সিলেট ২৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৮ই রজব, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ২:০৪ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২২
স্টাফ রিপোর্টার :: সিলেটের মোমিনখলা এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সামাদ পাভেল একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তারা ২ ভাই ও ১ বোন। পাভেল পরিবারের বড় সন্তান। তার বাবা একজন ব্যবসায়ী। সে পড়াশোনার পাশাপাশি এলাকার বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অংশ গ্রহন সহ নিয়মিত এবং এলাকার অন্যান্য ছেলে ও মেয়েদের উৎসাহ দিয়ে থাকে। যার ফলে সে এলাকার ক্ষমতাশালী মৌলবাদীদের নির্যাতনের শিকার। “সিরাজ শিকদার” পাভেলের এলাকার একজন গন্যমান্য ব্যক্তি এবং ধনী ব্যবসায়ী। যিনি এলাকায় সামাজিকভাবে যথেষ্ঠ আধিপত্য বিস্তার করে আছেন অনেকদিন ধরে।
পাভেলের বাড়ি সিলেটের একটি ছোট্ট মফস্বল শহর মোমিনখলা যেখানে ধর্মভীরু মানুষদের বসবাস। কিন্তু সে ব্যক্তিগত ভাবে মৌলবাদপুষ্ট ধর্মান্ধতার বিরোধীতা করে সবসময়। আর এজন্য এলাকার উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের সবসময় সাংস্কৃতিমনা হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য নিজ উদ্যোগে একটি ছোট্ট টিনের ঘরে এলাকার কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে “পাভেল সাংস্কৃতিক সংঘ” নামের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান শুরু করে। সে সংঘের সদস্যদের নিয়ে আমি প্রায়ই গান, নাটক এবং নাচের অনুষ্ঠানের আয়োজন করত। এলাকার মানুষ খুব উৎসাহ নিয়ে এসব ছোট্ট পরিসরে করা অনুষ্ঠান দেখতো এবং তাকে আরো বড় পরিসরে অনুষ্ঠান করার জন্য উৎসাহ দিতো। এভাবে এক সময় পাভেলের এ সকল বিষয় সিরাজ শিকদারের নজরে আসে। যেদিন স্থানীয় মসজিদে নামাযের পরে সবার কাছে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বড় পরিসরে নাটক এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার জন্য আর্থিক এবং মানসিক সাহায্য প্রার্থনা করে পাভেল। তখনই সিরাজ শিকদার পাভেলের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেয়া শুরু করেন দক্ষিণ ডিগ্রি কলেজ থেকে। ২০২১ সালের ১৪ই এপ্রিল প্রথম পাভেলকে কলেজের বৈশাখী অনুষ্ঠানে সিরাজ শিকদারের মদদপুষ্ট কয়েকজন যুবক হুমকি দেয় অবিলম্বে আমি যেন আমার সামাজিক সংগঠন “পাভেল সাংস্কৃতিক সংঘ’-এর কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য। বন্ধ না করলে তাকে এবং তার পরিবারকে সামাজিক ভাবে বিচারের আওতায় আনা হবে। পাভেল পরদিন স্থানীয় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু ২০২১ সালের ২০ শে এপ্রিল পুলিশ পাভেলের সংঘে তালা মেরে দেয়। পুলিশের দাবি পাভেলের মাধ্যমে এলাকার কিশোর-কিশোরীরা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং তার পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে অসামাজিক কার্যকলাপ পরিচালিত হয়। পরে পাভেল আদালতে হুমকি প্রদান ও প্রতিষ্ঠান কেন বন্ধের প্রেক্ষিতে একটি মামলা দায়ের করেন। এরই জের ধরে ২০২১ সালের ১০ ই মে সন্ধ্যায় কদমতলী এলাকার বাজারে পাভেলের বাবার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে সিরাজ শিকদার তার দলবল নিয়ে হামলা চালায় এবং তার বাবাকে বেশ মারধর করে। এমনকি পাভেলের দায়ের করা মামলা তুলে নেওয়ার তার বাবাকে হুমকি প্রদান করে। এলাকার মানুষ ভয়ে কোন প্রতিবাদ করেনি। পরদিন ১১ই মে ২০২১ইং তারিখে দক্ষিণ সুরমা থানায় পাভেল তার বাবাকে নিয়ে যায় এবং সিরাজ শিকদারের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করে। শুধুমাত্র ধর্মান্ধতা আর নষ্ট মৌলবাদের মদদে পুষ্ট এই ধর্ম ব্যবসায়ীরা এলাকায় তাদের অধিপত্য বজায় রাখার জন্য ২০২১ সালের ১৫ই মে পাভেলের সংঘের ঘরটি রাতের আঁধারে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।
এরপর ২০২১ সালের ২ জুন এলাকার স্কুলের খোলার মাঠে সিরাজ শিকদারের বিরুদ্ধে একটি পথ নাটক পরিচালনা করেন পাভেল। নাটকটি চলার সময় সিরাজ শিকদারের লোকজন অস্ত্রসহ আক্রমন করে এবং বাধা দিতে গেলে পাভেলকে পেটের ডানদিকে ছুরিকাঘাত করে। পরে তাকে আহত অবস্থায় স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে তার পেটে অস্ত্রপচার করা হয়। ডাক্তারদের প্রচেষ্টায় পাভেল মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসে। এরপর ২০২১ সালের ৯ই জুন সিরাজ শিকদারকে প্রধান আসামী করে জেলা কোর্টে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করে পাভেল। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ১৪ই জুন ২০২১ সালে সিরাজ শিকদার গ্রেপ্তার হন এবং আদালত তার জামিন মঞ্জুর না করে তাকে জেলে পাঠায়। ২০২১ সালের ১৭ই জুন সিরাজ শিকদারের ছেলে নুরুল শিকদার প্রায় ১০/১৫ জন সন্ত্রাসী নিয়ে পাভেলের বাসায় যায় এবং মামল তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দেয়। যেহেতু মামলা চলমান তাই পরবর্তী শুনানির দিন সাক্ষী সহ সবাইকে অনুপস্থিত থাকতে বলে। তখনও পাভেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পরবর্তী শুনানির দিন অর্থাৎ ৪ঠা জুলাই ২০২১ সালে পাভেলের বাবা-মা, ছোট ভাই এবং ছোট বোন আদালতে যাওয়ার পথে নুরুল শিকদারের বাধার মুখে পড়ে তারা এক পর্যায়ে তার বাবা-মা, এবং ছোট ভাইকে মারধর করে এবং তার ১৩ বছরের ছোট বোনকে তুলে নিয়ে যায়। পাভেলের পিতা বিষয়টি থানা পুলিশকে জানান পরে পুলিশ খোঁজ শুরু করে এবং শহরের ভাঙা পরিত্যক্ত একটি স্কুল ঘরে অজ্ঞান অবস্থায় মেয়েটিকে খুঁজে পায়। এই মেয়েকে তারা উপর্যুপরি ধর্ষনের পর মৃত মনে করে ফেলে চলে যায়। পাভেল চিকিৎসাধীন এবং তার বোন মৃতপ্রায় এবং ধর্ষিতা। সামাজিক ভাবে তার পরিবার কোনঠাসা হয়ে পড়ে এবং মানসিকভাবে বিদ্ধস্থ হয়ে পড়ে। ১০ই জুলাই ২০২১ সালে তার ছোট বোন মানসিক ট্রমা এবং শারিরীক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে মৃত্যুবরন করে। তার বাবা-মা আমার বোনের মৃত্যু শোকে পাগলপ্রায় হয়ে যায়। সে ১৬ই জুলাই ২০২১ সালে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পায়। পাভেল বোনের হত্যার বিচারের জন্য সকল তথ্য প্রমান সংগ্রহ করে সিরাজ শিকদারের চলমান মামলার সাথে সংযুক্ত করে সিরাজ শিকদারের সমপৃক্ততা রয়েছে এই ভাবে পরবর্তী শুনানীতে উপস্থাপন করতে বলেন উকিলকে। কিন্তু মামলার পরবর্তী শুনানী অজানা কারণে দীর্ঘায়িত হয় এবং মামলার সাক্ষীরা নুরুল শিকদারের ভয়ে শুনানির দিন উপস্থিত না হওয়ায় পাভেলের বোন হত্যা এবং তাকে হত্যার চেষ্টার সাথে সিরাজ শিকদারের সম্পৃক্ততা প্রমান করতে ব্যর্থ হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারী সিরাজ শিকদার আদালতের রায়ে জামিন লাভ করে।
জামিনের পর বাড়িতে শান্তিতে বসবাস করতে পারেনি পাভেল। সিরাজ শিকদারের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে বাড়ি ও এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় পাভেল।
Sharing is caring!


………………………..

Design and developed by best-bd