টিলা কাটার মামলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢিলেমি: অভিযোগপত্র নেই ২৮ মাসেও!

প্রকাশিত: ১:১১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৭, ২০২২

টিলা কাটার মামলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢিলেমি: অভিযোগপত্র নেই ২৮ মাসেও!

Manual2 Ad Code

হাকালুকির জলজ বৃক্ষনিধন মামলায় আদালতে ক্ষমা চেয়ে সময় প্রার্থনা তদন্ত কর্মকর্তার

Manual4 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় টিলা কাটার এক মামলায় প্রায় ২৮ মাসে এবং প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন হাকালুকি হাওরের মালাম বিল থেকে গাছ (জলজ-বৃক্ষ) কাটার মামলায় প্রায় ১৬ মাসেও আদালতে অভিযোগপত্র দেয়নি পরিবেশ অধিদপ্তর। ফলে এসব মামলার বিচার কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। এতে আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদের আইনের আওতায় নেওয়া যাচ্ছে না।

পরিবেশ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্তে অবহেলার কারণে ইতিমধ্যে বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তাকে স্বশরীরে হাজির হয়ে লিখিতভাবে কারণ ও ব্যাখ্যা প্রদান করতে নোটিশ দেওয়া হয়।

এরমধ্যে হাকালুকি হাওরের মালাম বিলের গাছ (জলজ-বৃক্ষ) কাটার মামলায় অভিযোগপত্র দাখিলে বিলম্বের কারণে আদালতে হাজির হয়ে ক্ষমা চেয়ে সময় প্রার্থনা করেছেন সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা। অপরটিতে জবাবের জন্য ১৭ নভেম্বর তারিখ ধার্য আছে।

মামলার এজাহার ও বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নের গৌড়নগর এলাকায় প্রাকৃতিক টিলা কাটার ঘটনায় ২০২০ সালের ২৩ জুলাই বড়লেখা থানায় দুইজনের নামে মামলা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। আসামিরা হচ্ছেন- গৌড়নগর গ্রামের নজমুল ইসলাম ও কামরুল ইসলাম। কিন্তু মামলা দায়েরের প্রায় ২৮ মাস অতিবাহিত হলেও আদালতে অভিযোগপত্র দেননি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অপরদিকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন হাকালুকি হাওরের মালাম বিলের দক্ষিণ-পূর্ব পাশের ১২ বিঘা খাসজমি থেকে আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ হাজার গাছ (জলজ-বৃক্ষ) কাটার ঘটনায় ২০২১ সালের ২২ জুন বড়লেখা থানায় সাতজনকে আসামি করে একটি মামলা হয়। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি আছেন আরও ১৫ থেকে ২০ জন। মামলার এজাহারনামীয় আসামিরা হচ্ছেন- বড়লেখা উপজেলার বর্ণি ইউনিয়নের মনাদি গ্রামের জয়নাল উদ্দিন, কাজীরবন্দের মক্তদির আলী, মশাঈদ আলী, রিয়াজ আলী, জয়নাল উদ্দিন, কালা মিয়া ও সুরুজ আলী। এই মামলা দায়েরের প্রায় ১৬ মাস অতিবাহিত হলেও রহস্যজনক কারণে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেননি তদন্ত কর্মকর্তা। ফলে এসব মামলার বিচার নিষ্পত্তি ও পরিবেশ আইনের লঙ্ঘনকারীদের আইনের আওতায় আনতে বিলম্ব হচ্ছে। এমতাবস্থায় বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জিয়াউল হক গত ২৪ আগস্ট প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন হাকালুকি হাওরের মালাম বিলের গাছ কাটার মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে আদালতে স্বশরীরে হাজির হয়ে লিখিতভাবে বিলম্বের কারণ ও ব্যাখ্যা প্রদানের নোটিশ দেন। এরপরিপ্রেক্ষিতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. নুরুল আমিন প্রধান গত ২ অক্টোবর বড়লেখা বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হয়ে অভিযোগপত্র দাখিলে বিলম্বের কারণে ক্ষমা চেয়ে ৩ মাস সময় প্রার্থনা করেন। শুনানি শেষে আদালত ২০২৩ সালের ২ জানুয়ারি পর্যন্ত অভিযোগপত্র দাখিলের সময় দেন। অন্যদিকে টিলা কাটার ঘটনায় ২৮ মাসেও অভিযোগপত্র না দেওয়ায় গত ৪ অক্টোবর বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জিয়াউল হক তদন্ত কর্মকর্তাকে স্বশরীরে হাজির হয়ে লিখিতভাবে বিলম্বের কারণ ও ব্যাখ্যা প্রদানের নোটিশ দেন। এই মামলায় জবাবের জন্য আগামী ১৭ নভেম্বর তারিখ ধার্য আছে।

Manual3 Ad Code

বিষয়টি নিশ্চিত করে বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পুলিশের জিআরও সহকারী উপ পরিদর্শক (এএসআই) পিযুষ দাস বলেন, ‘একটি মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা ৩ মাস সময় নিয়েছেন। অন্যটিতে ধার্য তারিখে হাজির হয়ে জবাব দেবেন।’

পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক ও মামলা দুটির তদন্ত কর্মকর্তা মো. নুরুল আমিন প্রধান বলেন, ‘আমি মামলাগুলো তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছি কয়েক মাস হচ্ছে। এরআগে পরিদর্শক মো. নজরুল ইসলাম মামলা তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন। আদালত থেকে নোটিশ পেয়ে হাকালুকির গাছ কাটার মামলায় জবাব দিয়ে ৩ মাস সময় নিয়েছি। এখনও কোনো কাজ করতে পারিনি। আদালত থেকে যে সময় নিয়েছি তার মধ্যে চার্জশিট দিতে হবে। এই সময়ের মধ্যে দিয়ে দেব।’

Manual7 Ad Code

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেটের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ সাহেদা আখতার বলেন, ‘হাকালুকি হাওরের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন মালাম বিলের গাছ কাটার মামলায় ১৬ মাসে এবং অন্য আরেকটি মামলায় ২৮ মাসে আদালতে প্রতিবেদন না দেওয়া দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার নজির। মূলত পরিবেশ সংক্রান্ত অপরাধের মামলায় দায়িত্বশীল দপ্তরগুলো প্রায়ই ঢিলেঢালা দায়সারা গোছের মামলা করে। এরপর মামলার এজাহারের ত্রুটি, তদন্তে ধীরগতি ও গাফিলতি তো আছেই। এতে এসব মামলায় কাঙ্খিত ফলাফল পাওয়া যায় না। আসামিরা পার পেয়ে যায়। ফলে অপরাধীরা আরও উৎসাহিত হয়ে পরিবেশ ও প্রকৃতি বিধ্বংসী কাজ করে।’

Manual3 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

November 2022
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..