জাফলংয়ে অস্বস্তিকর পরিবেশ, পর্যটকরা হতাশ : নিরব কর্তৃপক্ষ

প্রকাশিত: ৮:৪২ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩০, ২০২১

জাফলংয়ে অস্বস্তিকর পরিবেশ, পর্যটকরা হতাশ : নিরব কর্তৃপক্ষ

Manual8 Ad Code

গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি :: প্রকৃতিকন্যা হিসাবে সারাদেশে এক নামে পরিচিত সিলেটের জাফলং। খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জাফলং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপলীলাভূমি। পিয়াইন নদীর তীরে স্তরে স্তরে বিছানো পাথরের স্তূপ জাফলংকে করেছে আকর্ষণীয়। সীমান্তের ওপারে ইনডিয়ান পাহাড় টিলা, ডাউকি পাহাড় থেকে অবিরাম ধারায় প্রবাহমান জলপ্রপাত, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ, পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ হিমেলপানি, উঁচু পাহাড়ে গহিন অরণ্য ও শুনশান নীরবতার কারণে এলাকাটি পর্যটকদেও দারুণভাবে মোহাবিষ্ট করে। এসব দৃশ্যপট দেখতে প্রতিদিনই দেশী-বিদেশী পর্যটকরা ছুটে আসেন এখানে। প্রকৃতিকন্যা ছাড়াও জাফলং বিউটি স্পট, পিকনিক স্পট, সৌন্দর্যের রাণী-এসব নামেও পর্যটকদের কাছে ব্যাপক পরিচিত। ভ্রমণপিয়াসীদের কাছে জাফলং এর আকর্ষণই যেন আলাদা। সিলেট ভ্রমণে এসে জাফলং না গেলে ভ্রমণই যেন অপূর্ণ থেকে যায়।

Manual4 Ad Code

সেই জাফলং এখন সারি সারি কারখানায় পাথর ভাঙার বিকট শব্দ। পাথর ভাঙার ধুলায় বাতাস ভারী। ভাঙাচোরা সড়কে কেবলই ধুলার রাজত্ব। নদীতে চলছে বালু আর অপরিকল্পিতভাবে পাথর তোলার উৎসব। পাথর ও বালু ব্যবসায়ীদের এসব কর্মকাণ্ডে জাফলংয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এখন প্রায় মুমূর্ষু অবস্থায় পৌঁছেছে। ভাঙাচোরা ও ধুলাবালির সড়কে দিনের বেলাতেও খুব সাবধানে চলতে হয় চালকদের।

Manual3 Ad Code

সব মিলিয়ে পর্যটকদের বিমুখ করতে যতগুলো উপাদান দরকার, জাফলংয়ে তার সব কটিই বেশি মাত্রায় আছে। সড়কের ভোগান্তি এবং বালু ও পাথর ব্যবসায়ীদের যন্ত্রণায় এই ভরা মৌসুমেও জাফলংয়ে পর্যটকরা হতাশ।

Manual8 Ad Code

জাফলংয়ের মূল পর্যটন কেন্দ্রের প্রায় এক-দেড় কিলোমিটার আগে মামার বাজার ও সোনা টিল্লা। সেখান থেকে সড়কের পাশে একের পর এক পাথর ভাঙার যন্ত্র বসিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। জাফলং জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি পর্যন্ত প্রায় ৪০-৫০টি যন্ত্রে বিরামহীনভাবে চলছে পাথর ভাঙার কাজ। কান ফাটানো শব্দ আর ধুলাবালি মিশে পুরো পরিবেশ একাকার। ফলে জাফলংয়ের মূল আকর্ষণ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের সবুজ পাহাড় পরিষ্কার দেখাই যায় না। সোনা টিল্লা এলাকায় যে ক্রাশার মেশিন বসানো হয়েছে সবগুলাই বন বিভাগের জমির উপর। কিন্তু রহস্যজনক কারনে স্থানীয় বন কর্মকর্তা এসকল বিষয়ে কোন ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না।

জাফলংয়ের জিরো পয়েন্টে হাফিজুর রহমান নামের এক তরুণ পর্যটক বললেন, ‘অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল জাফলংয়ে আসব। কিন্তু এসে খুবই হতাশ হলাম। মনে হচ্ছে পর্যটকদের জন্য এখানে কিছু নাই। সবই পাথর ব্যবসায়ীরা দখল করে রেখেছেন। ধুলাবালিতে মাখামাখি হয়ে গেছি।’ তাঁর কথায় সায় দিলেন সঙ্গের পাঁচজন। জাফলংয়ের প্রতি পর্যটকেরা প্রায় বিমুখ।

জাফলং সাব জোনের ইন্সপেক্টর (ওসি) রতন শেখ জানান একজন বিশেষজ্ঞের কাছে জানতে চাই, পাথরের ডাস্ট (পাথরের ধুলা) নিঃশ্বাসে এবং চোঁখে গেলে কি ক্ষতি হতে পারে? তিনি বলেন, মারাত্মক পরিবেশ দূষণে জাফলং, পাথরের ধুলায় সয়লাব জাফলং। শব্দ দূষণে বধির হওয়া সহ পাথরের ডাস্ট, নিঃস্বাসে গেলে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, কিডনিজনিত সমস্যা এবং বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির সম্ভাবনা বিদ্যমান। এই ধুলো চোখে গেলে মারাত্মক ক্ষতির সম্ভবনা সহ স্থায়ী অন্ধ হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। ক্রাশার মিলের মালিক ও ব্যবসায়ীরা পানি মারার কথা থাকলেও তারা পানি দিচ্ছে না, যার ফলে বাতাসের সাথে উড়ে উড়ে আসছে পাথর ভাঙ্গার ডাষ্ট। দূষিত হচেছ পরিবেশ, বিমুখ হচ্ছেন পর্যটকরা, অস্বস্তিতে আছে সাধারণ মানুষ। বিষয়টা নিয়ে তিনি তার নিজস্ব ফেসবুক একাউন্টে একটা লাইভও দিয়েছেন।

Manual5 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..