্থানীয়দের। যদিও পরিবারের সদস্যরা একে স্বাভাবিক মৃত্যুই বলছেন।

Manual3 Ad Code

আব্দুল আজিজ কুলাউড়ার বরমচাল ইউনিয়নের টিকরা গ্রামের গ্রামের বাসিন্দ। আরএকই ইউনিয়নের মহলাল (রফিনগর) গ্রামের জহুর উদ্দিনের মেয়ে কুলসুমা বেগম তসলিমা উপজেলার বরমচাল উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী। তার মা কয়েক বছর আগে মারা যান। তাসলিমারা দুই বোন ও এক ভাই।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৪ জুলাই সকাল আনুমানিক ১১টায় স্কুলড্রেস পরিহিত অবস্থায় তাসলিমা বরমচালস্থ কালামিয়ার বাজারের পাশে আব্দুল আজিজের বাসায় তার সাথে দেখা করতে যায়। তখন বাজারের ব্যবসায়ীরা সন্দেহবশত গ্রাম পুলিশ কয়ছর মিয়াকে সাথে নিয়ে ওই বাসায় যান। বাসায় গিয়ে স্কুলছাত্রীর পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর ব্যবসায়ীরা গ্রাম পুলিশ কয়ছর মিয়াকে দিয়ে তাসলিমাকে তার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।

মহলাল (রফিনগর) এলাকার লোকজন জানান, সকালের ঘটনার পর বিকাল আনুমানিক ৫টায় একটি সিএনজি অটোরিক্সায় করে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বাড়ির লোকজন তাসলিমাকে নিয়ে বেরিয়ে যান। রাতে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে আবার ফেরত আসেন। আসার পর এলাকার মানুষকে পরিবারের সদস্যরা জানান, তাসলিমার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ (স্ট্রোক) হয়ে মারা গেছেন। পরদিন শুক্রবার সকাল ১১টায় তাসলিমার দাফন সম্পন্ন করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাসলিমার লাশ গোসলের দায়িত্বে থাকা এক নারী জানান, তাসলিমার গালে আঁচড় এবং গলায় আঙুল দেবে যাওয়ার চিহ্ন ছিলো। তবে দাফনের আগে বিষয়টি কেউ পুলিশকে অবহিত করেনি।

Manual7 Ad Code

এ ব্যাপারে আব্দুল আজিজ বলেন, কাজের সুবাদে তাসলিমাদের বাড়িতে যাতায়াত করতে গিয়ে তার সাথে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। সেই সুবাদে প্রায় ২ বছর আগে তাসলিমার সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তসলিমার জন্যে ৬ মাস আগে হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে আমি মুসলমান হই। তাসলিমার মা মারা যাওয়ার আগে ৪ দিন উনার সাথে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে সার্বক্ষণিক ছিলাম। তাসলিমার বাবা জহুর উদ্দিন স্ত্রীর মৃত্যুর পর দেশে ফিরে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যয়ভারও বহন করেছি। এছাড়াও আমার কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা ধার নিয়েছে তাসলিমার পরিবার।

আজিজ বলেন, তাসলিমার সাথে সম্পর্কের বিষয়টি জেনে জহুর উদ্দিন আমাদের দু’জনকে মারপিটও করেন। এরপর থেকে উভয়ের দেখা সাক্ষাৎ কমে যাওয়ায় ঘটনার দিন তাসলিমা আমার সাথে দেখা করতে আসে। তিনি বলেন, আমি হিন্দু থেকে মুসলমান হয়েছি তাসলিমার জন্য। তসলিমার বড়বোন ও ভাই হাবিবুর রহমান রাহাতকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলেই মৃত্যুর আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে।

বরমচাল ইউনিয়নের গ্রামপুলিশ কয়ছর মিয়া জানান, কালামিয়ার বাজারের পাশে আব্দুল আজিজের ভাড়া বাসায় তাসলিমাকে পাওয়ার পর তার চাচা জয়নাল মিয়াকে ফোন দেই। তিনি তাসলিমাকে বাড়িতে নিয়ে দেয়ার কথা বলেন। আমি তাসলিমাকে বাড়িতে দিয়ে আসি। কিন্তু বিকালে শুনি তাসলিমা স্ট্রোক করে মারা গেছে। এটা কি করে সম্ভব?

নিহত তাসলিমার বাবা জহুর উদ্দিন জানান, ঘটনার দিন তিনি বাড়িতে ছিলেন না। বাড়িতে ফিরে মেয়েকে অসুস্থ অবস্থায় বৃহস্পতিবার আছরের পর ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে গেলে একঘণ্টা পর তাসলিমার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর ২-৩ দিন পর পুলিশ বাড়িতে এসেছিলো। বৃহস্পতিবারে কালামিয়ার বাজারে কি ঘটেছে, তা তিনি জানেন না।

কুলাউড়া থানার ওসি (তদন্ত) সঞ্জয় চক্রবর্তী মোবাইলে বলেন, বিষয়টির ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে অধিকতর তদন্ত চলছে। তদন্তক্রমে আইনী প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Manual6 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..