সিলেট ২৩শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৩০শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৭:০২ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৩
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার বীরদল কচুপাড়া গ্রামের এক প্রবাসীর সহায় সম্পত্তি গ্রাস করে নিচ্ছে তারাই আপনজন। তাদের এমন অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে তিনি ও তার আমমোক্তার প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ, সিলেট আদালতে একাধিক মামলা-মোকদ্দমা করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেনা, বরং সম্পত্তি জবর দখল ও গ্রাসকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও মামলা করার কারণে এখন সেই প্রবাসীকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, দেশে ফিরলে তাকে প্রাণে হত্যা করার। ঘটনাটি কানাইঘাট উপজেলার বীরদল কচুপাড়া গ্রামের মৃত ফয়জুল হক মাষ্টারের পরিবারের।
কানাইঘাট থানা ও সিলেট আদালতে দায়ের করা একাধিক মামলা ও সিলেট পুলিশ সুপার বরাবরে দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ ৩৩ বছর থেকে কানাডা প্রবাসে থাকেন ফয়জুল হক মাষ্টারের বড় ছেলে কাওছার আহমদ মুন্সী। সেখানে কামাই-রোজাগার করে পরিবারের অপর ২ ভাই ও তিন বোনের সংসারে যাবতীয় ভরণ-পোষন চালিয়ে আসছেলেন তিনি। পরিবারের সুখের কথা চিন্তা করে দীর্ঘ এই ৩৩ বছরেও দেশে ফেরেননি কাওছার আহমদ মুন্সি। সেখানের কষ্টার্জিত সকল টাকা-পয়সা দিয়ে দেশে কয়েক বিঘা জমি খরিদ করেন তিনি, এবং ছোট দুই ভাইদের প্রবাসে নিয়ে যান। বর্তমানে তার এক ভাই ফ্রান্সে বসবাস করলেও অপর ভাই কয়েক বছর আগে দুবাই থেকে দেশে ফিরে কাওছার মুন্সির সকল খরিদা সম্পত্তিসহ পৈত্রিক সম্পত্তি গ্রাস করে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেন। তিনি দেশে অবস্থানরত তিন বোন মিসবাউননেছা, খয়রুন নেছা, খতিবুন নেছা ও বোন জামাই হারুন আহমদের সাথে সলাপরামর্শ করে কাওছার মুন্সির খরিদা জমি ও গবাদিপশুসহ পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত সকল জমির ফসলাধি জোরপূর্বক গ্রাস করে নিতে থাকেন।
এদিকে নিজের খরিদা সম্পত্তিসহ পৈত্রিক সম্পত্তি দেখবাল করার জন্য কাওছার মুন্সী একই উপজেলার ছোটদেশ গ্রামের মৃত সিরাজুল হকের ছেলে আলিম উদ্দিন (৪৪) কে নিজের আমমোক্তার নিযুক্ত করেন। এতে আরো ব্যাপরোয়া হয়ে উঠেন কাওছার মুন্সীর ছোট ভাই হেলাল আহমদ ও বোন জামাই হারুন আহমদগং। তারা কাওছার মুন্সির আমমোক্তারকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানিসহ বিভিন্ন রকম মিথ্যা মামলা জড়িয়ে হয়রানী করতে থাকেন। এমনকি আলিম উদ্দিনকে শারিরীক ভাবে নির্যাতন করেন হেলাল-হারুন ও তাদের সহযোগীরা। এদিকে কাওছার মুন্সির সম্পত্তি রক্ষায় আলিম উদ্দিন সিলেট আদালতে একাধিক মামলা করেন। সিলেট আদালতে দায়ের করার সিআর মামলা নং ২৮৪/২০২৩ ইং। মামলাটি তদন্ত করেন, সিলেট ইন্ড্রাষ্ট্রিয়াল পুলিশের এসআই কমর উদ্দিন। তিনি দীর্ঘ তদন্ত শেষে আলিম উদ্দিনের অভিযোগের সতত্যা পেয়ে সিলেট আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে হেলাল আহমদ, হারুন আহমদ, মুজম্মিল আলীর বিরুদ্ধে পেনাল কোর্ড ৩২৩/৩৮০/৫০৬(২) ধারায় অপরাধ সত্য বলিয়া প্রতিবেদন দাখিল করেন। যাহা এখনো আদালতে বিচারাধিন রয়েছে। এছাড়া আলিম উদ্দিন সিলেট পুলিশ সুপার বরাবরে একাধিক বার লিখিত অভিযোগ করেন, যাহার একটির স্বারক নং ৯৫৭৩(৭-১২-২০২৩ ইং। এমনকি সুদুর কানাডা থেকে কাওছার মুন্সি প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি। বরং কয়ছর মুন্সী দীর্ঘদিন ৩৩ বছর যাদের টাকা পয়সা দিয়ে লালন পালন করেছেন তারা এখন তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে উপহাস বিদ্রোপ করছেন।
এদিকে সিলেট আদালতে দায়ের করা একটি মামলা তদন্ত করতে গিয়ে সিলেট ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের এসআই কমর উদ্দিন উল্লেখ করেন, তার দীর্ঘ তদন্তে প্রমানিত হয় যে, কাওছার মুন্সির ভাই হেলাল, বোন জামাই হারুনসহ তার অপর তিন বোন মিলে কাওছার মুন্সির ফসলি জমির ১৯০ মন ধান ও তার খরিদা ৯টি গরু তারা চুরি করে নিয়ে যায়। পরে পুলিশি তদন্তে ৭ টি গরু উদ্ধার করেন তিনি। এছাড়া দুটি গরু হেলালের কাছ থেকে উদ্ধার করেন। কিন্তু সেই গরুগুলোও এখন আর নেই। হেলাল ও হারুন চক্রমিলে চুরি করে গরুগুলো বিক্রি করে দিয়েছে। অবশিষ্ট দুটি গরুও তারা সম্প্রতি বিক্রি করে দেয়। এসব ঘটনায় আদালতে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তকারী কর্মকর্তা এ প্রতিবেদনও দাখিল করেন। কিন্তু তবুও কাওছার মুন্সির সম্পত্তি রক্ষা করতে পারছেন না তার নিযুক্ত আমমোক্তার আলিম উদ্দিন আর প্রাণে হত্যার ভয়ে দেশে আসতে পারছেন না কাওছার মুন্সি।
এ বিষয়ে কয়ছর মুন্সির আমমোক্তার আলিম উদ্দিন বলেন, প্রবাসী কাওছার আহমদ মুন্সি তাকে আমমোক্তার নিযুক্ত করার পর থেকে তিনি তার সহায় সম্পত্তি দেখাবাল করার অপরাধে, তিনি বেশ কয়েকটি মিথ্যা মামলার আসামী হয়েছেন। হয়েছেন হামলার স্বীকার। জোরপূর্বক কাওছার মুন্সীর ভাই হেলাল ও বোন জামাই হারুন ও বানেরা কৃষিখেতের জমির সকল ফসলাধী গবাদিপশু বিক্রি করে দিয়েছেন। তারা একে-একে কাওছার মুন্সির ৯টি গরু চুরি করে বিক্রি করে দিয়েছেন। কাওছার মুন্সী তার এক বোনকে প্রতি মাসে ২৮ হাজার টাকা করে বাসা ভাড়া দিয়ে শহরে রাখতেন। তিনি তার ছেলে মেয়ে লেখাপড়ার খরচ বহণ করা সহ তার ২৮ লক্ষ টাকা দিয়ে ভাগ্নাকে লন্ডনে পাঠান। কিন্তু সেই বোনও এখন তার সাথে বেইমানি করেছেন। তিনি প্রতিমাসে ভাই হেলালকে ১০ হাজার টাকা এবং বাকি বোনদের ৫ হাজার করে প্রতিমাসে পাঠাতেন। বিগত ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত তিনি এসব টাকা পাঠিয়েছেন। সব মিলিয়ে কাওছার মুন্সি ভাই বোনকে প্রায় ৫ কোটি টাকা দিয়েছেন অথচ আজ তারা তাকে দেশে আসলে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। আমমোক্তার হওয়ার অপরাধে তারা আমার নামে কয়েকটি মিথ্যা মামলা দিয়েছে যা তদন্তে বারবার মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে। আমি বাদি হয়ে যে কয়েকটি মামলা দিয়েছি তা তদন্তে প্রমানিত হয়েছে এবং আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। গরুচুরি ও ধান চুরির বিষয়টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ তদন্তে প্রমানিত হয়েছে উক্ত মামলাটিও আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এমনকি কাওছার মুন্সীকে ভারসাম্যহীন সাজিয়ে বিভিন্ন মানুষের কাছে প্রচার করে বেড়াচ্ছেন তার ভাই বোনেরা। আমার জানামতে কাওছার মুন্সীর সকল ভাই তাদের জমির প্রাপ্ত অংশ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। বাকি অবশিষ্ট জমিজমা কাওছার মুন্সির। তিনি প্রবাসে থাকায় তার সকল জমি রয়ে গেছে। কিন্তু প্রবাসের থাকার সুযোগটা কাজে লাগিয়ে এখন তার ভাই-বোনেরা কাওছার মুন্সির খরিদা সকল জমি-জমা সহ বাড়িঘর গ্রাস করতে জোটবদ্ধ হয়েছেন। এ বিষয়ে আমি স্থানীয় প্রশাসন, সিলেট পুলিশ সুপার, ডিআইজি মহোদয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
Sharing is caring!


………………………..

Design and developed by best-bd