এক সময়ের শিকর মাটি বিক্রেতা নুরুল টোকেন বাণিজ্যে কোটিপতি!

প্রকাশিত: ১:৪৫ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২৬, ২০২১

এক সময়ের শিকর মাটি বিক্রেতা নুরুল টোকেন বাণিজ্যে কোটিপতি!

Manual3 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সিলেটে ‘কঠোর লকডাউন’র মধ্যে বন্ধ হয়নি নুরুল হক উরফে টোকেন নুরুলের টোকেন বাণিজ্য। সরকারি সকল নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে জেলার জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট সড়কে প্রায় তিন হাজার অবৈধ রেজিস্ট্রেশন বিহীন (নম্বরবিহীন) সিএনজি চালিত অটোরিকশা নুরুলের বিশেষ টোকেনের মাধ্যমে দেদারছে চলাচল করছে।

Manual4 Ad Code

টোকেন নুরুলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলেও বন্ধ হচ্ছে না এসব নম্বরবিহীন অবৈধ সিএনজি চালিত অটোরিকশাগুলো।

এদিকে, এনিয়ে অনুসন্ধানমুলক সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে টোকেন নুরুলের হুমকির শিকার হন সাংবাদিক মোঃ রায়হান হোসেন মান্না। এমনকি মিথ্যা মামলা ও প্রাণ নাশের হুমকি দেয় নুরুল। এমন হুমকিতে সাংবাদিক নিজের নিরাপত্তা চেয়ে গত ২০ এপ্রিল শাহপরাণ (রহঃ) থানায় সাধারণ ডায়রী করেন। যাহার ডায়রী নং-৯৪৫।

সাধারণ ডায়রী সুত্রে জানা গেছে, চলমান কঠোর লকডাউনের গত ১৯ এপ্রিল বটেশ্বর সদর সীমান্তে সিএনজি চালিত অটোরিকশাসহ সকল ধরণের যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন এসএমপির ট্রাফিক পুলিশ। ওই সময় জৈন্তাপুর থানার বালিপাড়া গ্রামের আব্দুল মনাফ উরফে গাছ মনাফের ছেলে তামাবিল মহাসড়কের টোকেন বাণিজ্যের মূল হোতা নুরুল হকের টোকেনে চালিত কয়েকটি নম্বরবিহীন সিএনজি আটক করা হয়। অভিযান চলাকালীন সময়ে সাংবাদিক মান্না ও সুরমা মেইল ডটকম অনলাইন নিউজ পোর্টালের সংবাদ কর্মী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহের জন্য দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্টদের সাথে আলাপ করেন। ওই সময়ে আটককৃত নম্বরবিহীন সিএনজি গাড়িগুলো ছাড়িয়ে নিতে ঘটনা স্থলে উপস্থিত হয় টোকেন নুরুল। এক পর্যায়ে টোকেন নুরুল সাংবাদিকদের কর্তব্য কাজে বাঁধা প্রধান করে। এমনকি ডিউটিরত পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকদের সামনে সাংবাদিককে মারার জন্য ধাওয়া করে। এরপর ডিউটিরত পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকদের একান্ত সহযোগিতায় সাংবাদিক মান্না টোকেন নুরুল হকের হাত থেকে রক্ষা পান। ক্ষিপ্ত টোকেন নুরুল ওই সাংবাদিককে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা ও প্রাণনাশের হুমকি প্রধান করে শাসিয়ে যায়। যাহার ভিডিও ডকুমেন্টস সাংবাদিকদের কাছে সংগ্রহকৃত আছে।

ডায়রী সুত্রে আরও জানা গেছে, বিগত দিনে সাংবাদিক মোঃ রায়হান হোসেন মান্না এই টোকেন সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে অনলাইন নিউজ পোর্টালসহ স্থানীয় দৈনিক ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় একাধিক সংবাদ প্রকাশ করে। এরই জের ধরে সাংবাদিককে বিগত দিনে এরকম প্রাণে মারার হুমকি-ধামকি প্রধান করে। গত বছরের ১ নভেম্বর সিলেট জেলা পুলিশ সুপার বরাবরে ওই টোকেন চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। টোকেন নুরুল হকের এহেন হুমকিতে পরিবারসহ তার ক্ষতিসহ প্রাণনাশের আশাঙ্খা রয়েছে।

Manual3 Ad Code

স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, টোকেন নুরুলের বাবা জীবিকা নির্বাহ করতেন সিলেটের পুরাতন ব্রিজের নিচ থেকে শিকর মাটি কিনে এনে তার নিজ গ্রাম ও আশ-পাশের গ্রামের বাড়িতে হেটে প্রতিদিন শিকর মাটি বিক্রি করতেন। আর তার পুত্র এই সেই নুরুল (টোকন নুরুল) আজ থেকে ৭ বছর আগে হরিপুরে পলিথিন বেগ বিক্রি করতো স্থানীয় মাছ বাজারে। এক সময় হেলপার হয়ে মটর ডিপার্টমেন্টে যুক্ত হয় নুরুল। পরে হয়ে ওঠে মটর চালক। এরই এক পর্যায়ে নম্বরবিহীন সিএনজি গাড়িতে অবৈধ টোকেন বিক্রি করে বনে গেছে রাতারাতি কোটিপতি।

Manual7 Ad Code

অভিযোগ রয়েছে অবৈধ এই নম্বরবিহীন সিএনজিতে টোকন বাণিজ্যের টাকা দিয়ে প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে সড়কে চলছে অবৈধ অটোরিকশা। শুধু তাই নয়, টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা হয় কিছু হলুদ সাংবাদিকদের। আর নুরুল নিজেকে পরিচয় দেন শ্রমিক নেতা হিসেবে।

সূত্রে জানা যায়, সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুরে বসে বসে তিন সড়কের সবগুলো সিএনজি অটোরিকশায় টোকেন লাগিয়ে মাসে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। আর প্রতি বছর রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

Manual6 Ad Code

জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলার প্রশাসনের গাফিলতির কারণে বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ যান চলাচল। বন্ধ হচ্ছে না সড়ক দূঘর্টনা ও লাশের মিছিল। শ্রমিক নেতারা টোকেনের টাকার একটি বড় অংশ পুলিশের পকেটে যাওয়ার দাবি করলেও পুলিশ এসব অস্বীকার করছে।

সিএনজি মালিকদের সুত্রে জানা গেছে, অবৈধ যানবাহন রোধে দায়িত্বরত প্রশাসনিক কর্তা-ব্যক্তি, চাঁদাবাজ ও টুকেনবাজরা এ রোডে অবৈধ যানবাহন চলাচলের সুযোগ করে দিতে টোকেন চালু করেছে সিএনজি চালক শ্রমিক নামদারি জৈন্তাপুর উপজেলার ৫নং ফতেপুর (হরিপুর) ইউনিয়নের হরিপুর এলাকাধীন বালিপাড়া গ্রামের চাঁদাবাজ নূরুল হক (মেম্বার)। বিনিময়ে প্রতি মাসে অবৈধ যানবাহন থেকে কামাই করছেন লাখ-লাখ টাকা এবং তার সাথে এক শ্রেণির পুলিশ-সাংবাদিক পকেটও ভারি হচ্ছে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সরকার, চালক ও মালিকরা।

সরেজমিন উঠে এসেছে, সিলেট-তামাবিল রোডে বৈধ যানবাহনের তিনগুন বেশি অবৈধ যানবাহন। এগুলোর মধ্যে সিএনজি অটোরিকশার সংখ্যা প্রায় দেড় থেকে ৩ হাজার। বাদ বাকি অবৈধ লেগুনা ইমা, ও পিকাপ। এসব যানবাহনের মধ্যে অধিকাংশের রেজিস্ট্রেশন পর্যন্ত নেই, নেই চালকদের ড্রাইভিং লইসেন্সও। শুধুমাত্র ‘পরিচিতি টোকেনই’ এসব যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন ও চালকদের মূল লাইসেন্স।

শ্রমিক ইউনিয়নের সুত্র মতে, সিলেটের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জাফলংসহ ৩ উপজেলায় প্রায় সাড়ে দুই থেকে ৩ হাজার সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করে। এর মধ্যে প্রায় ২ হাজার সিএনজি অটোরিকশা নিবন্ধনহীন। ২০১৫ সালের ১ আগস্ট থেকে মহাসড়কে সব ধরনের তিন চাকার যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। এরপর থেকে অবৈধ টোকেন বাণিজ্যে গড়ে ওঠে টোকেন নুরুলের সিন্ডিকেট। তার বিরুদ্ধে অনেক সংবাদ প্রকাশ হলেও বন্ধ হচ্ছে না নম্বরবিহীন অবৈধ সিএনজি চালিত অটোরিকশা। তার খুঁটির জোড় কোথায় জানতে চায় বৈধ শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..