সিলেট ৩০শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৪ঠা সফর, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৭:২৬ অপরাহ্ণ, জুন ২, ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটের গোয়াইনঘাট থানায় থাকাকালীন সময় ওসি রফিকুল ইসলাম ভারতীয় চোরাচালান ও বালু-পাথর থেকে শত কোটি টাকা লুটে নিয়েছেন তিনি। ৫ই আগস্টের পর কালো টাকাকে সাদা করার জন্য থানা থেকে পালিয়েছেন। এতদিন পেরিয়ে গেলেও তার বিরুদ্ধে হচ্ছে না দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের তদন্ত। খুঁটির জোর কোথায়? এনিয়ে গোয়াইনঘাটের মানুষের মধ্যে নানাবিদ প্রশ্ন বিরাজ করছে।
সাবেক ওসি রফিকুল ইসলাম মাত্র আট মাস অফিসার ইনচার্জের দায়িত্ব পালন করে গড়েছেন কালো টাকার পাহাড়। নিজেকে রক্ষা করতে ৫ই আগস্ট পট-পরিবর্তনের পর নিজ থেকেই থানা থেকে সরে এসেছেন। সরে যাওয়ার মূল কারণ ছিলো তিনি আট মাস থানায় দায়িত্ব পালন কালে আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে নিয়েই গোয়াইনঘাটে সর্বত্র লুটপাট করেছেন। ফলে গোয়াইনঘাটের উত্তেজিত জনতা বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কঠোর আন্দোলন শুরু করেছিলেন। বিদায় নিজের অবৈধ সম্পদকে বৈধ করতে নিরবে গোয়াইনঘাট ছেড়ে চলে যান। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে গোয়াইনঘাটের বাসিন্ধাদের দায়ের করা একাধিক মামলা টাকা দিয়ে সমাধান করেছেন।
গোয়াইনঘাটে মাত্র আট মাসে ওসি রফিকুল ইসলাম অবৈধ ভাবে বালু ও ভারতীয় চোরাই পণ্য থেকে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তোলেছেন। তার এহেন অপকর্ম ও বহির্ভূত অবৈধ সম্পদের হিসাব চায়নি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ফলে সে আইনে ফাঁকে বেরিয়ে যাচ্ছে। গোয়াইনঘাটবাসীর রক্ত চুষে খাওয়া ওসি রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রয়োজন বলে মনে করছেন উপজেলার সচেতন মহল।
এই সময়ে হয়েছেন শতকোটি টাকার মালিক। থানায় যোগদানের পরে মুশকিল আসান হিসেবে পরিচিতি পান ওসি রফিকুল। ইতোমধ্যেই তার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। কালো টাকার কুমির এই ওসির বিরুদ্ধে এখনো নেওয়া হচ্ছে না আইনি ব্যবস্তা। দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে বেরিয়ে আসবে এই ওসির সকল কালো টাকা উপার্জনের উৎস।
জানা গেছে, অসৎভাবে উপার্জিত শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। যার বিশেষ বৈশিষ্ট্য মামলা বাণিজ্য। চোরকারবারিদের ব্যবহার করে ও নিরীহ লোকজনকে আসামি বানিয়ে শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি। তার সময় গোয়াইনঘাটের চারটি পয়েন্ট চোরাচালানিদের স্বর্গরাজ্য। যেগুলো হচ্ছে বিছনাকান্দি, মাতুরতল, হাজীপুর ও পূর্ব জাফলংয়ের সোনাটিলা এলাকা। এসকল এলাকা ওসি নিজেই দেখভাল করতেন। পুলিশের এই কর্মকর্তা যোগদান করার পর থেকেই নিয়মিত ভারত থেকে ৩০-৪০ হাজার বস্তা চিনির চালান ঢুকত ওইসকল রুট দিয়ে। সকল মুশকিল আসান হিসেবে সুপরিচিত ওসি রফিকুলের ঘুষ ছাড়া হুঁশই থাকে না বলে জানিয়েছেন ভুক্তোভোগীরা। সে আওয়ামী লীগের লোকজনকে নিয়ে থানা এলাকার প্রতিটি নদীতে পুলিশ পাহারায় ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে হাতিয়ে নিয়েছে দৈনিক কোটি কোটি টাকা। কেউ প্রতিবাদ করলেই ওসি তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতেন।
মূলত নির্বাচন কেন্দ্রিক রদবদলে তাকে গোয়াইনঘাট থানায় পাঠানো হয়। নির্বাচনকে সামনে রেখে গোয়াইনঘাটে যোগ দিলেও গোটা উপজেলার সীমান্ত এলাকাকে চোরাকারবারিদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেন তিনি। একইসঙ্গে বিরোধীদের দমন-পীড়নও চালান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে টাকার যে অভিযোগ করা হচ্ছে সেই টাকা কী জীবনে ওরা দেখেছে বা কোন দিন গুনেছে? যারা সবচেয়ে বেশি ফায়দা নিয়েছে তারাই এখন তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হচ্ছে সেগুলো মিথ্যা বলে জানান তিনি। একইসাথে, যে মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে। তাতে তিনি নিজেই আক্রান্ত বলে দাবি করেন। একইসাথে, থানায় ভাঙচুর করা হয়েছে। ওই সময় তিনি ঘটনাস্থল এলাকায় থাকার কোনো সুযোগ ছিল না বলে, দাবি করেন।
ভুক্তভোগীরা বলেন, সাবেক ছত্রলীগ নেতা এই ওসির বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল মামলা বাণিজ্য। চোরকারবারিদের নিরীহ লোকজনকে আসামি করে তিনি কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন। গোয়াইনঘাটের চারটি পয়েন্ট হচ্ছে চোরাচালানিদের স্বর্গরাজ্য। এগুলো হচ্ছে বিছনাকান্দি, মাতুরতল, হাজীপুর ও পূর্ব জাফলংয়ের সোনাটিলা এলাকায়।
ওসি যোগদান করার পর থেকেই প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ হাজার বস্তা চিনির চালান ওইসব রুট দিয়ে বাংলাদেশে প্রকাশ্যেই প্রবেশ করে। আর সব নিয়ন্ত্রিত করতো ওসির দালালরা।
এ ছাড়া- জাফলং, বিছনাকান্দি ও বালু কোয়ারি তার নিয়ন্ত্রিত লোকজনকে দিয়েই পরিচালিত হতো। ইজারাদা ছাড়া গোয়াইনঘাটের বালু মহালগুলো তার আমলেই বেশির ভাগ লুটপাট হয়েছে। ওসির সিন্ডিকেটের সদস্যদের অনেকেই ৫ই আগস্টের পট-পরিবর্তনের পর গা ঢাকা দিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্র মতে, গোয়াইনঘাট থানার চোরাই পণ্য থেকে প্রতিদিন ওসির আয় ছিল ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা। থানায় বসে এসআই ইমরুল, এসআই জাহাঙ্গীর হোসেন ও এনামুল হককে দিয়ে টাকা সংগ্রহ করতেন।
তাদের মতে; ওসি রফিকুল ইসলাম নিজেকে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে আধিপত্য বিস্তার করেন। তার সঙ্গে গোয়াইনঘাটের সিন্ডিকেটও সক্রিয় ছিল। তিনি নিজেকে কেন্দ্রীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচয় দিতেন। দাপট দেখিয়ে তিনি ৮ মাস শাসন করেন গোয়াইনঘাট। পশ্চিম জাফলং এলাকার লোকজন জানান- কয়েক মাস আগে হাজীপুর এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ওসি’র ইন্ধনে চোরাকারবারিদের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ সময় প্রকাশ্যে দা, রামদা নিয়ে ওই এলাকায় কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। এ নিয়ে ৪-৫টি মামলা হয়েছে। প্রতিটি মামলা ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে ওসি রেকর্ড করেন। পরে কিছু মামলা তার নির্দেশেই সমঝোতায় শেষ হয়। সমঝোতায়ও তিনি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। ৮ মাস গোয়াইনঘাট শাসন শেষে যখন ৫ই আগস্টে প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয় তখন ওসি রফিকুল ইসলাম নিজেই ঊর্ধ্বতনদের কাছে আবেদন করে থানা ছেড়েছেন।
এর আগে স্থানীয় ছাত্র-জনতা কয়েক দফা থানা ভাঙচুর করে। এতে থানা ছেড়ে চলে গিয়েছিলো পুলিশ। পরে অবশ্য সেনাবাহিনী মোতায়েনের পর থানার কার্যক্রম শুরু হয়।
আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা জানিয়েছেন; ওসি রফিকুলের মধ্যে গোয়াইনঘাটে অতীতে কোনো ওসি এত বাণিজ্য করেননি। তার সময় প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০টি চোরাচালানের ট্রাক গোয়াইনঘাট থেকে বের হয়ে যেতো। এরমধ্যে অর্ধেক চোরাই পণ্য থানার সামনের রাস্তা দিয়ে সিলেটে আসতো। পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করতো।
এসব কারণে ওসির ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন স্থানীয় ছাত্র-জনতা। এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ৫ই আগস্ট থানায় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। তারা জানান- পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে ওসি নিজ থেকেই থানার দায়িত্ব থেকে সরে এসেছেন। একইসঙ্গে তার নিয়ন্ত্রণে থাকা চোরাকারবারিরাও এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
গত কয়েকদিন ধরে গোয়াইনঘাটে ওসি রফিকুলের তার অপকর্ম নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু তিনি। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে একাধিক হত্যা মামলা রয়েছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd