সিলেটে পাথর উত্তোলন বন্ধে হাহাকার : দুর্ভিক্ষের শঙ্কা

প্রকাশিত: ১০:৩২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৩, ২০২২

সিলেটে পাথর উত্তোলন বন্ধে হাহাকার : দুর্ভিক্ষের শঙ্কা

Manual8 Ad Code

খলিলুর রহমান : সিলেটের পাথর রাজ্য ও পাথুরে এলাকাগুলো কিছুতেই থামছে না হাহাকার। বেজে ওঠছে দুর্ভিক্ষের ঘনঘণ্টা। মানেকতর জীবন যাপন করছে পাথর শ্রমিক পরিবারগুলো। পাশপাশি চরম বেকারত্ব দেখা দিয়েছে পরিবহণ শ্রমিকদের মধ্যে, পাথর পরিবহণ ও পাথর বক্যবসার সাথে জড়িতরা এখন চোখে সর্ষেফুল দেখছেন। ঋণের চাপে তারা এখন দিশেহারা। একশ্রেণির মানুষে স্বার্খে ধাংস হয়ে যাচ্ছে দেশের পাথর শিল্প। পাথর আমদানীর ভারে আক্রান্ত দেশের বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভ।
দীর্ঘ ৪ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ পাথর কোয়ারি জাফলং, বিছনাকান্দি, লোভাছড়া ও ভোলাগঞ্জসহ সিলেটের সবক’টি কোয়ারি। লিজ দেওয়া হচ্ছে না বা খাস কলেকশন করা হচ্ছে না এগুলো থেকে। পাথরে এলাকার আর্তপীড়িত মানুষের দাবি, একটি স্বার্থন্বেষী মহলের কারসাজিতে উচ্চ আদালতের আদেশ নিয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে পাথর কোয়াগিুলো। ফলে সরকার কর্তৃপক্ষ পাথর উত্তোলনৈ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। মূলত বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি’র (বেলা) মামলায় কোয়ারিগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে পাথর শ্রম,পাথর ক্রাশিং ব্যবসা ও পাথর পরিবহণ বন্ধ রয়েছে। ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে করতে পথে বসতে হচ্ছে স্টোন ক্রাশার মালিকসহ পাথর ও পরিবহণ ব্যবসায়ীদের। পাশপাশি দুর্বিসহ জীবনযাপন করতে পাথর ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট লাখ লাখ শ্রমিকের পরিবারের সদস্যদের। দেশের বাইর থেকে আমদানী করতে হচ্ছে পাথর। খালি করে দেওয়া হচ্ছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফান্ড।
সূত্রে প্রকাশ, পাথর ব্যবসা ও স্টোন ক্রাশার মিলে অনেক ব্যবসায়ী ঋণ নিয়েছিলেন বিভিন্ন ব্যাংক ও অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠান থেকে। ব্যবসা বন্ধ থাকলেও থেমে থাকেনি ঋণের সুদসহ কিস্তি পরিশোধ। ফলে ঋণের ভারে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন অনেক ব্যবসায়ী।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জর ভোলাগঞ্জ, গোয়াইনঘাটের বল্লাঘাট, বিছনাকান্দি, জৈন্তাপুরের শ্রীপুর, কানাইঘাটের লোভাছড়া এবং হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ মিলে ১০-১২টি পাথর কোয়ারি রয়েছে। দেশের নির্মিয়মান স্থাপনাসমুহের চাহিদা মেটাতে সেগুলো ১ কোটি টন-এর বেশি পাথর উত্তোলন করা সম্ভব।
সূত্রে প্রকাশ, উচ্চ আদালদের আদেশে ২০১৮ সাল থেকে সিলেট বিভাগের সবকটি কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় কোয়ারিনির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বেকার হয়ে পড়েছেন কোয়ারিনির্ভর প্রায় ১০ লাখ পাথর শ্রমিক। অন্ন-বস্ত্র ও চিকিৎসার অভাবে ধুকে ধুকে মরছে শ্রমিক পরিবারের সদস্যরা। বন্ধ হয়ে গেছে পাথর শ্রমিক পরিবারের মেধাবী অনেক ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া। দেখা ািদয়েছে সর্বত্র হাহাকার। হাহাকার এখন পাথর শ্রমিক ব্যবসায়ী থেকে পরিবহণ শ্রমিক পর্যন্ত গড়িয়ে গেছে। তাই পরিবহন শ্রমিকরা পাথর উত্তোলন দাবিতে কঠোর কর্মসূচি ঘোষনা করতে বাধ্য হয়েছেন। আর এ কর্মসূচি হচ্ছে পাথর কোয়ারিগুলো খোলে না দিলে ৩১ অক্টোবর থেকে প্রাথমিকভাবে ৪৮ ঘণ্টার পণ্য পরিবহণ ধর্মঘট ডাক দিয়েছেন। পণ্য পরিবহণ মালিক-শ্রমিক নেতাদের দাবি, অধিকাংশ ট্রাক মালিক ব্যাংক ঋণ নিয়ে অথবা কোম্পানীগুলোর কাছ থেকে কিস্তিতে মূল্য পরিশোধের শর্তে তাদের গাড়ী কিনেছেন। গত ৫ বছর ধরে কোয়ারী বন্ধ থাকার কারণে অনেক মালিক ঋণের কিস্তি দিতে না পেরে ইতোমধ্যে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন। অনেকেই ব্যাংক ঋণে জর্জরিত হয়ে চরম আর্থিক সংকটে পতিত হয়েছেন। শুধু তাই নয়, সিলেট জেলায় প্রায় ৪০ হাজার ট্রাক শ্রমিক রয়েছেন কোয়ারীগুলো বন্ধ থাকায় তাদের নিয়মিত আয় বন্ধ রয়েছে। ফলে, পরিবার পরিজন নিয়ে ট্রাক শ্রমিকরাও দুঃসহ জীবন যাপন করছেন। পরিবহণ শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলেন, আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে সিলেটের সকল পাথর কোয়ারী পাথর আহরণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। অন্যথায় আগামী ৩১ অক্টোবর থেকে সিলেট জেলায় ৪৮ ঘন্টার লাগাতার পণ্য পরিবহণ বন্ধ করে ধর্মঘট পালন করা হবে এবং এরপর বৃহত্তর সিলেটের ৪ জেলায় অনির্দিষ্ট কালের জন্য এই কর্মসূচির ডাক দেয়া হবে।
এ বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিলেট বিভাগীয় ট্রাক পিকআপ ও কার্ভাডভ্যান মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের আহবায়ক গোলাম হাদী ছয়ফুল তিনি বলেন, সিলেট জেলার ভোলাগঞ্জ, বিছনাকান্দি, জাফলং এবং লোভাছড়া পাথর কোয়ারীগুলো থেকে স্বাধীনতা উত্তর কাল থেকে সারা দেশের পাথর সরবরাহ করা হয়ে আসছিল। সিলেটের এই কোয়ারীগুলো থেকেই সারা দেশের সিংহভাগ পাথরের চাহিদার যোগান দেয়া হচ্ছিল।
সূত্র মতে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি’র (বেলা) মামলার রূদ্ধশাস বেড়াজালে ফেলে পাথর কোয়ারিগুলো বন্ধ করিয়ে দেশের বাইর থেকে পাথর আমদানীর পথ সুগম করে দেওয়া হয়। এতে করে শুধু লাভবান হচ্ছে পাথর আমদানীকারক একটি গোষ্টি। ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে চরমভাবে বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ পাথর শ্রমিক, পরিবহণ শ্রমিক ও সাধারণ পাথর ব্যবসায়ীসহ হাজারো ক্রাশার মিল মালিক ও শ্রমিকরা।
সূত্র মতে পাথর উত্তোলন বন্ধ হওয়ার পর প্রথমত দেশের বাইর থেকে বিশেষ করে প্রতিবেশী ভারত থেকে বোলডার বা আস্ত পাথর আমদানি করে ক্রাশার মিলগুলোতে ভঙ্গার সুযোগ করে দেওয় হয়েছিল। কিন্তু তা আবার বেশিদিন ঠিকে থাকেনি। নতুন করে বিদেশ থেকে ভঙ্গাপথর আমদানী শুরু হয়ে গেলে মাথায় হাত দিতে হচ্ছে ক্রাশারমিল মালিক ও শ্রমিকদের।
পাথর ব্যবসায়ীদের দাবি, দেশের কোয়ারিগুলো বন্ধ থাকায় পাথর আমদানি করতে হচ্ছে বিদেশ থেকে। আর এ আমদানি ব্যবসায় যুক্ত হয়েছে দেশের বড় বড় শিল্প মালিক গোষ্ঠী। যেখানে আমদানীর পরিমান ১০ কোটি টাকা ছিল সেখানে এক দৌঁড়ে হাজার কোটি টাকা ছড়িয়ে গেছে। যত দিন যাচ্ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে বিদেশ থেকে ভাঙ্গাপাথর আমদানির পরিমান। সকল পণ্যের আমদানি থেকে পাথর আমদানীর প্রবৃদ্ধি হয়ে ওঠেছে শীর্ষে। বিদেশ থেকে পাথর আমদানির ক্ষেত্রে কোটি কোটি ডলার খরচ করতে হচ্ছে। ফলে চাপ পড়ছে বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভের উপর। বাড়ছে টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্যমান। ব্যয় বাড়তে শুরু করেছে সরকারি ও বেসরকারি প্রকল্প সমুহের। অথচ দেশের কোয়ারিগুলো থেকে পাথর উত্তোলন করতে পারলে আমদানির পরিমাণ হ্রাস পেতো। চাপ কমে আসতে বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভের উপর থেকে। ব্যয় কমে আসতো সরকারি বেসরকারি নির্মান প্রকল্পসমূহের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের পাথর কোয়ারি ভোলাগঞ্জ চালু থাকাবস্থায় এ কোয়ারি থেকে প্রতিদিন ৩ লাখ ঘনফুট পাথর সংগ্রহ করা সম্ভব হতো। সে সময়ে সরকারি হিসাবে ৪৮ টাকা দরে দৈনিক ১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার আস্ত (বোল্ডার) পাথর সংগ্রহ হতো। তবে বেসরকারিভাবে এই পাথর বিক্রি হতো ৮০-৮৫ টাকায়। কিন্তু পরিবেশ বিপর্যয়ের দোহাই দিয়ে দেশের পাথর খনিগুলো বন্ধ করে প্রতিবেশি দেশ ভারতের পাহাড় কাটা পথর আমদানি করা হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের পাথরের চাহিদার বেশিরভাগ অংশ যোগান দিচ্ছে ভারত। ভারতের কাছ থেকে ৫০ শতাংশ পাথর আমদানি করছে বাংলাদেশ। বাদ বাকি মধ্যপ্রাচ্যের আরব আমিরাত, দক্ষিণ এশিয়ার ভিয়েতনাম ও ভুটান থেকে আমদানী করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের পূর্ব পর্যন্ত ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা ৬ টি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত ও ভুটান থেকে পাথর আমদানি করতেন। এ সময় বছরে আমদানী হতো মাত্র ৬০ কোটি টাকার পাথর। দেশের কোয়ারিগুলো থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যখন আমদানী বাজার প্রশস্থ হতে শুরু করে, তখন পাথর আমদানীতে জড়িয়ে পড়ে বড় বড় শিল্পগ্রুপ। গত তিন বছর এসব শিল্পগোষ্ঠীর মধ্যে মেঘনা গ্রুপ, আবুল খায়ের গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, আকিজ গ্রুপ ও পারটেক্স গ্রুপ অন্যতম। সাগর ও নদীপথে নিজেদের জাহাজ ব্যবহার করে বিদেশ থেকে সরাসরি পাথর নিয়ে আসছে এসব শিল্পগ্রুপ। শিল্পগ্রুপগুলো পাথর আমদানীতে যুক্ত হওয়ায় গত ২০২০-২১ অর্থবছর দেশে পাথর আমদানি হয়েছে ২ কোটি ৪৮ লাখ টন। যার বাজার মূল্য ৯ হাজার কোটি টাকা। আমদানির প্রবৃদ্ধিতে পাথর ওঠেছে শীর্ষে।
আমদানি নির্ভরতা ও বৈদেশিক মূদ্রার ব্যয় এবং প্রকল্প নির্মান খরচ কমাতে হলে দেশীয় কোয়ারিগুলো থেকেই পাথর সংগ্রহে নজর দেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন সচেতন মহল। তাদের মতে, এটি করা হলে, পাথর ক্রয় ও স্থাপনা সির্মানে খরচ কমবে এবং বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হবে।
আমদানী নির্ভর পাথর ব্যবসা কিছুটা সচল থাকলেও সম্প্রতি নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সিলেটের ক্রাশারমিল মালিক ও শ্রমিকরা। তাদের অভিযোগ, কতিপয় আমদানীকারক সিলেটের জকিগঞ্জ শুল্ক স্টেশন দিয়ে কুশিয়ারা নদী পথে জাহাজ দিয়ে ভাঙাপাথর আমদানি করছেন। এতে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি মিল মালিকদের ক্রাশার ব্যবসাও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে এবছরের ৩১ মে পাথর উত্তোলন বন্ধের ফলে সৃষ্ট সমস্যা নিরসনে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পাথর কোয়ারি, পাথর উত্তোলন, খাস আদায় ও জব্দ করা পাথর উন্মুক্ত নিলামের বিষয়ে দায়ের করা মামলাসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোকে নির্দেশ দেওয়া হয়। সভায় গেজেটভুক্ত পাথর কোয়ারি সমূহ আবার ইজারা দেওয়ার যোগ্য কি না তা যাচাই করার লক্ষ্যে জিওগ্রাফিক্যাল সার্ভে এবং সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সমূহের ১০ জন প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
তারা মজুদ পাথরের পরিমাণ, উত্তোলনযোগ্য পাথরের পরিমাণ, উত্তোলনের সময়কাল, পাথর কোয়ারি এলাকার পরিবেশ, পর্যটন শিল্পের বিকাশ বিবেচনা করে পাথর কোয়ারি সমূহের হালনাগাদ করবেন। এ ছাড়াও খনি ও খনিজ সম্পদ আইন ১৯৯২ এবং খনি ও খনিজ সম্পদ বিধিমালা ২০১২ পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক সংশোধনের প্রয়োজন হলে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়ন করতেও বলা হয়েছে এই কমিটিকে। কিন্তু দীর্ঘ ৬ মাস অভিবাহিত হয়ে গেলেও ওই কমিটির কোনো প্রস্তাবনা বা সংশোধনী প্রস্তাব এখনও প্রকাশ করা হয়নি। ফলে শিগগিরই চোখে আশার আলো দেখছেন না পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। সূত্র মতে পাথর উত্তোলনে মন্ত্রিপরিষদের সায় মিললেও অজ্ঞাত কারণে সিদ্ধান্ত আটকা পড়ে আছে খনিজ উন্নয়ন ব্যুরোতে।
এই অবস্থায় সিলেটের পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়া দাবিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন সিলেটের ট্রাক পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। পাথর কেন্দ্রিক ব্যবসা সরাসরি পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছেন সিলেটের পণ্য পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা। পাথর উত্তোলন না হওয়ার কারনে বিশেষ করে ট্রাক মালিক ও শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়ছেন বলে দাবি তাদের। সিলেট জেলা ট্রাক মালিক গ্রুপের এক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন- তাদের প্রায় ২০ হাজার ট্রাক ঋণের মাধ্যমে ক্রয় করা হয়েছিল। সিলেটে শিল্প কেন্দ্রিক ব্যবসা না থাকায় পাথর কেন্দ্রিক পরিবহন ব্যবসাই ছিল তাদের পরিবহণ ব্যবসার প্রধান মাধ্যম। কিন্তু বছরের পর বছর কোয়ারি বন্ধ থাকার কারনে ট্রাক মালিক ও শ্রমিকরা পথে নামার উপক্রম হয়েছেন। এ কারণে বাধ্য হয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন- এবার কর্মসূচি পালনে সবাই ঐক্যবদ্ধ। বিশেষ করে জাফলংয়ের ৩৬টি, ভোলাগঞ্জের ১৫টি, বিছনাকান্দির ৭টি ও লোভাছড়ার দুটি সংগঠনের নেতারা ট্রাক মালিক, শ্রমিক ঐক্য পরিষদের দাবির সঙ্গে একমত রয়েছেন।
বৃহত্তর সিলেট পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুল জলিল বলেন, বিদেশ থেকে পাথর আমদানির কারণে পাথরের দাম বেড়েছে। এ ছাড়াও রিজার্ভের উপর চাপ বাড়ছে। দেশীয় খনি থেকে পাথর সংগ্রহ করলে পাথরের দাম প্রায় ৫০ টাকা পর্যন্ত কমে আসবে। এতে রিজার্ভের উপর চাপ কমার পাশাপাশি সহজলভ্য হবে পাথর। এ ছাড়া পাথর ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ব্যাংকের ঋণ, গাড়ি কিস্তি দিতে না পারায় দেউলিয়া হয়ে গেছেন।
তবে এ বিষয়ে উল্টো বক্তব্য দিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সিলেট বিভাগীয় কো-অর্ডিনেটর অ্যাডভোকেট সাহেদা আক্তার। তিনি বলেন- সিলেটের সৌন্দর্য রক্ষা করুন, না হয় পাথর উত্তোলন করুন। দু’টি থেকে একটিকে বেছে নিয়ে নিতে হবে। পাথর উত্তোলনের ফলে কোয়ারির আকৃতি নষ্ট হয়। শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় মানবিক বিপর্যয় ঘটে। তিনি বলেন- পাথর উত্তোলনের সঙ্গে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা যে কর্ম বিরতির ডাক দিয়েছে সেটি কতটুকু যৌক্তিক এটিও ভেবে দেখার বিষয় বলে তিনি মন্তব্য করেন ।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..