জগন্নাথপুরে প্রবাসীর স্ত্রীকে ৬ খন্ড করে হত্যা : রহস্য উন্মোচন, গ্রেফতার ৩

প্রকাশিত: ৮:২৭ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২২

জগন্নাথপুরে প্রবাসীর স্ত্রীকে ৬ খন্ড করে হত্যা : রহস্য উন্মোচন, গ্রেফতার ৩

Manual7 Ad Code

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌরশহরের মির্জা আব্দুল মতিন মার্কেটের ‘অভি মেডিকেল হলে’ প্রবাসীর স্ত্রীকে ৬ খন্ড করে হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

এ বিষয়ে শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকায় প্রেস ব্রিফিং করে বিস্তারিত জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশের এ বিশেষ বাহিনীটি। দুপুরে সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ দেন সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তাধর।

কেন এবং কীভাবে হত্যা করা হয়েছিল সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের প্রবাসীর স্ত্রী শাহনাজ পারভীন জোসনাকে- সেই তথ্য বের করার পাশাপাশি তিন জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। শুক্রবার গ্রেপ্তার করা হয় ‘অভি মেডিকেল হল’ নামের ফার্মেসির মালিক জিতেশ চন্দ্র গোপ, তার বন্ধু অনজিৎ চন্দ্র গোপ ও অসীত চন্দ্র গোপকে।

Manual1 Ad Code

সিআইডি জানায়, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর থানার পৌর এলাকার ব্যারিস্টার আবদুল মতিন মার্কেটের অভি মেডিকেল হল নামের একটি ওষুধের দোকান থেকে শাহনাজ পারভীন জোসনার ছয় টুকরো লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জোসনা জগন্নাথপুর থানার নারকেলতলা গ্রামের সৌদি প্রবাসী ছরকু মিয়ার স্ত্রী।

এ ঘটনায় ওইদিনই নিহতের ভাই হেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে জগন্নাথপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলা নম্বর-০৮/১৫।

শাহনাজ জোসনা ২০১৩ সাল থেকে জগন্নাথপুর পৌর শহরে নিজের বাসায় দুই ছেলে, এক মেয়ে, বৃদ্ধা মা ও ভাই-বোনদেরকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন।

Manual7 Ad Code

সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে মুক্তাধর জানান, ওষুধপত্র কেনার সুবাদে অভি মেডিকেল হলের মালিক জিতেশের সাথে জোসনার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। জোসনা কিছুদিন ধরে গোপন শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি জিতেশ জোসনার মায়ের প্রেশার মাপার জন্য তাদের বাড়িতে যান। তখন জোসনা তার গোপন সমস্যার কথা জিতেশকে জানালে তিনি তাকে দোকানে যেতে বলেন। ওইদিন বিকালে জোসনা জিতেশের দোকানে গেলে তাকে দোকানে কাস্টমার রয়েছে বলে অপেক্ষা করতে বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন।

মুক্তাধর আরও জানান, অনেক রাত হলে বাসায় যাওয়ার জন্য জোসনার অস্থিরতা বেড়ে যায়। তখন ওই ফার্মেসির মধ্যে তাকে একটি ঘুমের ওষুধ খেতে দেন জিতেশ। এতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন জোসনা। তখন জিতেশ, তার দুই বন্ধু অনজিৎ এবং অসীত গোপ তাকে ধর্ষণের পরিকল্পনা করেন। জিতেশ তার ফার্মেসিতে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার কক্ষে জোসনাকে বসিয়ে রাখেন। সেখানে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লে তাকে ঘরে রেখে ফার্মেসির তালা বন্ধ করে বাইরে চলে যান জিতেশ।

Manual6 Ad Code

এরপর রাত গভীর হলে আশেপাশের দোকান যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন জিতেশ ও তার দুই বন্ধু ফার্মের্সি খুলে এনার্জি ড্রিংকস পান করে ধর্ষণ করেন।

বিষয়টি শাহনাজ তার পরিবারকে জানিয়ে দেবেন বললে জিতেশ ও তার বন্ধুরা তার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে এবং মুখে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে ওই ফার্মেসিতে থাকা ফল কাটার ছুরি দিয়ে লাশটি দুই হাত, দুই পা এবং বুক পেটসহ ছয়টি টুকরা করেন। এরপর দোকানে থাকা ওষুধের কার্টুন দিয়ে খণ্ডিত অংশগুলো ঢেকে রেখে ফার্মসিতে তালা লাগিয়ে চলে যান। পরে খণ্ডিত লাশ পাশের একটি মাছের খামারে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু ভোর হয়ে যাওয়ায় এবং লোকজন চলে আসায় তারা সেই কাজটি করতে পারেননি।

Manual8 Ad Code

সংবাদ সম্মেলনে মুক্তাধর বলেন, ‘এই ঘটনার পর সিআইডির এলআইসি শাখার একাধিক দল আসামি গ্রেপ্তারের জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায়। শুক্রবার রাজধানীর ভাটারা থানার নুরেরচালা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জিতেশকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর জগন্নাথপুর থানার পৌর এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় অনজিৎ এবং অসীত গোপকে।

গ্রেপ্তারকৃত জিতেশ চন্দ্র গোপ কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার শহিলা গ্রামের যাদব চন্দ্র গোপের ছেলে, অনজিৎ চন্দ্র গোপ একই এলাকার রসময় চন্দ্র গোপের ছেলে ও অসীত চন্দ্র গোপ নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার সুয়াইর অলিপুর গ্রামের পতিত পবন গোপের ছেলে।

উল্লেখ্য, ‘অভি মেডিকেল হল’ নামের ফার্মেসি থেকে তালা ভেঙে গত বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে শাহনাজ পারভিন জোসনা (৩৫) নামের ওই তিন সন্তানের জননীর ছয় খণ্ড লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগের দিন (বুধবার) বিকেল থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। তিনি সুরুক মিয়া নামের এক সৌদি আরব প্রবাসীর স্ত্রী। সুরুক মিয়ার বাড়ি উপজেলার নারিকেল তলা গ্রামে। জোসনা সন্তানদের নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে জগন্নাথপুর পৌরসভার পিছনের আবাসিক এলাকার একটি দুতলা (নিজস্ব) বাসায় বসবাস করে আসছেন।

নিহত শাহনাজ পারভিনের ছেলে উদয় জানান, বুধবার সকালে অভি মেডিকেল হলের মালিক জিতেন্দ্র গোপ তাদের বাসায় গিয়ে পারভিনের ব্লাড প্রেশার মাপেন। পরে তিনি পারভিনকে দোকানে যাওয়ার কথা বলে চলে যান। বিকেলে ঔষুধ আনার উদ্দেশে পারভিন ঘর থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি। রাতে উদয় তার মায়ের মোবাইল ফোনে কল দিলেও কেউ রিসিভি করেননি। বিষয়টি উদয় থানাপুলিশকে জানান। পরে বৃহস্পতিবার পুলিশ জিতেন্দ্র গোপের ফার্মেসি থেকে পারভিনের খন্ড-বিখন্ড লাশ উদ্ধার করে।

জগন্নাথপুর থানাপুলিশ লাশ উদ্ধারের দিন জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে অভি মেডিকেলের তালা ভেঙে প্রবেশ করলে দেখতে পাওয়া যায়, মহিলার দেহটি ছয় খণ্ড করা। দুই হাত ও পা আলাদা করে কাটা, মাথা এক খণ্ড, কোমর থেকে বুক পর্যন্ত আরেক খণ্ড। পরনে কোনো কাপড় ছিলো না। পারভিন নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে অভি মেডিকেল হলের মালিক জিতেন্দ্র তার পরিবার নিয়ে জগন্নাথপুর থেকে পালিয়ে যান।

এদিকে, নিহতের ভাই হেলাল মিয়া বলেন, বুধবার বেলা ৩টার দিকে আমার বোনকে অভি মেডিকেলের মালিক জিতেশ চন্দ্র গোপ অভি ফোন করে তার ফার্মেসিতে নিয়ে যান। এরপর আমার বোন আর বাসায় ফেরেনি। রাতে খোঁজাখুঁজির পর অভির সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি আমার বোনকে ফিরিয়ে দেবেন বলে বৃহস্পতিবার সকালে পৌরশহরের একটি বাজারে যেতে বলেন।

সকালে বাজারে গিয়ে প্রায় ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করার পর অভিকে ফোন দেই, কিন্তু ফোন বন্ধ পাই। পরে পুলিশ নিয়ে তার বাসায় গিয়ে দেখি বাসার দরজায় তালা লাগানো। তখন আমাদের সন্দেহ হয়। দুপুরে বাজারে তার ফার্মেসিতে গিয়ে তালা ভেঙে আমার বোনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জিতেন্দ্র গোপ ৯ বছর জগন্নাথপুর বাজারের বিভিন্ন ওষুধের দোকানে চাকরির পর গত এক বছর ধরে জগন্নাথপুর পৌরশহরের মির্জা আব্দুল মতিন মার্কেটে অভি মেডিকেল হল নামে একটি ফার্মেসি খুলে নিজে ব্যবসা শুরু করেন।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

February 2022
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728  

সর্বশেষ খবর

………………………..