কানাইঘাটে মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষ: পুলিশের একশনে ছত্রভঙ্গ, পুলিশ সহ আহত অর্ধশতাধিক

প্রকাশিত: ১:১৫ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১০, ২০২০

কানাইঘাটে মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষ: পুলিশের একশনে ছত্রভঙ্গ, পুলিশ সহ আহত অর্ধশতাধিক

Manual2 Ad Code

মুমিন রশিদ, কানাইঘাট :: তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল সোমবার সকাল ৮টার দিকে কানাইঘাট চতুল ও ফালজুর পরগনার কয়েকহাজার লোকজন লাঠি-সোটা নিয়ে ঘোষণা দিয়ে কানাইঘাট বাজারের দিকে আসার পথে ফাঁকা গুলি, টিয়ারগ্যাস, রাবার বুলেট ছুড়ে ও লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। পুলিশের দাওয়া খেয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যান চতুল ও ফালজুর পরগনার স্বশস্ত্র লোকজন। এতে পুলিশের দুই সদস্য সহ অন্তত অর্ধ শতাধিক লোকজন আহতের খবর পাওয়া গেছে।

Manual8 Ad Code

পুলিশ দাবী করছে চতুল-ফালজুর পরগনার লোকজন তাদের উপর হামলা করলে পুলিশ বাধ্য হয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে বেশ কিছু টিয়ারগ্যাস, রাবার বুলেট ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে এবং লাঠিচার্জ করে উশৃঙ্খল লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে নকলার ব্রীজ থেকে হকারাই পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার এলাকা সকাল সাড়ে ১১টার দিকে পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। এর আগে রবিবার গভীররাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কানাইঘাট থানা পুলিশ চতুল ও ফালজুর পরগনার বেশ কয়েকজনকে আটক করলেও গতকাল সোমবার বিকেলে তাদের মুছলেখা রেখে থানা থেকে ছেড়ে দেয়।

Manual3 Ad Code

জানা যায়, গত মঙ্গলবার কানাইঘাট বাজারের ব্যবসায়ী পৌরসভার দুর্লভপুর গ্রামের আলী আমজদের পুত্র আলী আকবর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মটরশুটির দরদাম নিয়ে বড়চতুল ইউনিয়নের লখাইরগ্রামের শফিকের পুত্র মোঃ আব্দুল্লাহর মধ্যে মারামারি হয়। তাৎক্ষণিক কানাইঘাট থানা পুলিশ ও বাজার ব্যবসায়ী সমিতির হস্তক্ষেপে ঘটনাটি সালিশে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হয়। এ তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে লখাইরগ্রামের শফিকের পুত্র আব্দুল্লার পক্ষ নিয়ে চতুল ও ফালজুর পরগনার লোকজন তাদের এলাকায় কয়েক দফা বৈঠক করেন।

এ ঘটনার জন্য তারা দুর্লভপুর গ্রামের ব্যবসায়ী আলী আকবরকে চতুল এলাকায় গিয়ে ক্ষমা চাওয়ার জন্য বলেন। তা না হলে এ দু’পরগনার লোকজন লাঠি-সোটা নিয়ে মারামারির ডাক দিবেন। তাদের এমন সিন্ধান্তে আকবরের পক্ষ নিয়ে ঘটনাটি থানায় বসে নিষ্পত্তির জন্য চাউরা, বাজেরাজ ও সাতবাঁক পরগনার মুরব্বীয়ানরা এলাকায় বৈঠক করেন। এতে পরগনা প্রথা নিয়ে এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করলে আকবর ও আব্দুল্লার মধ্যে মারামারির ঘটনাটি পরগনা ভিত্তিক না নিয়ে সামাজিকভাবে নিষ্পত্তির জন্য কানাইঘাট সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার আব্দুল করিম ও থানার অফিসার ইনচার্জ শামসুদ্দোহা পিপিএম কয়েক দফা উভয় পরগনার গণ্যমান্য মুরব্বীয়ানদের সাথে যোগাযোগ সহ থানায় তাদের নিয়ে বৈঠক করেন।

কিন্তু চতুল ও ফালজুর পরগনার লোকজন আকবরকে তাদের এলাকায় গিয়ে ক্ষমা চাওয়ার পক্ষে অনড় থাকলে নিষ্পত্তির বিষয়টি ব্যস্তে যায়। চতুল ও ফালজুর পরগনার লোকজন গত রবিবার রাতে তাদের এলাকায় মাইকিং করে দুর্লভপুর গ্রামের লোকজনের বিরুদ্ধে ঘোষণা দিয়ে মারামারির ডাক দেন। এতে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করলে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রবিবার গভীর রাত থেকে র‌্যাবের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক পুলিশ এলাকায় মোতায়েন করা হয়।

গতকাল সোমবার ভোর থেকে এই দু’পরগনার কয়েক হাজার লোকজন দেশীয় লাঠি-সোটা, ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রথমে চতুল পরগনার দরবস্ত সড়কের হকারাই এলাকায় জমায়েত হতে থাকেন। সেখানে সিলেট জেলার এডিশনাল পুলিশ সুপার উত্তর মাহবুবুর রহমান, পুলিশের একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট, কানাইঘাট সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার আব্দুল করিম সহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কানাইঘাট থানার ওসি শামসুদ্দোহা পিপিএমের নেতৃত্বে শতাধিক পুলিশ, র‌্যাব এবং জৈন্তিয়া ১৭ পরগনার মুরব্বীয়ানরা তাদের বেরিকেড দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু হাজার হাজার লোকজন লাঠি-সোটা নিয়ে পুলিশের বেরিকেড ভেঙ্গে খেলুরবন্দ ইটভাটায় অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে তারা আবারো পুলিশের বেরিকেড ভেঙ্গে কানাইঘাট বাজারের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ নকলা ব্রীজের সামনে অবস্থান করে চতুল ও ফালজুর পরগনার লোকজনদের সরে যাওয়ার আহ্বান করেন।

পুলিশের দাবী তখন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মিছিলকারীরা পুলিশের উপর হামলা চালালে পুলিশ বাধ্য হয়ে ফাঁকা গুলি, টিয়ারগ্যাস, রাবার বুলেট ছুড়ে এবং লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে পুলিশ কত রাউন্ড ফাকা গুলি, টিয়ারগ্যাস, রাবার বুলেট ছুড়েছে তা থানা পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো জানানো হয়নি।

Manual8 Ad Code

এডিশনাল পুলিশ সুপার উত্তর মাহবুবুর রহমান বলেন, ৩০ রাউন্ড গুলি সহ একটি ম্যাগজিন পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে তারা নিয়ে গেছে। ম্যাগজিন ও গুলি দ্রুত ফেরত দেয়ার জন্য চতুল ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন ও সাবেক চেয়ারম্যান মুবশি^র আলী চাচাইকে নির্দেশ দেন তিনি।

Manual1 Ad Code

এদিকে এলাকায় এ নিয়ে যাতে করে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা ও মারামারির ঘটনা না ঘটে সেজন্য বিকেল ৩টায় সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম ও সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন পিপিএম কানাইঘাটে এসে উপজেলা সম্মেলন কক্ষে জনপ্রতিনিধি, জৈন্তিয়া ১৭ পরগণার সালিশ কমিটির নেতৃবৃন্দ সহ বিভিন্ন পরগণার মুরব্বীয়ানদের নিয়ে জরুরী বৈঠকে বসেন। বৈঠকে এ নিয়ে কোন পক্ষ এলাকায় পুণরায় অশান্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে কঠোর ভাবে দমন করা হবে বলে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার হুসিয়ার উচ্চারণ করেন। এ ঘটনাটি নিষ্পত্তির জন্য শীঘ্রই জৈন্তাপুর উপজেলার রাজবাড়িতে ১৭ পরগনা সালিশ কমিটির নেতৃবৃন্দ উভয় পক্ষের মুরব্বীয়ানদের নিয়ে সামাজিকভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে দেবেন বলে প্রশাসনকে আশ^স্থ করেন।

এ সময় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মুমিন চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত) সুমী আক্তার, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম, জৈন্তাপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, ১৭ পরগনার সালিশ সমন্বয় কমিটির সভাপতি আবুল মওলা চৌধুরী, আওয়ামীলীগ নেতা জামাল উদ্দিন, বড়চতুল ইউপি চেয়ারম্যান মাও. আবুল হোসেন, সাবেক চেয়ারম্যান মুবশি^র আলী, লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউপি চেয়ারম্যান জেমস্ লিও ফারগুসন নানকা, কানাইঘাট দিঘীরপাড় পূর্ব ইউপি চেয়ারম্যান আলী হোসেন কাজল, জৈন্তাপুরের দরবস্ত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাহারুল আলম, চারিকাটা ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলম চৌধুরী তোফায়েল, সাংবাদিক মুজিবুর রহমান ডালিম সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
এ ব্যাপারে কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ শামসুদ্দোহা পিপিএম বলেন, লাঠি-সোটা নিয়ে মিছিলকারীরা আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্ন ঘটানোর পায়তারা করলেও টিয়ারগ্যাস, ফাঁকা গুলি, রাবার বুলেট ও লাঠিচার্জ করে পুলিশ তাদের কঠোরভাবে প্রতিরোধ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

November 2020
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..