সিলেট ২৮শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৭ই রজব, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৪:২২ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৩, ২০২১
নিজস্ব সংবাদদাতা :: কোম্পানীগঞ্জের নদী ভাঙ্গণ কবলিত ঢালারমুখ থেকে অবৈধ লিস্টার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছেনা।বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের অভিযান দেওয়ার ১ ঘন্টা আগেই চাঁদাবাজ চক্র খবর পেয়ে নিরাপদ স্থানে নৌকা ও লিস্টার মেশিন সরিয়ে ফেলে। ফলে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের অভিযান কোনো কার্যকর হচ্ছেনা। নদী ভাঙ্গণরোধে গ্রাম রক্ষার আন্দোলনকর্মীরাই এখন প্রকাশ্যে চাঁদাবাজী ও বালু লুটে জড়িয়ে পড়েছে।
ঢালারমুখ থেকে অবৈধ লিস্টার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধে সোমবার (১২ জুলাই) কোম্পানীগঞ্জ প্রশাসন টাস্কফোর্স অভিযান দেয়।দুপুর ১২ টার সময় অভিযান শুরু হয়।কিন্তু এর ১ ঘন্টা আগেই অভিযানের খবর পেয়ে যায় বালু লুটেরা ও চাঁদাবাজরা।ফলে ইজারাবর্হিভূত অবৈধ বালু লুটেরা ও চাঁদাবাজরা নিরাপদেই তাদের নৌকাগুলো সরিয়ে নেয়।দুপুর ১২ টার সময় টাস্কফোর্স অভিযানিক দল ঢালারমুখে গিয়ে কোনো নৌকা পায়নি।
অথচ ১ ঘন্টা আগেও এখানে ৪/৫ শত নৌকা লিস্টার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনে ব্যাস্ত ছিল। অভিযানের খবর পায়নি এমন ৬টি নৌকাকে ঢালারমুখের আশেপাশ থেকে বালু উত্তোলন করা অবস্থায় আটক করেন টাস্কফোর্স অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মুসা নাসের চৌধুরী। আটক নৌকাগুলোকে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ৫০ হাজার করে মোট ৩ লক্ষ টাকা জরিমানা করেন। বালু খেকুদের রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। বাল মহাল থাকলেও ইজারাদারদের কৌশলের ফাদে ফেলে নিজেদেরকে বালুভূমির মালিক দাবী করে প্রতিফুট বালু বিক্রির নামে ৫ টাকা চাঁদা আদায় করছে চাঁদাবাজরা। প্রতিদিন প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজী করছে চাঁদাবাজরা।এই নিয়ে সাধারণ নৌমালিকরা ক্ষোভ জানালেও চাঁদাবাজদের কাছে জিম্মি তারা।চাঁদা না দিলে বালু মিলবেনা।তাই বাধ্য হয়েই চাঁদা দিতে হয়। ইসলামগঞ্জ বাজার-ঢালারপার এলাকার প্রায় ৩ শত একর ইজারাবর্হিভূত বালুভূমি থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও চাঁদাবাজী করছে কয়েকটি ছোট/বড় গ্রুপ।এই গ্রুপের প্রধান শাহ আরফিন টিলা ধংসকারী কাঠালবাড়ি গ্রামের মোহাম্মদ আলী।তার সহযোগী হিসেবে রয়েছেন আরেক বিতর্কিত বিএনপি নেতা আলমগীর আলম ওরফে আলম মেম্বার।মোহাম্মদ আলী ও আলম মেম্বার গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করছেন কলাবাড়ি গ্রামের ফারুক মিয়া।এই গ্রুপে প্রায় ১৫/১৬ জন চাঁদাবাজ রয়েছেন। তারা নৌকার সারং থেকে ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায় করেন।
এছাড়াও রয়েছে আরেক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি আলী আকবর মেম্বার।চাঁদা আদায়ের মূল কাজটি করেন আলী আকবর মেম্বারের ছেলে হৃদয় আহমদ। তার নেতৃত্বে ৮/৯ জনের একটি চাঁদাবাজ গ্রুপ ছোট ছোট নৌকা থেকে চাঁদা আদায়ে ব্যাস্ত।এছাড়াও যুবলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সিনিয়র সদস্য তোফাজ্জল হোসেনের রয়েছে প্রভাবশালী গ্রুপ।এই গ্রুপের নিয়ন্ত্রক উপজেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি সিরাজুল হক।এই গ্রুপে আছে ১৫/১৬ জন সদস্য। তোফাজ্জল গ্রুপটি আলোচনায় এসেছে ঢালারপাড় রক্ষায় আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। গ্রাম রক্ষার কৌশলী আন্দোলনে অন্যান্য চাঁদাবাজ গ্রুপ নিশ্চিন্তে ধান্ধা করতে ঝামেলা পোহাতে হয় তাই বিপাকে ছিল তারা।তোফাজ্জল গ্রুপের এই আন্দোলনের ফলে আশে পাশের চাঁদাবাজ চক্ররা চাঁদাবাজি ও বালু লুটপাট সুবিধামত করতে পারেনা। তাই সবাই মিলে শক্তিশালী এই তোফাজ্জল গ্রুপকে কিছু জায়গা ছেড়ে দেয়।যে জায়গাটি রক্ষায় আন্দোলন হয়েছে সেই ঢালারমুখই তাদের এখন রুটিরুজি জুগায়। এছাড়াও উত্তর ঢালারপাড় গ্রামের কামাল গ্রুপ মধ্য ডালারপার গ্রামের ইদ্রিস আলী, আইজুল হক ও হাসেম গ্রুপ, ঢালারপারের করম আলী গ্রুপ,মাহমুদ আলী ও নুরুজ্জামান কাসু গ্রুপ,মানিক মিয়া, নুর আলম ও নুর কামাল গ্রুপ এই বালু মহালে চাঁদাবাজির সাথে যুক্ত।
আল আমিন নামের সুনামগঞ্জের এক নৌকা মালিক আক্ষেপের সুরে জানান, গত বছর শান্তিতে ব্যাবসা করতে পারতাম কিন্তু এই বছর চাঁদা দিতে দিতে পুজি মিলছেনা। ইজারাদার গ্রুপকে দিতে হয় প্রতি ফুট বালুতে দেরটাকা কিন্তু চাঁদাবাজ গ্রুপকে দিতে হয় প্রতি ফুট বালুতে ৫ টাকা। প্রশাসনকে জানিয়ে কোনো লাভ নেই।শুনেছি প্রশাসন সব কিছু জানে কিন্তু নিরব।
Sharing is caring!


………………………..

Design and developed by best-bd