সিলেট ৩০শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৪ঠা সফর, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:১৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৭, ২০২৫
ক্রাইম প্রতিবেদক : গণআন্দোলনে পদত্যাগে বাধ্য হয়ে দেশত্যাগী শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে পুলিশে নিয়োগ পাওয়া সাবেক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের খুঁজে বের করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এঘটনায় দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকায় ৩ জুলাই“ওসি ছিলেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সভাপতি,বাবা আ’লীগের আইন সম্পাদক” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর রাজনৈতিক দর্শন খুঁজতে দ্বিতীয়বার পুলিশ ভেরিফিকেশন শুরু হয়েছে বলে গোপনসূত্রে জানাগেছে। সিলেটের লালাবাজার ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ঝিকু বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ২০০২ সালে লালাবাজার ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন মো. হুমায়ুন কবীর খোকন, যিনি বর্তমানে ভালুকা থানার ওসি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। ওই কমিটির সভাপতি আলী হায়াৎ যুক্তরাজ্য চলে যাওয়ায় বেশ কয়েকমাস ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন হুমায়ুন কবীর খোকন। এছাড়াও দক্ষিণ সুরমা থানা ছাত্রলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক, এমসি কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সংবাদের কাটিং সহ প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইজিপি বরাবরে সায়মন রেজা নামের এক ব্যাক্তি বাদী হয়ে তিনটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগের পর সম্প্রতি ময়মনসিংহ ও সিলেটের একটি গোয়েন্দা সংস্থা’র কর্মকর্তাদের তদন্ত করতে নির্দেশনা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ২০১০ সাল ও তার পরে নিয়োগ পাওয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের ৮টি তথ্য যাচাই করা হবে। পাশাপাশি তার রাজনৈতিক পরিচয়, পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড ও ক্যাম্পাস রাজনীতিতে ভূমিকা দেখা হবে। পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ইতিমধ্যে ময়মনসিংহ রেঞ্জে ওসি পদায়নে সাবেক ছাত্রলীগ-নেতাকর্মীদের থানায় পদায়ন করা হয়েছে যা গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। যেসকল কর্মকর্তাগন ওসি পদায়নে সরাসরি সহায়তা এবং তদবির করেছেন তাদের বিষয়েও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। প্রমানিত হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আরও জানান, ময়মনসিংহ রেঞ্জে যারা ইতিমধ্যে ওসি হিসাবে কর্মরত, তাদের জীবন বৃত্তান্ত পুনরায় যাচাই-বাছাই করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং ইতিমধ্যে একটি গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করছে। জানাগেছে উক্ত গোয়েন্দা সংস্থা’র একজন উপ-পরিচালক পদমর্যাদার কম নয়, এমন একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে সর্বোচ্চ গোপনীয়তা বজায় রেখে দ্রুত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে কর্মকর্তার নাম, জন্ম তারিখ, জাতীয় পরিচয়পত্র, সচল একাধিক ফোন নম্বর, ই-মেইল, ফেসবুক, টিআইএন নম্বর এবং পাসপোর্ট নম্বর সংযুক্ত করতে বলা হয়েছে। গোপনীয় প্রতিবেদনে কর্মকর্তা যে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন তার নাম, সেশন ও অধ্যয়ন করা বিষয় এবং অবস্থান/আবাসিক হলের তথ্য দিতে হবে। ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার তথ্য ছাড়াও প্রার্থী অন্য জেলায় অধ্যয়ন করে থাকলে সংশ্লিষ্ট জেলায় যোগাযোগ পূর্বক তার রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে। (রক্ষিত মূল ভেরিফিকেশন নথি থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম সংগ্রহ করে পুনরায় অধ্যয়নকালীন রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়াও কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন করে বন্ধুর নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর, সংশ্লিষ্ট থানার রেকর্ড (সিডিএমএসের তথ্য) যাচাই করে দিতে হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। আরও বলা হয়, প্রার্থীর রাজনৈতিক সংশ্লেষ ছাড়াও কোনোরূপ জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় জড়িত কি না সেই তথ্য দিতে হবে। প্রার্থী সম্পর্কে এলাকার স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, গ্রহণযোগ্যতা আছে এমন জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক এবং তার সমসাময়িক বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তার ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে। ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভালুকা মডেল থানার ওসি মোঃ হুমায়ুন কবীরের তদন্ত শুরু হয়েছে। তিনি ছাত্রলীগ করতেন, তদন্তে প্রমানিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার (অতিরিক্ত আইজিপি) মোঃ রেজাউল করিম পিপিএম-বিপিএম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওসি হুমায়ুন কবীরের বিষয়ে আমরা তদন্ত করছি। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কমিটি তো অনেক আগের, তা খোঁজে বের করতে সময় লাগছে। তারপরও আমরা পক্ষে-বিপক্ষের কথা শুনেছি। উভয়ের বক্তব্য আমরা নিয়েছি। যাচাই-বাছাই করছি। এখনো তদন্ত চলমান।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd