যুবলীগের আনিসের দুর্নীতি : তিন বছরে ১২৯ কোটি টাকা লেনদেন

প্রকাশিত: ২:০৪ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৬, ২০২০

যুবলীগের আনিসের দুর্নীতি : তিন বছরে ১২৯ কোটি টাকা লেনদেন

Manual3 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : দুর্নীতিতে যেন রূপকথার নায়ককেও হার মানিয়েছেন যুবলীগের সাবেক দফতর সম্পাদক কাজী আনিস। এক সময়ের এ গার্মেন্টকর্মীর ভাগ্যে অস্বাভাবিক পরিবর্তন আসে ২০১০ সালের পর থেকে। যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুকের ‘ডানহাত’ হয়ে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যান। ক্যাসিনো কারবার, চাঁদাবাজিসহ নানা কায়দায় প্রায় শতকোটি টাকা উপার্জন করেন। ৩ বছরেই বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবে তার লেনদেন হয় ১২৯ কোটি টাকা।

Manual7 Ad Code

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে উঠে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। কাজী আনিস ও তার স্ত্রী সুমী রহমানের দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করছেন দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। তদন্তে সুমী রহমানের নামে এমন একটি মুরগির খামারের তথ্য মিলেছে যেখানে নাকি মুরগি ‘সোনার ডিম’ পাড়ে। সেখানে পাঁচ লাখ টাকায় খামার করে ১ বছরেই দেড় কোটি টাকা লাভ করেন।

Manual3 Ad Code

এছাড়া দুদকের তদন্তে কাজী আনিসুর রহমানের শতকোটি টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। তার গ্রামের বাড়ি বোয়ালিয়া এবং মুকসুদপুরে ৩১টি দলিলে ১০ কোটি টাকার দলিলমূল্যে জমির সন্ধান মিলেছে। এ সম্পদ জব্দও করা হয়েছে। যার বর্তমান বাজারমূল্য ৪০ কোটি টাকার বেশি।

Manual1 Ad Code

আনিসের ভাগ্যে ক্যাসিনো ও যুবলীগের দফতর সম্পাদকের পদটিই ছিল ‘জাদুরকাঠি’। যে আনিস মাত্র পাঁচ হাজার টাকা মাসিক বেতনে গার্মেন্টে চাকরি করতেন, তিনিই মাত্র ৪ বছরের ব্যবধানে নিজ গ্রামে পুুকুর ভরাট করে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে দৃষ্টিনন্দন রাজকীয় বাড়ি নির্মাণ করছেন। বাড়ির ভেতরে টাইলস বিদেশ থেকে কিনে এনেছেন আর ফার্নিচার সব ঢাকা থেকে। এরকম দৃষ্টিনন্দন বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে আর নেই।

কাজী আনিসের বাবা সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন ১৯৯২ সালে। এরপর থেকে পুরোপুরি বেকার এবং বয়সের ভারে ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারেন না। অথচ বাবা ফায়েক কাজীর নামে কোটি টাকা খরচ করে মুকসুদপুরের দাসেরহাটে পেট্রল পাম্প ক্রয় করেন আনিস। বছর দুই পর ফায়েক কাজী আবার কাজী আনিসকে সেই পাম্প হেবা করে দেন। এ ব্যাপারে ফায়েক কাজীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, টাকা আনিসেরই ছিল। তাই তাকে হেবা দিয়েছি, দোষ কোথায়।

আনিস ধানমণ্ডিতে ১৫/এ যে ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন তা ৪ হাজার ৩০০ বর্গফুটের এক রাজকীয় প্রাসাদ। যেটি তিনি ৫ কোটি টাকা মূল্যে ক্রয় করেন। চলাফেরা করতেন রাজার মতো। দামি পোশাক আর রাজকীয় গাড়ি ছিল তার শখের বিষয়। ধানমণ্ডি ২/এ-তে জেমকন সিটির কাছ থেকে তিনি ১০ কোটি টাকা মূল্যে ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট ক্রয় করেন। এটি ৬ হাজার ২০০ বর্গফুটের। এটি যেন এক ফুটবল খেলার মাঠ।

কেরানীগঞ্জে দলিলে জমি ক্রয়ের রেকর্ড পাওয়ার পর তা তদন্তকারী কর্মকর্তা জব্দ করেন। যার বর্তমান বাজার মূল্য ১৩ কোটি টাকা। ঢাকার ওয়ারীতে কয়েকটি ফ্ল্যাট রয়েছে তার। যার রেজিস্ট্রি মূল্য থেকে প্রকৃত মূল্য কয়েক কোটি টাকা বেশি। যা তদন্তকালে প্রমাণিত হয়েছে। কাজী আনিসুর রহমান নিউ এলিফ্যান্ট রোডে মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারে তিনটি দোকান এবং সামনের অংশে ১ হাজার ৩০০ বর্গফুটের জায়গা ক্রয় করেন। যার বাজারমূল্য ৫ কোটি টাকা।

ঢাকা জেলা গুলশান থানাধীন গুলশান উত্তর বাণিজ্যিক এলাকায় হোল্ডিং নং-২৮, ল্যান্ডভিউ কমার্শিয়াল সেন্টার ভবনের দ্বিতীয় তলায় তিনটি সুপরিসর দোকান রয়েছে তার। যার বাজারমূল্য ৪ কোটি টাকা। উত্তরায় একটি দোকান আছে যার বাজারমূল্য ১ কোটি টাকা।

Manual3 Ad Code

তদন্তকালে কাজী আনিসুর রহমানের অর্ধশত ব্যাংক হিসাব পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। সেই হিসাবগুলোয় কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়। শুধু প্রাইম ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ৩টি হিসাবেই ২০১৮ থেকে ২০১৯ সালে লেনদেন হয়েছে ১২৯ কোটির টাকারও বেশি। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে তিনি ওই হিসাব থেকে টাকা সরিয়ে দেশের বাইরে পাচার করে দেন। এসব হিসাবে বর্তমানে জমা আছে ৬ কোটি টাকার মতো।

তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তার স্ত্রী সুমী রহমানের নামে ধানমণ্ডির শুক্রাবাদে বিলাসবহুল অট্টালিকা রয়েছে। যার বাজারমূল্য ৫ কোটি টাকারও বেশি। সুমী রহমান একজন গৃহিণী। তার কোনো বৈধ আয় নেই। অথচ ২০১৩ সালে হঠাৎ করে ধানমণ্ডিতে ৫ তলা বাড়ি ক্রয় করেন। বাড়ি ক্রয়ের টাকার উৎস দেখাতে সুমী রহমান ২০১৬ সালে ৫ লাখ টাকার হাঁস-মুরগির খামার করেছেন মর্মে আয়কর নথিতে উল্লেখ করেন। অবাক বিষয় হল, এই ৫ লাখ টাকার মুরগির খামারের মুরগি প্রতিদিন যেন ‘সোনার ডিম পেড়েছে’। তা না-হলে মাত্র ৫ লাখ টাকার মুরগির ফার্ম খরচ বাদ দিয়ে কীভাবে মাত্র ১০ মাসে দেড় কোটি টাকা লাভ করল-প্রশ্ন তদন্ত কর্মকর্তারও।

তদন্তকালে কাজী আনিসের স্ত্রী সুমী রহমানের ২০টির বেশি হিসাব জব্দ করা হয়েছে। এসব হিসাবে ২ কোটি টাকার বেশি এফডিআর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে দলিলমূল্যে ১১ লাখ টাকার জমি ক্রয় করেন, যার বাজারমূল্য প্রায় কোটি টাকা।

তদন্তকালে কাজী আনিসুর রহমানের সম্পদের তথ্য পেতে ৭৬ জায়গায় চিঠি দেয় দুদক। সেগুলো প্রাপ্তিসাপেক্ষে তার সহায়-সম্পদ সবকিছু জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া জব্দ করা হয় কাজী আনিস এবং সুমী রহমানের আয়কর নথি।

তারা দু’জনই বর্তমানে বিদেশে পলাতক। তদন্তকারী কর্মকর্তা তার দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডে পাচার করা অর্থের তথ্য সংগ্রহে নানা মাধ্যম থেকে চেষ্টা করছেন। এ তদন্তকাজ তদারক করছেন দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন। তিনি জানান, কাজী আনিস ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে শতকোটি টাকার সম্পদের তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। অচিরেই কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

December 2020
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

সর্বশেষ খবর

………………………..