শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে ৩০ মার্চ

প্রকাশিত: ১২:১৭ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২১

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে ৩০ মার্চ

Manual6 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : আগামী ৩০ মার্চ থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

করোনাভাইরাসের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শুরু হয়ে চলে টানা দুই ঘণ্টা।

সভা শেষে রাত সাড়ে ৮টার দিকে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান।

সভার সিদ্ধান্ত ‍তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‌‘প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আমরা ইনশাআল্লাহ আগামী মার্চ মাসের ৩০ তারিখে খুলে দেব। আগেও যেভাবে বলেছি, পর্যায়ক্রমে প্রথমেই প্রাথমিকে হয়ত পঞ্চম শ্রেণিকে প্রতিদিন আনব। আমরা দশম ও দ্বাদশ শ্রেণিকে প্রতিদিন আনব। বাকি ক্লাসগুলো হয়তো প্রথমে সপ্তাহে একদিন আসবে, কয়েকদিন পর থেকে তারা সপ্তাহে দুদিন আসবে। পর্যায়ক্রমে আমরা স্বাভাবিকের দিকে নিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।’

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘সিক্স, সেভেন ও এইট (ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণি) গোড়ার দিকে সপ্তাহে একদিন একদিন করে আসবে। তারপর অবস্থা বিবেচনায় আমরা সেটাকে বাড়াব। যদি দেখা যায় টিকার কারণে দেশে একেবারেই কোনো সংক্রমণের ঘটনা ঘটছে না, তাহলে তো আমরা ২-৩ সপ্তাহ পর থেকেই একেবারে স্বাভাবিক ক্লাসে চলে যেতে পারি। আর যদি দেখা যায় এখনও সংক্রমণের ঝুঁকি রয়ে গেছে, তাহলে তখন আমরা স্ট্যাগার করে করে করা, যতদিন প্রয়োজন মনে করব আমরা করে যাব।’

‘আর একাদশ ও নবম তাদের আমরা দ্বাদশ ও দশমের মতো প্রতিদিন আনব না। কিন্তু গোড়াতেই হয়ত দুদিন চেষ্টা করব। তারপর হয়ত আরেকটু বাড়ানোর চেষ্টা করব। কারণ ওরা এ বছর পরীক্ষা না দিলেও আগামী বছর দেবে। কাজেই ওদের অন্যদের চেয়ে বেশি সময় দিতে হবে।’

দীপু মনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রাক-প্রাথমিককে এখন আনব না। সেটি আমরা অবস্থা বিবেচনা করে পরে কখন আনব, সেটি পরে সিদ্ধান্ত নেব।’

Manual7 Ad Code

তিনি বলেন, ‘এই সময়ের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে অন্যান্য যে প্রস্তুতি সেই প্রস্তুতিগুলো আমাদের নেয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার আগে শিক্ষক ও কর্মচারীদের করোনা টিকা দেয়ার যে বিষয়টি, সমাপ্ত করতে পারব।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘কোথাও কোথাও যদি মেরামত বা সংস্কারের দরকার হয়। আপনারা জানেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে আমরা বলেছি ১৭ মে যে হলগুলো খুলে দেয়া হবে; এর আগেই সংস্কার কাজ, মেরামতের কাজ যা কিছু প্রয়োজন হবে সেগুলো করবো। আর প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে যে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর, পিডব্লিউডি- এদের সকলের মাধ্যমে মেরামতের কাজগুলো সম্পন্ন করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে সব জায়গায় স্বাস্থ্যবিধিগুলো সঠিকভাবে মানা হচ্ছে কি-না, যে নোটিশগুলো থাকা দরকার সেগুলো প্রদর্শিত হচ্ছে কি-না, সেগুলো তারা দেখবেন। আর আমাদের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যারা মাঠ পর্যায়ে আছেন তারাও এই বিষয়গুলো মনিটর করবেন।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘২০২১ সালে যারা এসএসসি দেবেন তাদের জন্য ৬০ কর্মবিসের সিলেবাস ও এইচএসসির জন্য ৮০ কর্মদিবসের সিলেবাস প্রণয়ন করেছি। তাই তাদের সেই ৬০ ও ৮০ কর্মদিবস ক্লাস করানোর জন্য চেষ্টা করব তাদের ক্লাসে ছয় দিন আনতে।’

‘স্কুল-কলেজ খোলার ২ মাসের মধ্যে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার পরিকল্পনা আছে- তখন বলেছিলাম যদি এখন খোলা সম্ভব হয়…যখনই খুলি আমাদের ৬০ কর্মদিবস। আমরা মার্চের শেষে খুললে এর পর থেকে ৬০ কর্মদিবস তাদের ক্লাস করিয়ে, পরীক্ষার আগে আরও সপ্তাহ দুয়েক সময় আরও দিয়ে তাদের পরীক্ষাটা নেব।’

তিনি বলেন, ‘মার্চের শেষে খুললে এরপর ৬০ কর্মদিবস এরপর ঈদের ছুটি আছে। অন্যান্য ছুটি আছে, সাপ্তাহিক ছুটি আছে। সবকিছু মিলিয়ে হয়ত পরীক্ষাটা জুলাই মাসে চলে যেতে পারে। হিসেবটা সেভাবে হবে।’

Manual1 Ad Code

তবে কী এবার পুরো রোজায় ছুটি থাকবে না, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘রোজার ছুটি পুরো রোজায় থাকবে না। কারণ একটা বছর তো বন্ধই ছিল। আমরা ছোট বেলায় দেখেছি, রোজার সময় কিন্তু আমরা ক্লাস করতাম, শুধু ঈদের সময় আমাদের একটা ছুটি থাকত। এবারও আমরা সেরকমই করব। ছেলেমেয়েরাও এক বছর বাড়িয়ে থাকতে থাকতে একটু হাঁপিয়ে উঠেছে। আমার মনে হয় না রোজার সময় ওদের স্কুলে আসতে আপত্তি থাকবে। শুধু ঈদের সময় কয়েক দিন ছুটি থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে টিকার বিষয়ে সারা দিচ্ছে। টিকার সংখ্যা যত বাড়বে থাকবে আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তত দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে যাব।’

Manual7 Ad Code

শিক্ষকদের দ্রুত টিকা আওতায় আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে শিক্ষকদের সবাইকে কী টিকার আওতায় আনা যাবে কিনা- এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশা করছি। ইতোমধ্যে প্রাথমিকের দেড় লাখ শিক্ষক টিকা নিয়ে নিয়েছেন। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সঙ্গে শিক্ষা বিভাগ যৌথভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষকদের দ্রুত রেজিস্ট্রেশন ও টিকা নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার চেষ্টা করব।’

এ বিষয়ে সহযোগিতা দিতে জন প্রতিনিধিদের সহযোগিতাও চেয়ে চিঠি লেখা হচ্ছে বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।

আগামী ২৪ মে বিশ্ববিদ্যালয় খুলছে, শিক্ষার্থীদের টিকা নিয়ে হলে উঠতে হবে। এ বিষয়টি নিশ্চিত করা যাকে কিনা। কিংবা কত শিক্ষার্থীর টিকা লাগবে সেই ডাটাবেজ আছে কিনা- এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আমাদের ২২০টি আবাসিক হল আছে, এর আবাসিক ছাত্র সংখ্যা প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার। এই আবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকা দিতে ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। আমরা সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউজিসির মাধ্যমে টিকা পাঠিয়েছি গত বুধবার। তারা যাকে সকল আবাসিক শিক্ষার্থীর নাম, ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বারসহ আমাদের কাছে টিকার জন্য তালিকা পাঠাবেন। সেটা আমরা স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে পাঠিয়ে দেব।’

‘আবসিক শিক্ষার্থীরা দেশের যেখানেই থাকবেন। সেখান থেকেই রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে এবং নিকটস্থ টিকাদান কেন্দ্র থেকে তারা টিকা নিতে পারবেন। আমরা আশা করছি ১৭ মে-র আগেই আবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকা দিতে পারব ইনশাআল্লাহ।’

শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন অংশ নেন।

এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নান, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. কামাল হোসেন, পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।

Manual1 Ad Code

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি ধাপে ধাপে বাড়িয়ে আগামীকাল ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করা হয়েছিল।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া যায় কিনা- সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বসে সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গত ২২ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভা বৈঠকে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার কথা জানিয়ে ওইদিন প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘সরকার খোলার (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান) পরিবেশটা প্রিভিউ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা পাঁচ-ছয় দিনের মধ্যে একটা মিটিংয়ে বসব। এটা আন্তঃমন্ত্রণালয় মিটিং হবে।’

এরই মধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হলে ফেরার আন্দোলন শুরু করেন। কোনো কোনো স্থানে শিক্ষার্থীদের তালা ভেঙে হলে প্রবেশের ঘটনাও ঘটে। এ পরিস্থিতিতে ২২ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা দেন, আগামী ২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠদান কার্যক্রম শুরু হবে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

February 2021
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728  

সর্বশেষ খবর

………………………..