ইউপি সদস্য বুলবুলের আর্শীবাদে ছাতক-দোয়ারা’র চোরাচালান!

প্রকাশিত: ৫:১০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২১, ২০২৩

ইউপি সদস্য বুলবুলের আর্শীবাদে ছাতক-দোয়ারা’র চোরাচালান!

Manual6 Ad Code

ক্রাইম প্রতিবেদক: সীমান্তের ওপারেই ভারতের মেঘালয় রাজ্য আর এপারে ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা। এ দুই উপজেলার সীমান্ত এলাকা চোরাকারবারিদের স্বর্গরাজ্যে রূপ নিয়েছে। এ দুই উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত পথে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার পণ্য অবৈধ পথে আমদানি-রপ্তানি হচ্ছে। ছাতকের এক ইউপি সদস্যের আর্শীবাদেই এ দুই উপজেলায় শক্তিশালী চোরাচালান চক্র গড়ে ওঠেছে।

Manual4 Ad Code

 

আরও পড়ুন:- ছাতক-দোয়ারা সীমান্তে বুলবুল মেম্বারের নেতৃত্বে চোরাচালানে সম্পৃক্ত যারা!

 

জানা গেছে, সুরমা নদীতে সেতু নির্মিত হওয়াতে দোয়ারাবাজার উপজেলার সঙ্গে ছাতকের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বর্তমানে সীমান্ত চোরাচালান কারবার জমজমাট। ছাতকের ছোট-বড় শতাধিক ব্যবসায়ী চোরাচালান চক্রের সঙ্গে জড়িত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে চোরাকারবারিদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন বুলবুল মিয়া নামের এক ইউপি সদস্য। এক কথায় ইউপি সদস্য বুলবুল মিয়ার আর্শীবাদেই ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী, থানা পুলিশসহ সবাইকে ম্যানেজ করে নির্বিঘ্নে চলছে এ দুই উপজেলার চোরাচালান কারবার।

 

ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত পথ দিয়ে ভারত থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে মদসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক, কসমেটিকস, শাড়ি, চিনি, গরু-মহিষ, আগ্নেয়াস্ত্র প্রভৃতি। বিপরীতে দেশ থেকে পাচার করা হচ্ছে শিং-মাগুরসহ নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ। চোরাই পথে মাছ ভারতে পাচার হওয়ায় স্থানীয় বাজারগুলোতে মাছের সংকট খুব বেশি। পাশাপাশি সরকারও হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। মাঝেমধ্যে সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) হাতে মাদকসহ ভারতীয় বিভিন্ন পণ্য জব্দ হলেও অদৃশ্য কারণে দেশ থেকে পাচারকৃত মাছের চালান তেমনটা আটক হতে দেখা যায়নি।

Manual8 Ad Code

 

স্থানীয় সূত্রমতে, দোয়ারাবাজার উপজেলার বোগলা ইউপির বাগানবাড়ী, গাছগড়া, (মোকামবাড়ী), লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ভাঙ্গাপাড়া, মাঠগাঁও, নরসিংপুর ইউপির শ্রীপুর, সামারগাঁও এবং বাংলাবাজার ইউপির কলাউড়া, বাঁশতলা (কলোনি), প্যাকপাড়া ও ঝুমগাঁও সীমান্ত এলাকায় চোরাকারবারি চক্রটি বেশি সক্রিয়। এসব এলাকায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অন্তত এক হাজারের বাসিন্দা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। বোগলাবাজার ইউনিয়নে প্রতি বৃহস্পতিবার জমে বর্ডারহাট। ওই দিন চোরাচালান পণ্য আদান-প্রদান বহুগুণ বাড়ে বলে জানান স্থানীয়রা।

 

Manual7 Ad Code

দুই উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাংলাবাজারসহ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় মাছ রাখার গোপন হাউস রয়েছে। এসব হাউসের পানিতে জিইয়ে রাখা হয়েছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। সন্ধ্যার পর ড্রামের ভেতরে মাছসহ পানি ভর্তি করে নিয়ে ট্রাকে ভারতের উদ্দেশে নেওয়া হয়। সুবিধাজনক সময়ে সীমান্তে অবস্থানরত শ্রমিকরা সেখান থেকে মাছ ভর্তি ড্রাম পৌঁছে দেয় ভারতীয় ট্রাকে। এই এলাকাসহ এ দুই উপজেলার চোরাচালান চক্রের নিয়ন্ত্রকের গুরুদায়িত্বে রয়েছেন ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য বুলবুল মিয়া। এছাড়াও চোরাকারবারিদের গডফাদার হিসেবে দুই উপজেলায় তাঁর ব্যাপক পরিচিতিও রয়েছে।

 

বাংলাবাজার এলাকার আনোয়ার, জিসান, রুস্তম ও ইব্রাহিম ১২৩৬ নম্বর পিলারসহ বোগলা ইউনিয়নের ইদুকোনা সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে ভারতে পাচার করছে এসব মাছ। তবে আনোয়ার, জিসান, রুস্তম ও ইব্রাহিমের গডফাদারের গুরুদায়িত্বে রয়েছেন ইউপি সদস্য বুলবুল মিয়া। মূলত ইউপি সদস্য বুলবুল মিয়ার আর্শীবাদেই আনোয়ার, জিসান, রুস্তম ও ইব্রাহিম অবাধে ভারতে পাচার করছে এসব মাছ।

 

ভারতে কৈ, শিং ও মাগুর মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যে কারণে এসব মাছ পাচার করে দ্বিগুণ টাকা কামাচ্ছেন চোরাকারবারি ইউপি সদস্য বুলবুল চক্র।

 

Manual5 Ad Code

এসব মাছ ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে বাংলাবাজার এলাকার আনোয়ার, জিসান, রুস্তম ও ইব্রাহিম মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের জানান- তারা মাছ স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন।

 

জানা গেছে স্থানীয় বাজারে এসব মাছের কোনো নাম-গন্ধ নেই। পাশাপাশি ছোট্ট এলাকায় প্রতিদিন ১৫-২০ হাজার কেজি শিং মাছ বিক্রির সম্ভাবনাও নেই। প্রতিদিন মাছ বহনকারী ১৫ জন ট্রাকচালক জানিয়েছেন তারা বাংলাবাজারে প্রতিরাতে মাছ পৌঁছে দেন। এছাড়া আর কিছু তাদের জানা নেই।

 

অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি সদস্য বুলবুল মিয়া সাংবাদিকদের জানান- তিনি আগে চোরাচালান ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। তখন প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছেন। বর্তমানে তিনি চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত নন।

 

এব্যাপারে দোয়ারাবাজার থানার ওসি বদরুল হাসান সাংবাদিকদের জানান- উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন ট্রাকে বিভিন্ন এলাকায় দেশীয় প্রজাতির মাছ সরবরাহ করা হয়। তবে ভারতে পাচারের বিষয়টি তাঁর জানা নেই। খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

এব্যাপারে সুনামগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (ছাতক সার্কেল) রণজয় চন্দ্র মল্লিক সাংবাদিকদের জানান- চোরাচালান প্রতিরোধে থানা পুলিশ সব সময় তৎপর রয়েছে। দেশ থেকে মাছ পাচারের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

এব্যাপারেবউপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুষার কান্তি বর্মন সাংবাদিকদের জানান- দোয়ারাবাজার সীমান্ত দিয়ে ভারতে মাছ পাচারের বিষয়টি আমার জানা নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি অবগত করব।

ধারাবাহিক প্রতিবেদন (১ম পর্ব)।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

December 2023
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  

সর্বশেষ খবর

………………………..