ওসমানীনগরে জোড়া খুন: গৃহকর্মীকে দিয়ে যৌন লালসা মিঠাতেন শিক্ষিকা, মামলা দায়েরের

প্রকাশিত: ৮:৩৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩, ২০২১

ওসমানীনগরে জোড়া খুন: গৃহকর্মীকে দিয়ে যৌন লালসা মিঠাতেন শিক্ষিকা, মামলা দায়েরের

Manual5 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সিলেটের ওসমানীনগরে নিজ গৃহের মেঝে থেকে শিক্ষিকার বিবস্ত্র গলাকাটা লাশ ও একই গৃহের কাঠের উপর থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় গৃহকর্মী গৌরাঙ্গ সরকারের লাশ উদ্ধারে থানায় হত্যা মামলা ও অপমৃত্যুর মামলা দায়েরের ৯ দিন পর শিক্ষিকা কর্তৃক জোড়পূর্বক যৌন লালসা মিঠানোর জেরে গৃহকর্মীকে হত্যার অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

Manual5 Ad Code

গত ৩০ জুন শিক্ষিকার স্বামী ডা: বিজয় ভুষন দেব ও পুত্র তন্ময় দে বিপ্লবকে অভিযুক্ত করে সিলেটের সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন নিহত গৃহকর্মীর ভাই বিশ্বনাথের দশঘর গ্রামের জহর লাল সরকারের পুত্র মরচান সরকার।

মামলায় উল্লেখ রয়েছে, নিহত শিক্ষিকা জোড় প্রয়োগের মাধ্যমে গৃহকর্মী গৌরাঙ্গের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে দীর্ঘদিন ধরে নিজের যৌন লিপসা চরিতার্থ করে আসছিলেন। চাপের মাধ্যমে অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে অবহিত করে সে আর ওই চিকিৎসকের বাড়িতে কাজে থাকবে না বলে পরিবারকে জানায় গৃহকর্মী। ঘটনার দিন বিকালে শিক্ষিকা গৃহকর্মীকে সাথে নিয়ে বিশ্বনাথস্থ দশঘর গ্রামে গিয়ে পরিবারের কাছে গৃহকর্মীকে বিয়ের দাবি জানালে গৌরাঙ্গের পরিবার তাতে রাজি না হওয়ায় বিকাল চারটায় গৌরাঙ্গ নিয়ে নিজ বাড়িতে চলে আসেন শিক্ষিকা তাপতি দে লাভলী। ওই দিন রাত ১১ টায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গৌরাঙ্গ ও শিক্ষিকা নিখোঁজের খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যকে সাথে নিয়ে গৃহকর্মীর বড় ভাই মরচান শিক্ষিকার বাড়িতে এসে লাশ দেখতে পেয়ে শুরচিৎকার শুরু করলে শিক্ষিকার স্বামী ও পুত্র মিলে হুমকি ধামকি দিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

Manual7 Ad Code

এদিকে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের ১৪ দিন অতিবাহিত হলেও থানা পুলিশ এর মূল রহস্য বের করতে না পারা নিয়ে সর্বমহলে দেখা দিয়েছে নানা প্রতিক্রিয়া। খুনের পিছনের কারণ জানতে শিক্ষিকার সহকর্মীবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকজন জড় তুলছেন সোস্যাল মিডিয়ার। এলাকার বিজ্ঞজনদের দাবি, যেভাবে সহজ ভাষায় শুধুমাত্র নিহত গৃহকর্মীর ওপর শিক্ষিকা খুনের দায় চাপিয়ে সংশ্লিষ্টরা তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন বিষয়টি এত সহজ নয়। কারন ভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত শিক্ষিকার পারিবারিক কলহের বিষয়টিও এড়িয়ে না গিয়ে সুষ্ট তদন্তের প্রয়োজন। গৌরাঙ্গও যদি তপতিকে খুন করে এর গভীরেও কোনো না কোনো কারণ রয়েছে। যা শিক্ষিকার পরিবারের সদস্যদের কারো না কারো জানার কথা।শিক্ষিকাসহ গৃহকর্মীর লাশ উদ্ধারের পিছনের রহস্য খুঁজে বের করা এখন সময়ের দাবি বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

নিহত গৃহকর্মীর ভাই মামলার বাদি মরচান সরকার বলেন, অভাবের তারনায় হতদ্ররিদ্র পরিবারের আহার যুগাতে বিগত প্রায় ৬ বছর ধওে তাপতী রাণী দে লাভলী-ডা: বিজয় ভুষন দম্পতির বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতো গৌরাঙ্গ। যাওয়ার পর থেকেই গৌরাঙ্গের উপর নজর পরে শিক্ষিকার। জোড় করে লিপ্ত হতেন অনৈতিক কাজে।

এছাড়া শিক্ষিকার স্বামী ও সন্তানদের মধ্যে পারিবারিক কলহ দীর্ঘদিনের। ঘটনার দিন বিয়ের দাবি নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন তাপতি। আমরা রাজি না হওয়ায় খুবই মসিবত হবে বলে গৌরাঙ্গ নিয়ে পুনরায় বাড়িতে চলে যান তিনি। পারিবারিক কলহের জের ধরে পরিকল্পিত ভাবে তাঁর স্বামী-সন্তান মিলে শিক্ষিকা ও গৌরাঙ্গকেও হত্যার পর জোড়া খুনের ঘটনাকে চাপা দিতে ভিন্নভাবে প্রবাহিত করার চেষ্ঠায় আমার ভাই নিহত গৌরাঙ্গকে বানিয়েছেন বলির পাঠা। এ বিষয়ে মামলা দায়েরের পর আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য থানায় প্রেরন করেছে। সুষ্ট তদন্তপূর্বক ভাইয়ের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।

বাদি পক্ষের আইনজীবী মো: ওবায়দুর রহমান মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, শাটডাউনের আগের দিন বুধবার মামলা দায়ের আবেদন করেছি। সংশ্লিষ্ট আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মামলাটি আমলে নিয়েছেন। শাটডাউন শেষে আদালতের কার্যক্রম শুরুর পর এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলা যাবে।

Manual7 Ad Code

প্রসঙ্গত: গত ১৯ জুন শনিবার দিবাগত রাত ১২টায় উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের শোয়ার গাঁও গ্রামের ডা: বিজয় ভুষন দে-র বাড়ির বসত ঘরের মেঝে থেকে তারই স্ত্রীর স্কুল শিক্ষিকা তাপতী রানী দে বিবস্ত্র গলাকাটা লাশ এবং একই ঘরের কাঠের উপর থেকে গৃহকর্মী গৌরাঙ্গ সরকারের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। মৃতদেহের পাশ থেকে একটি ছুরা ও একটি বটি উদ্ধার করা হয়। হত্যাকান্ডে এ দুইটি অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে ও তপতীর ঘাড়ের ডান দিকে একটি কুপ ও ঘাড়ের পিছনে ছুরির আঘাত ছিল বলে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করে পুলিশ।

শিক্ষিকার পরিবার ও পুলিশের দাবি, শিক্ষিকাকে খুন করে ওই গৃহকর্মী নিজেই আত্মহত্যা করে। ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর কোনো এক সময়ে এ হত্যাকান্ডটি ঘটছে। ২০ জুন ময়না তদন্ত শেষে নিজ নিজ বাড়িতে অন্তুষ্টিক্রিয়ার সম্পন্ন হয়।

Manual1 Ad Code

এ ঘটনায় ২০ জুন গৃহকর্মীর মৃত্যু নিয়ে থানায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করার পর ২২ জুন শুধুমাত্র নিহত গৃহকর্মীকে অভিযুক্ত করে হত্যা মামলা দায়ের করেন শিক্ষিকার পুত্র ডা: তন্ময় দে বিপ্লব। তবে জোড়া লাশ উদ্ধারের প্রথম দিন থেকেই গৃহকর্মীর পরিবার দাবি ছিল পরিকল্পিত ভাবে শিক্ষিকাকে খুনের পর গৌরাঙ্গকে হত্যা করে তার লাশ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রেখেছে খুনীরা। ময়না তদন্তের কথা বলে পুলিশ স্বাক্ষর নিয়ে তড়িগড়ি করে থানায় অপমৃত্যু মামলা রুজু করেছে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

July 2021
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  

সর্বশেষ খবর

………………………..