ভুয়া চিকিৎসকদের সাম্রাজ্য : প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে চিকিৎসা ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ৬:১৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৮

ভুয়া চিকিৎসকদের সাম্রাজ্য : প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে চিকিৎসা ব্যবস্থা

Manual7 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : মেডিকেলে না পড়েও ভূয়া চিকিৎসক আর ভূয়া ডিগ্রীধারী চিকিৎসকের যেন অন্ত নেই।  দিনে দিনে তাদের সংখ্যা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে, যেন গোটা সাম্রাজ্যই তারা জেঁকে বসেছে।  পত্রিকার পাতায় প্রায়ই বড় করে নিউজ হচ্ছে “ভূয়া চিকিৎসক আটক” “চিকিৎসার নামে প্রতারণার দায়ে ভূয়া চিকিৎসকের কারাদণ্ড” ইত্যাদি। আর যার ফলে ক্ষুন্ন হচ্ছে প্রকৃত চিকিৎসক ও চিকিৎসার সুনাম। এতে একদিকে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা হয়ে পড়ছে প্রশ্নবিদ্ধ, অন্যদিকে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন অনেক রোগী।

Manual3 Ad Code

এদিকে অসাধু এই চিকিৎসকদের ভুয়া ডিগ্রী ব্যবহার বন্ধে সরকারেরও কার্যকর কোন উদ্যোগ নেই। বছরে দু-একটা অভিযান চালিয়েই সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব শেষ। একের পর এক সতর্কীকরণ বার্তা দিয়েও ভুয়া ডিগ্রী ব্যবহার বন্ধ করতে পারছে না বাংলাদেশ মেডিক্যাল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)।

Manual2 Ad Code

বিএমডিসির নেতৃবৃন্দের অভিযোগ, ভুয়া চিকিৎসকের পাশাপাশি অনেক প্রকৃত চিকিৎসকও ভুয়া ডিগ্রী ব্যবহার করে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে যাচ্ছেন। বারবার সতর্ক করে দেয়ার পরও এ সমস্যা দূর হচ্ছে না। স্বীকৃত পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রী না থাকা সত্ত্বেও তাদের কেউ কেউ নিজেকে ‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। যা বিএমডিসি আইনের পরিপন্থী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

Manual3 Ad Code

বিএমডিসির এক কর্মকর্তা জানান, স্বীকৃত ডিগ্রীপ্রাপ্ত অনেকে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের নিবন্ধন ছাড়া চিকিৎসাকার্য পরিচালনা করছেন। কোন কোন নিবন্ধিত চিকিৎসক/ দন্ত চিকিৎসক তাদের সাইনবোর্ড, প্রেসক্রিপশান প্যাড, ভিজিটিং কার্ড ইত্যাদিতে, পিজিটি, এফসিপিএস (পার্ট-১,২), এমডি (ইন কোর্স, পার্ট-১,২, থিসিস পর্ব), এমএস (পার্ট-১,২, থিসিস পর্ব, সিসি) ইত্যাদি ব্যবহার করছেন, যা কোন স্বীকৃত অতিরিক্ত চিকিৎসা যোগ্যতা নয়।

তাছাড়া স্বীকৃত পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রী না থাকা সত্ত্বেও কেউ কেউ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সার্জারি বিশেষজ্ঞ, গাইনি বিশেষজ্ঞ, শিশু বিশেষজ্ঞ, চক্ষু বিশেষজ্ঞ ইত্যাদি ব্যবহার করছেন, যা বিএমডিসি আইনের পরিপন্থী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আবার কোন কোন চিকিৎসক তাদের ব্যবস্থাপত্রে এমন কিছু ওষুধ লিখছেন, যা সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ।

Manual3 Ad Code

আইনের ২৯(১) ধারা অনুযায়ী ভুয়া পদবি, ইত্যাদি ব্যবহার নিষিদ্ধ। এই আইনের অধীন নিবন্ধনকৃত কোন মেডিক্যাল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক এমন কোন নাম, পদবি, বিবরণ বা প্রতীক এমনভাবে ব্যবহার বা প্রকাশ করবেন না, যার ফলে তার কোন অতিরিক্ত পেশাগত যোগ্যতা আছে মর্মে কেউ মনে করতে পারেন। যদি না তা কোন স্বীকৃত মেডিক্যাল চিকিৎসা-শিক্ষা যোগ্যতা বা স্বীকৃত ডেন্টাল চিকিৎসা শিক্ষা যোগ্যতা হয়ে থাকে। ন্যূনতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রীপ্রাপ্তরা ব্যতীত অন্য কেউ তাদের নামের পূর্বে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না। কোন ব্যক্তি এই উপধারা লঙ্ঘন করলে উক্ত লঙ্ঘন হবে একটি অপরাধ এবং তার জন্য তিনি ৩ বছর কারাদন্ড বা ১ লাখ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হবেন এবং উক্ত অপরাধ অব্যাহত থাকলে প্রত্যেকবার তার পুনরাবৃত্তির জন্য অন্যূন ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ডের অতিরিক্ত হিসেবে দন্ডনীয় হবেন।

মেডিকেলে না পড়েও কোন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বা অভিজ্ঞ ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে তারা কিছু চিকিৎসা জ্ঞান অর্জন করে চিকিৎসাসেবা চালাচ্ছেন এদের সংখ্যাও কম নয়।  এরকম চিকিৎসক রয়েছেন প্রায় আড়াই লাখ। তারা চিকিৎসা সেক্টরের জন্য বেশ হুমকিস্বরূপ।  সরকারী অনুমোদন না থাকলেও এ ধরনের চিকিৎসকরা দেশের আনাচে কানাচে চিকিৎসা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।

সব মিলিয়ে এই ভুয়া চিকিৎসকদের সাম্রাজ্যে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। অনেক সময় তাদের ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন অনেক রোগী।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..