সুনামগঞ্জে ১১ জন তরুণ-তরুণী আটক : ওসিকে প্রত্যাহারের দাবি

প্রকাশিত: ৮:৫১ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৭, ২০২২

সুনামগঞ্জে ১১ জন তরুণ-তরুণী আটক : ওসিকে প্রত্যাহারের দাবি

Manual2 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন ১১ জন তরুণ-তরুণী। তাদের মধ্যে ছিলেন চার জোড়া প্রেমিক জুটি। ক্যাম্পাসে পরস্পরের ঘনিষ্ঠ হয়ে বসেছিলেন তারা।

Manual6 Ad Code

এ কারণে ‘অসামাজিক কার্যকলাপের’ অভিযোগ এনে ক্যাম্পাস থেকে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে ঘটে এ ঘটনা।

সুনামগঞ্জ থানা পুলিশের এমন কাণ্ড নিয়ে চলছে সমালোচনা। পুলিশের এমন আচরণকে বেআইনিও বলছেন আইনজীবীরা। তরুণ-তরুণীদের হয়রানির জন্য সুনামগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের দাবিও উঠেছে।

Manual1 Ad Code

ক্যাম্পাসের ভেতর থেকে শিক্ষার্থীদের আটক করে নিয়ে যাওয়ায় হতবাক সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষও। তার অনুমতি ছাড়াই ক্যাম্পাসে ঢুকে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ধরে নিয়ে যায় বলেও অভিযোগ তার।

যদিও পুলিশ বলছে, স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের আটক করা হয়। পরে মুচলেকা দিয়ে সবাইকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

তবে পুলিশের পক্ষ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হয়েছেন কেউ কেউ। তাদের কয়েকজন ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছেন ক্যাম্পাসে তরুণ-তরুণীদের ঘনিষ্ঠ ছবি। এমন ঘটনাকে নৈতিক অবক্ষয় দাবি করেছেন তারা।

সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে প্রতিদিনই আড্ডা দেন শিক্ষার্থীরা। সুযোগ পেলেই ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে বহিরাগতরাও।

মঙ্গলবার দুপুরেও কলেজের বেগম রোকেয়া ছাত্রীনিবাসের পাশে আড্ডা দিচ্ছিলেন তরুণ-তরুণীরা। তাদের মধ্যে বহিরাগত কয়েকজনও ছিল। এ সময় হঠাৎ করেই ক্যাম্পাসে গিয়ে আড্ডারত ১১ জনকে আটক করে পুলিশ ভ্যানে করে থানায় নিয়ে আসা হয়। তাদের মধ্যে চারজন ছিলেন ছাত্রী।

Manual7 Ad Code

পরে কলেজ অধ্যক্ষের জিম্মায় মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ। আটক একাধিক তরুণের অভিযোগ, ক্যাম্পাস থেকে আটকের সময়ই পুলিশ তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। করা হয় গালাগালিও। তবে এই তরুণদের কেউ নাম প্রকাশ করতে চাননি।

শহরের পুরাতন বাসস্টেশন এলাকার এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কোচিং শেষ হয়। আমরা কলেজ যাই, ফ্রেন্ডরা মিলে আড্ডা দিই। তখন পুলিশ আসে। একপর্যায়ে কাপলদের সঙ্গে আমাদের তিনজনকে ধরে নিয়ে যায়। থানায় নিয়ে আমাদের পরিবারের ফোন নম্বর চাওয়া হয়। নেয়া হয় মা-বাবার নাম-ঠিকানা। পরে আবার কলেজে নেয়া হয় অধ্যক্ষ ম্যাডামের কাছে।’

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ কলেজটির অন্য শিক্ষার্থীরা। নাইম আহমদ শিশির নামে এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বড় বড় নির্যাতনের ঘটনায় যেখানে বিচার হয় না, সেখানে প্রেমের অভিযোগে আটক করা হাস্যকর। প্রেম করলে পুলিশ আটক করবে কেন।’

ছাত্রলীগ নেতা সৃজন দেবনাথের প্রশ্ন- ‘শিক্ষার্থীরা কলেজে আড্ডা দেবে না তো রাস্তা ও পাড়ার মোড়ে আড্ডা দেবে নাকি?’

Manual6 Ad Code

সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান আহমদ সেলিম বলেন, ‘এই ঘটনা সভ্য সমাজের দাবিদার কেউ করতে পারে না। ক্যাম্পাসে দিনে ছেলেমেয়েরা আড্ডা দেবে, খুনসুটি করবে- এটাই সৌন্দর্য। প্রেম করার অভিযোগে তাদের থানায় নেয়া কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। পুলিশের উচিত অপরাধ দমনে মনোনিবেশ করা, প্রেম ঠেকানো তাদের কাজ না।’

শিক্ষার্থীদের আটকের জন্য সুনামগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অপসারণ দাবি করে সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি রশিদ আহমদ বলেন, ‘ক্যাম্পাসে বা শহরে প্রাপ্তবয়স্ক যে কেউ প্রেম করতে পারে। এটা কোনো অপরাধ হতে পারে না। এই অপরাধের অভিযোগে ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রছাত্রীদের ধরে নিয়ে আসা হবে- এটা মেনে নিতে পারি না।

‘এই দেশ আফগানিস্তান বা পাকিস্তান না যে নারীরা পুরুষের হাত ধরে, কাঁধে ভর দিয়ে হাঁটতে-বসতে পারবে না। এই ঘটনা পুলিশের বাড়াবাড়ি।’

তবে ক্যাম্পাসের ভেতরে ছেলেমেয়েদের ঘনিষ্ঠতাকে ‘সামাজিক অবক্ষয়’ বলে মনে করেন উন্নয়নকর্মী সালেহিন শুভ। একই সঙ্গে পুলিশের আচরণকেও ‘বাড়াবাড়ি’ বলে মনে করেন তিনি।

শুভ বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে যা করেছে, তা সামাজিক অবক্ষয়েরই পরিচয়। তবে এটা সামাজিকভাবেই শেষ করা যেত। পুলিশের ধরে নিয়ে আসাটা বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে। অধ্যক্ষ চাইলে তাদের আটক করে অভিভাবক ডেকে এনে নির্দেশ দিতে পারতেন, কঠিন শাস্তি দিতে পারতেন। কিন্তু পুলিশ নিয়ে এসে তাদের জিপে তুলে থানায় নিয়ে যাওয়াটা একদম ঠিক হয়নি।’

সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ নীলিমা চন্দ বলেন, ‘পুলিশ কার ডাকে এলো, কেন এলো কিছুই জানি না আমি। ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রছাত্রীদের ধরে নিয়ে যাওয়ার পর আমি ঘটনা জানতে পারি। তখন আমি পুলিশের কাছে শিক্ষার্থীদের অনুমতি ছাড়া ধরে নিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাই। এরপর পুলিশ কলেজের শিক্ষার্থীদের আবার আমার কাছে ফিরিয়ে দেয়। আর যারা বহিরাগত ছিল তাদের থানায় নিয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘আমার কলেজে এসে আমাকে না জানিয়ে পুলিশের এমন করাটা ঠিক হয়নি। তারা আমাকে জানাতে পারত।’

কলেজে বহিরাগতের সংখ্যা বাড়ছে উল্লেখ করে অধ্যক্ষ আরও বলেন, ‘কলেজের ছাত্রীনিবাস সংরক্ষিত এলাকা। কিন্তু ছেলেমেয়েরা গিয়ে সেখানেই বসে আড্ডা দেয়। যার জন্য আমরা ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় থাকি। তবে আমরা পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ দিইনি।’

শিক্ষার্থীদের ধরে নেয়ার ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমি কাল দুপুরে থানায় ছিলাম না। পরে শুনেছি ঘটনাটা। আটক সবাইকেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে।’

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কাছে প্রচুর অভিযোগ আসে। এ কারণে আমরা অভিযান চালিয়েছি।’

কলেজ প্রশাসনের অনুমতি না নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অভিযোগ পেলে অভিযানের জন্য আমাদের কারও অনুমতি নিতে হয় না। তবে আমরা তাদের আটক করিনি, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দিয়েছি।’

এ রকম ‘অসামাজিক কাজ’ পুলিশ আগামীতেও প্রতিহত করবে জানিয়ে এসপি বলেন, ‘কোনো খারাপ কাজ করতে দেয়া হবে না।’

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

March 2022
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

সর্বশেষ খবর

………………………..