‘ভেদভেদা’ ফয়ছলের পেশা ছিলো ভুঁইফোড় পত্রিকার স্টিকার বাণিজ্য : র‍্যাব

প্রকাশিত: ১২:৪১ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৫, ২০২১

‘ভেদভেদা’ ফয়ছলের পেশা ছিলো ভুঁইফোড় পত্রিকার স্টিকার বাণিজ্য : র‍্যাব

Manual7 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সিলেটের ভুয়া সাংবাদিক ফয়ছল কাদিরকে গ্রেফতারের পর প্রেস ব্রিফিং করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‍্যাব)-৯। বুধবার (১৪ জুলাই) বেলা ২টার দিকে র‍্যাব-৯ কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে ফয়ছল কাদিরের নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয়।

প্রেস ব্রিফিংকালে র‍্যাব-৯ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সামিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী চলমান লকডাউন বাস্তবায়নে গত ৯ জুলাই সিলেটের শাহপরাণ থানাধীন সুরমা গেটে চেকপোস্ট বসিয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন একদল ট্রাফিক পুলিশ। এদিন বিকেলে হেলমেটবিহীন তিন আরোহী নিয়ে কাগজপত্রবিহীন একটি মোটরসাইকেলে চড়ে সুরমা গেট দিয়ে যাচ্ছিলেন ভুয়া সাংবাদিক ফয়ছল কাদির। এসময় দায়িত্বরত পুলিশ সার্জেন্ট তাকে আটক করলে তিনি মোটরসাইকেলের কাগজপত্র এবং নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্সও দেখাতে পারিনি। উপরন্তু উত্তেজিত হয়ে তার একটি ফেসবুক পেজ থেকে লাইভের মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীকে হেয় করার উদ্দেশ্যে পুলিশের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা তথ্য প্রচার শুরু করেন।

এ ঘটনার পর ফয়ছলের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করে পুলিশ। এর পর থেকে তার উপর আমরা নজর রাখছিলাম। অবশেষে মঙ্গলবার দিনগত (১৪ জুলাই) মধ্যরাতে সিলেট সদর উপজেলার পীরেরবাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

Manual1 Ad Code

মো. সামিউল আলম আরও বলেন, গ্রেফতারের পর ফয়ছল কাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং এর বাইরেও আমরা খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পেরেছি- তার মূল পেশা হচ্ছে সিএনজি অটোরিকশার টুকেন বাণিজ্য ও নানা ভুঁইফোড় পত্রিকার স্টিকার বাণিজ্য। এর মাধ্যমেই সে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে। প্রেস ব্রিফিংয়ের পর বিকেল ৩টার দিকে ফয়ছল কাদিরকে এসএমপির শাহপরাণ থানায় হস্তান্তর করে র‍্যাব।

হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন শাহপরাণ থানার ওসি সৈয়দ আনিসুর রহমান। তিনি বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বলেন, হস্তান্তরের পর ফয়ছল কাদেরকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। তাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হবে।

এর আগে মঙ্গলবার রাত সোয়া ৯টার দিকে শাহপরাণ থানার ওসি সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, ফয়ছল কাদেরকে দুই দিন থেকে গ্রেফতার করতে শাহপরাণ থানাপুলিশের দল পৃথক পৃথক স্থানে অভিযান চালিয়েছে। তবে তিনি আত্মগোপনে আছেন।অবশেষে মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে ফয়ছলকে গ্রেফতার করে র‍্যাব-৯।

Manual8 Ad Code

উল্লেখ্য, লকডাউন চলাকালে গত ৯ জুলাই নিজের কাগজপত্রবিহীন মোটরসাইকেল আটক করায় ক্ষুৃব্দ হয়ে ফেসবুক লাইভ করেন ফয়ছল কাদির (৪০) নামের এক ব্যক্তি। লাইভে যিনি নিজেকে সাংবাদিক বলে পরিচয় দেন। ফেসবুকে লাইভ করার ঘটনায় রোববার রাতে সিলেট নগরের শাহপরান থানায় ফয়ছল কাদিরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন সিলেট মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট মো. নুরুল আফসার ভূইয়া।

Manual5 Ad Code

ফয়ছল কাদির ‘পৃথিবীর কণ্ঠ (পিকে) টিভি’ নামে ফেসবুক ভিত্তিক একটি পেজ পরিচালনা করেন। ফেসবুকে নিজেকে পিকে টিভির সম্পাদক ও মাতৃজগত নামের একটি পত্রিকা সিলেট ব্যুরো প্রধান হিসেবে দাবি করেছেন ফয়ছল। তবে সিলেটের সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ তাকে সাংবাদিক হিসেবে চিনেন না বলে জানিয়েছেন।

পুলিশ জানায়, লকডাউন চলাকালে গত ৯ জুলাই বিকেলে সিলেট-তামাবিল সড়কের সুরমা গেট এলাকায় তিন আরোহি নিয়ে চলা একটি মোটরসাইকেল আটক করে পুলিশ। ফয়ছল কাদির এই মোটরসাইকেলটি চালাচ্ছিলেন। এসময় তার মাথায় হেলমেট ছিলো না। আটকের পর তিনি মোটর সাইকেলের কাগজপত্র এবং নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্সও দেখাতে পারিনি।

ওইদিন ঘটনাস্থলে দায়িত্ব পালন করা এক পুলিশ সদস্য বলেন, মোটরসাইকেল আটকের পর ফয়ছল কাদির নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে পুলিশের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং মোটর সাইকেল ছাড়িয়ে নিতে চান। এতে ব্যর্থ হয়ে তিনি ফেসবুকে লাইভ করা শুরু করেন। তবে তার মোটাসাইকেলটি ওইদিন আটক করে নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানান এই পুলিশ সদস্য। তবে পরদিন জরিমানা দিয়ে মোটরসাইকেলটি তিনি ছাড়িয়ে নেন বলে জানায় পুলিশ।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এই ভিডিওতে দেখা যায়, মোটর সাইকেল আটকের ঘটনায় ক্ষুব্দ হয়ে কথা বলছেন ফয়ছল কাদির। তার সাথে কেনো এমন আচরণ করা হলো বারবার তা দায়িত্বরত পুলিশের কাছে জানতে চান। পুলিশের উর্ধতন কর্তপক্ষ এবং সাংবাদিকদকের ফোন করে এই ঘটনা জানাচ্ছেন বলেও লাইভে বলতে শোনা যায় ফয়ছলকে।

মোটর সাইকেলটি আটককালে সুরমা গেইটে চেকপোস্টের দায়িত্বে ছিলেন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট মো. নুরুল আফসার ভূইয়া।

ফয়সাল কাদিরের লাইভ চলাকালেই সার্জেন্ট মো. নুরুল আফসারকে বলতে শোনা যায়, আপনার গাড়িতে ৩ জন তুলছেন কেনো? গাড়ির কাগজ কই? ড্রাইভিং লাইসেন্স কই?

এসব প্রশ্নের জবাবে ফয়ছল বলেন, আমার গাড়ির সেল রিসিট আছে। আমি অসুস্থ। একটি জরুরী নিউজের খবর পেয়ে তাড়াহুড়ো করে বের হয়েছি। তাই এটি সাথে আনতে পারিনি। একটু সময় দিলে নিয়ে আসবো।

এসময় সার্জেন্ট নুরুল লাইভ ক্যামেরার সামনে মুখ নিয়ে একাধিকবার বলেন, সাংবাদিক বলে কি সবকিছু মাফ?

জবাবে ফয়ছল বলেন, ‘আপনার গাড়ির কাগজ কই? পুলিশেরও হেলমেট থাকে না। আমি সরি বলেছি। তারপরও আমার গাড়ি রেকার করছেন কেনো। সিলেটেরর মানুষ খুব ভালো। এই মাটি খুব ভালো। তাই সিলেটের মানুষ এতো আদর করে সোহাগ করে। আর আপনি আইনের ক্ষমতা দেখাচ্ছেন। গাড়ি চলতেছে। গাড়ি চলার সুবিধা দিয়ে সাধারণ সংবাদকর্মীর সাথে এমন আচরণ করছেন।…’

এই বাদনাবাদুনের লাইভ ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। ফেসবুক লাইভেই অনেকে ফয়সাল কাদিরের আচরণের নিন্দা করে মন্তব্য করেন। সংবাদকর্মী পরিচয় দিয়ে অবৈধ সুবিধা আদায়ের চেষ্টা, ক্ষমতা প্রদর্শনের নিন্দা করেন মন্তব্যকারীরা। একইসাথে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যের আচরণের প্রশংসা করেন তারা।

এদিকে, এই ঘটনা নিয়ে আলোচনার মধ্যে রোববার রাতে ফয়ছল কাদিরের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন মোটরসাইকেল আটককারী সার্জেন্ট মো. নুরুল আফসার ভূইয়া।

মামলার এজাহারে ফয়ছল কাদিরের বিরুদ্ধে ফেসবুকে বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য সরাসরি প্রচার করে অস্থিরতা, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।

এর আগেও সেই ফয়ছল কাদের ধর্ষণ মামলায় কানাইঘাট থানাপুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন বলে জানা গেছে।

Manual4 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

July 2021
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  

সর্বশেষ খবর

………………………..