সিলেট ৩১শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১০ই রজব, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৯:১৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩১, ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :: কথিত আছে কয়েক শত বছর পূর্বে হজরত শাহজালাল রহঃ এর সফরসঙ্গী হজরত শাহআরেফীন নামের অলী প্রকৃতির অপরুপ সবুজের সমারোহে বনাঞ্চলের গহীন অরণ্য টিলায় বিশ্রাম নিয়েছিলেন একসময়। পরবর্তী সময়ে সেই টিলার নামকরণ হয় শাহআরেফীন টিলা নামে। ভক্ত অনুরাগী আর প্রকৃতির অপরুপ দৃশ্য অবলোকনে পর্যটকদেরও আনাগোনা হয় বেশ।
কিন্তু একদশকের বেশি সময় ধরে চলছে পাথর লুটপাট। এবার পাথরলুটকে কেন্দ্র করে হামলা,মামলা,চাঁদাবাজির মহোৎসব চরম আকার ধারণ করেছে। পেশী শক্তির ইশারায় সিন্ডিকেট বাহীনি কোয়ারী থেকে দেদারসে শতশত শ্রমিক, ফেলোডার, লিস্টার মেশিন ব্যবহার করে তুলে আনছে পাথর, জমিদখল নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষসহ মামলা,অন্যদিকে পাথরবাহী ট্রাক্ঠর হতে গাড়ী প্রতি চাঁদা আদায়ে চরম আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশংকা স্হানীয়দের।
সম্প্রতি পাথর অধ্যূষিত শাহ আরেফীন এলাকায় জমিদখল নিয়ে হামলায় বেশ কজন স্হানীয় ব্যক্তি গুরুতর আহত হন।
অভিযোগসূত্রে জানা যায়, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ইং, সকাল আনুমানিক ১০টায় চিকাডহর মৌজার এস.এ-৮৯নং দাগভুক্ত জমিতে মালিকানা দাবিদার পরিবারের সদস্য ইকবাল হোসেন দেখতে পান, তার পিতার রেকর্ডীয় জমি থেকে একটি সংঘবদ্ধ দল পাথর উত্তোলন করছে। তিনি বাঁধা দিলে ইউনুস আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন চিকাডহর গ্রামের আনাইয়ের নেতৃত্বে পূর্বপরিকল্পিতভাবে দেশীয় অস্ত্রসহ হামলা চালানো হয়। এতে চিকাডহর গ্রামের সায়েদ, করিম, বফিরুজ, সাজুসহ বেশ ক’জন জখম হন।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে আনাইকে প্রধান আসামী করে এজাহারনামীয় বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। মামলায় অজ্ঞাত রাখা হয়েছে আরো অনেককে।
কোয়ারী এলাকায় লুটপাটের সাথে জড়িতদের মধ্যে রয়েছেন চিকাডহর, নারাইনপুর, জালিয়ার পার এলাকার সিন্ডিকেট বাহীনির মধ্যে মাসুক, আবুল, সাজ্জাদ, বাবুল, বশর, আনাই, গউস, আলাই, আইয়ুব, রহিম, খালিকসহ বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট।
কিন্তু এই চক্রের সদস্যরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। তাদের আটক না করে নিরীহ ১৬ জন শ্রমিককে আটক করা হয়েছে। এনিয়ে স্থানীয় এলাকার সচেতন মহলের মধ্যে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন?

Oplus_16908288
সূত্র জানায় কোয়ারী এলাকায় ফেলোডার, ট্রাক্টর ব্যবহার করে সেখানেও পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে গর্ত প্রতি ৩/৫ হাজার টাকা করে লাখ লাখ টাকার চাঁদা উত্তোলন করা হয়।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে পাথরবাহী ট্রাক্ঠর হতে শাহআরেফীন টিলা থেকে রাতের আঁধারে আগত ভোলাগঞ্জ পাড়ুয়া ক্রাশার মিল অধ্যূষিত এলাকায় আসতে তিনটি পথে চাঁদাবাজির অভিযোগ স্হানীয় একাধিক সূত্রে। চাঁদাবাজির বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে ছবিসহ উপজেলা প্রশাসন কোম্পানীগঞ্জ এর দৃষ্টি আকর্ষণের লক্ষ্যে।
আরেকটি সূত্রে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান ভোলাগঞ্জ, নোয়াগাও দুটি পথে পাথরবাহী গাড়ী থেকে এলাকার চিহ্নিত চাঁদাবাজ চক্র প্রতি গাড়ি হতে ৫০০ টাকা করে চাঁদা তুলে। তিনি আরো বলেন ভোলাগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল মামুন এর নেতৃত্বে টহলের অজুহাতে গাড়ী আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার অজুহাতে ১০/২০ হাজার টাকা করে প্রতিনিয়ত ব্যাপক পুলিশের চাঁদাবাজি চলছে। এস আই আব্দুল্লাহ আল মামুন কয়েকমাসে ৫০ লাখ টাকার মালিক হয়েছেন বলে জানান ঐ স্হানীয় বাসিন্দা। সব মিলিয়ে প্রতি রাতে কয়েকলাখ টাকার চাঁদাবাজি চলছে বলে জানা গেছে।
স্হানীয় একটি সূত্রে জানা যায়, পাথরবাহী ট্রাক্ঠর থেকে পাড়ুয়া নোয়াগাও, ভোলাগঞ্জ, আলুরঘাট এলাকায় গত কয়েক মাস ধরে ইলিয়াস আলী রাসা, হুমায়ুন, কেরামত, রাজু, লালু, কবির, শাহীন, আসগর, জিলানীসহ বেশ কয়েকজনের নাম চাঁদাবাজিতে সরগরম বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্হানীয় জানান পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দোসররা তাদের অপকর্ম চাদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করলে সিন্ডিকেট বাহীনি প্রাননাশসহ ভয়ভীতি দেখায়।
সবমিলিয়ে স্হানীয়দের দাবি যে বা যারা চাঁদাবাজি ও পাথর লুটে জড়িত তারা চিহ্নিত চক্র যা পুলিশ প্রশাসনের কাছে নাম লিপিবদ্ধ আছে। অতীতে গণমাধ্যমে যা প্রকাশিত তবুও কোন অদৃশ্য শক্তির ইশারায় মূল হোতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্হা নিচ্ছেনা পুলিশ প্রশাসন।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি শফিকুল ইসলাম খান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্হা নেয়া হবে। শাহআরেফীন টিলার পাথর লুটপাট বন্ধে কোম্পানীগঞ্জ পুলিশ তৎপর রয়েছে। ইতিমধ্যে চেকপোষ্ট বসানো হয়েছে। পুলিশ টহলের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রমাণ পেলে উর্ধতন কতৃপক্ষকে অবহিতকরণে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান প্রতিবেদককে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিন মিয়া বলেন, শাহ আরেফীন টিলার পাথর লুটপাট ঠেকাতে উপজেলা প্রশাসন কোম্পানীগঞ্জ তৎপর রয়েছে। সার্বক্ষণিক নজরদারিতে পুলিশ টহলসহ পরিবেশ ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
Sharing is caring!


………………………..

Design and developed by best-bd