শাবি আন্দোলনে অর্থ সহায়তাকারী ৩৫৭ : আকট সেই ৫ জনের জামিন

প্রকাশিত: ১২:২৬ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৭, ২০২২

শাবি আন্দোলনে অর্থ সহায়তাকারী ৩৫৭ : আকট সেই ৫ জনের জামিন

Manual3 Ad Code

ক্রাইম ডেস্ক :: সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) একটি হলের প্রভোস্ট কমিটি থেকে শেষ পর্যন্ত উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি। যেন তিল থেকে তাল। আন্দোলনটি সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে লাখ লাখ টাকার অর্থ জোগানের অভিযোগ। গত ১৯ জানুয়ারি থেকে ২৪ জন শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে বসেন। ২২ তারিখ রাতে আরও ৫ জন যোগন দেন সেই অনশনে। সবমিলিয়ে এক জটিল রহস্য আর ইন্ধন কাজ করছিলো আন্দোলনের পেছনে- এমনটি ধারণা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, আন্দোলনের মাত্রা বেড়ে ঘোলাটে হয়ে ওঠে শাবি পরিস্থিতি। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছিলো পুরো দেশে। অবশেষে আন্দোলন দাবানলে রূপ নেওয়ার আগেই অর্থ সহায়তাকারী হিসেবে ৩৫৭ জনকে চিহ্নিত করে প্রশাসন। এরমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয় ৫ জনকে। তারা সবাই শাবিপ্রবির সাবেক ছাত্র।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর দারিপাকা গ্রামের মতিয়ার রহমান খানের ছেলে হাবিবুর রহমান খান (২৬), বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ থানাধীন লক্ষ্মীকোলা গ্রামের মুইন উদ্দিনের ছেলে রেজা নুর মুইন (৩১), খুলনা জেলার সোনাডাঙ্গার মিজানুর রহমানের ছেলে এএফএম নাজমুল সাকিব (৩২), ঢাকা মিরপুরের মাজার রোডের জব্বার হাউসিং বি-ব্লকের ১৭/৩ বাসার এ কে এম মোশাররফের ছেলে এ কে এম মারুফ হোসেন (২৭) ও কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানাধীন নিয়ামতপুর গ্রামের সাদিকুল ইসলামের ছেলে ফয়সল আহমেদ (২৭)।

এর মধ্যে নাজমুল সাকিব করোনা পজিটিভ হওয়ায় তাকে নগরীর শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি চারজনকে বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালতের বিচারক সুমন ভূইয়া তাদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের।

Manual8 Ad Code

পুলিশ সূত্র জানায়, শাবির আন্দোলনকে জিইয়ে রাখতে অর্থসহায়তাকারী ৩৫৭ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা কেন এই আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে এতো উৎসাহী ছিলো- তা খুঁজে বের করছে পুলিশ। এছাড়াও এটি কোনো সরকারবিরোধী চক্রান্তের অংশ কি-না, অর্থ জোগানের কারণ, অর্থ জোগান ও ইন্ধদাতাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ, গ্রেপ্তারকৃতদের রাজনৈতিক পরিচয় ও অর্থ জোগানের কারণ এবং এই আন্দোলনে জামায়াত-বিএনপির মদদ আছে কি-না তাসহ বিভিন্ন বিষয় মাথায় নিয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। সব মিলিয়ে প্রশাসন মনে করছে- শাবির এই আন্দোলনকে কোনোপক্ষ পুঁজি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার পাঁয়তারায় লিপ্ত ছিলো।

পুলিশ জানায়, ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অর্থ-সহায়তা দেওয়া ৩৫৭ জনকে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ঘটনায় সোমবার শাবিপ্রবির সাবেক পাঁচ ছাত্রকে ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি টিম গ্রেফতার করে। পরে তাদের সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)-এর কাছে হস্তান্তর করে সিআইডি।

Manual2 Ad Code

পুলিশের দাবি, গ্রেপ্তারকৃতরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের খাবার ও চিকিৎসার জন্য বড় অংকের টাকা দিয়েছেন।

এদিকে, অর্থ সহায়তা দেওয়ার জন্য শাবিপ্রবির সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের নিয়ে খোলা ফেসবুক গ্রুপ ‘ফোরাম ফর সাস্টিয়ান ফুড অ্যান্ড ফেয়ার’ ডিলেট করে দেওয়া হয়েছে। অর্থ সহায়তা নেওয়া মোবাইল নম্বরগুলোও সোমবার থেকে বন্ধ।

Manual3 Ad Code

আন্দোলনকারী আরিফুল ইসলাম বলেছেন, আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার সব মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর সোমবার দুপুরের পর থেকে কাজ করছে না। ওই মুঠোফোন নম্বরগুলো সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে।

সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার নিশারুল আরিফ এ বিষয়ে বলেন, ‘কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় নিয়ে কাজ করছে পুলিশ। এই আন্দোলনকে চাঙা করার নেপথ্যে কী? কেন এতো অর্থ সহায়তা? এর পেছনে কীভাবে এবং কোন কারণে এতো লোক জড়িত হলো? এসব খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এই আন্দোলনে ৩৫৭ জন অর্থ সহায়তা দিয়েছেন। তাদের পরিচয় চিহ্নিতকরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। আন্দোলনে রাজনৈতিক ইন্ধন আছে কি-না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, টানা ৭ দিন অনশন কর্মসূচি পালনের পর শাবিপ্রবির ২৮ জন শিক্ষার্থী অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের অনুরোধে বুধবার সকালে অনশন ভেঙেছেন। নিজ হাতে শিক্ষার্থীদের পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী। তবে এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন না। ছিলেন না শিক্ষক সমিতির কোনো সদস্যও। বুধবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে জাফর ইকবালের সাথে তার স্ত্রী অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক ছিলেন।

Manual1 Ad Code

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, অনশন ভাঙার সময় কোনো শিক্ষক বা শিক্ষক সমিতির কাউতে ডাকা হয়নি।

এর আগে মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাতে সস্ত্রীক ঢাকা থেকে সিলেট আসেন জাফর ইকবাল। সিলেট এসেই উপস্থিত হন শাবি শিক্ষার্থীদের মাঝে। শীতে জবুথবু শিক্ষার্থীরা তাকে পেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন। এ সময় কান্নায় ভেঙেন পড়েন তিনিও। দীর্ঘ দুই ঘণ্টা কথা বলেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। শেষে আন্দোলন অব্যাহত রাখার শর্তে অনশন থেকে সরে আসে শাবি শিক্ষার্থীরা।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

January 2022
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031  

সর্বশেষ খবর

………………………..