সিলেট ১লা জানুয়ারি, ২০২৬ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১১ই রজব, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৪:১৬ অপরাহ্ণ, জুন ৭, ২০২১
ছাতক প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জের ছাতকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অভ্যন্তরে চরম অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দায়িত্বহীনতা, ঘুষ গ্রহণ, জালিয়াতি, প্রতারণা ও সীমাহীন দূর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। গ্রাহকদের হয়রানী বন্ধে সরকার এখানে আবাসিক থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী পদ সৃষ্টি করা হয়। নির্বাহী প্রকৌশলী হিসাবে আব্দুৃল্লাহ আল মামুন সদার যোগদানের পর থেকে সেবামূলক এ প্রতিষ্টানটি ঘুষ-দূর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়। ফলে চরম হয়রানীর শিকার হচ্ছেন হাজার হাজার গ্রাহক।
জানা যায়, ছাতক বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নও সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজি ইউনিয়নসহ প্রায় ২২হাজার গ্রাহক রয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে ৫ মে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে আব্দুৃল্লাহ আল মামুন সদার এখানে যোগদানের পর থেকে সেবামূলক এ অফিসটি ঘুষ-দূর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে।
তিনি অফিস সহকারি প্রকৌশলী আবুল হোসেনের মাধ্যমে ঘুষ বানিজ্যে মেতে উঠেছেন। ছাতক শহরে শতাধিক ষ্টোন ক্রাসিং মিল, লাফার্জ-সুরমা সিমেন্ট লিঃ, ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরী লিঃ, নিটল পাল্প এন্ড পেপারমিল লিঃ, আকিজ বেভারেজ ফুড লিমিটেডসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানা রয়েছে। বিশেষ করে ষ্টোন ক্রাসিং মিলে ট্রান্সফর্মার নষ্ট হলে এটি পরিবর্তনের নামে আদায় করা হয় দেড় থেকে দু’লক্ষ টাকা। জানা গেছে, বৃহৎ এলাকায় আবাসিকও বানিজ্যিক গ্রাহকদের প্রতিবছর প্রায় অর্ধশতাধিক ট্রান্সফর্মার বিকল হলে পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়।
এক্ষেত্রে প্রতিটি ট্রান্সফর্মার বদলের নামে হাতিয়ে নেয়া হয় বছরে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। এ রেওয়াজ শুরু হয় আব্দুৃল্লাহ আল মামুন সদার এখানে যোগদানের মধ্য দিয়ে। আবাসিক এলাকার ট্রান্সফর্মার বিকল হলে তার প্রধান সহযোগি আবুল হোসেনের মাধ্যমে গ্রাহকদের অফিসে ডেকে ঢাকা থেকে এটি পরিবর্তনে কয়েকমাস সময়ের কথা বলা হয়।
এসময় ভোক্তভূগীদের ফ্রিজে মাছ-মাংশসহ বিভিন্ন মালামাল নষ্ট হবার অজুহাতে আদায় করা হয় মোটা অংকের টাকা। এতে আবাসিক ও বানিজ্যিক গ্রাহকরা চরম হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। নোয়ারাই এলাকার রংপুর, একটি ক্রাসিং মেশিনের ট্রান্সফর্মার পরিবর্তনের জন্যে ১৫ ,২০ লক্ষ টাকা সংযোগে নামে হাতিয়ে নেন নির্বাহী প্রকৌশলী ও আবুল হোসেন। এছাড়া নোয়ারাই ইউনিয়নের টিলাগাঁও গ্রামে এসটি ২২খুটা ও এলটি ৩০খুটায় বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন।
এভাবে.মোহনপুর,তেরাপুর,রামপুর সিকন্দর পুর মেরামতে নামে পরিবর্তন করে প্রায় ৮ লক্ষাধিক টাকা এবং দোয়ারাবাজার সদর ইউনিয়নের কান্দাগাঁও গ্রামের ৩কিঃমিটার বিদ্যুতের নতুন সংযোগে ২৫লক্ষ টাকা আদায় করা হয়। কিন্তু খুটির জোর থাকায় তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
জানা গেছে, মিটার রিডারদের এলাকায় না দিয়ে গ্রাহকদের নামে তিনি মনগড়া বিল দিয়ে যাচ্ছেন। দেখা গেছে, জনৈক গ্রাহক ৯শ’ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করলেও বিল পরিশোধ করেছেন ১৮শ’ থেকে দু’হাজার ইউনিটের।
গত ২৯ মে রাত ১১টার দিকে ছাতক বিদ্যুৎ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবুল হোসেন ৪২টি সরকারি মিটার চুরি করে নেয়ার সময় ধরা পড়েন। কার্যালয়ের স্টোর রোম থেকে আবুল হোসেন মিটারগুলো নিয়ে যাচ্ছিলেন। এসময় অফিসের অন্যান্যরা দেখে ফেলে তাকে আটক করেন। পরে ওই বিষয়টি অফিস জুড়ে জানাজানি হলে ৪২ টি মিটার অফিসের একটি কক্ষে রাখা হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩লাখ টাকা।
এ ব্যাপারে একজন লাইনম্যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ছাতক বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে পৃথক লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এসব চুরি,জালিয়াতির ঘটনায় ধাঁমাচাঁপা দিতে তৎপর রয়েছে নির্বাহী প্রকৌশলী। সচল মিটারকে অচল দেখিয়ে ওই গ্রাহকের নামে ফিক্সড বিল দেয়া শুরু হয়। কয়েকমাস মোটা অংকের টাকার ফিক্সড বিল দেয়ার পর মিটার পরিবর্তন করে বিভিন্ন গ্রাহকের বিল দেয়া পুরানো হাজার হাজার ইউনিটের টাকা হজম করেন। এভাবেই চলছে তার ব্যাপক ঘুষ বানিজ্য।
অনেক ক্ষেত্রেই নিরাপদ খাম্বার পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে বাঁশের খুটি, সুপারি ও কদম গাছে। ফলে ঝুঁকির মধ্যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন ১৩ টি ইউনিয়নের ২০ হাজার গ্রাহক। এসব বিদ্যুৎ লাইনে দীর্ঘদিনে পুরাতন লাইন ঝড় বৃষ্টিতে পড়ে শিক্ষক ,শিশু, যুবক, কৃষক, মাঝি সহ ১২ ব্যক্তি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত বরন ও তিন শতাধিক ছাগল গরু মহিষ বিদুৎ স্পৃষ্ট খুটিঁ থেকে কারেন্ট মাটিতে নেমে যাবার ফলে এসব ঘটনা ঘটে। বিদুৎ লাইনের একাধিক ঘটনা ঘটলে ও তাদের খোজ খবর কেউ নিচ্ছেন না। ৩০বছরের পুরানো ঝুকিঁপুন বিদুৎ লাইনের পুনসংস্কারের নামে লাখ লাখ টাকা দাবি করে আসছে।
এ ব্যাপারে উপ-সহকারি প্রকৌশলী আবুল হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। অবশেষে মিটার সরানোর এ ঘটনা টি তিনি নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে স্বীকার করেছে।
ছাতক বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন সর্দার তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ স্বীকার করে বলেন ৪২টি মিটার সরিয়ে নেয়ার এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ করছেন গ্রাহকরা।
Sharing is caring!


………………………..

Design and developed by best-bd