২০ দিন ধরে বন্ধ চা-বাগানের কার্যক্রম : বিপাকে সহস্রাধিক শ্রমিক

প্রকাশিত: ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২৮, ২০২০

২০ দিন ধরে বন্ধ চা-বাগানের কার্যক্রম : বিপাকে সহস্রাধিক শ্রমিক

Manual6 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : ২০ দিন ধরে বন্ধ রেমা চা বাগানের কার্যক্রম, বিপাকে সহস্রাধিক শ্রমিক ২০ দিন ধরে বন্ধ রেমা চা বাগানের কার্যক্রম, বিপাকে সহস্রাধিক শ্রমিক
একটি অপ্রীতিকর ঘটনার জের ধরে ২০ দিন ধরে বন্ধ আছে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার রেমা চা বাগান। এতে বিপাকে পড়েছেন ওই বাগানের সহস্রাধিক শ্রমিক। দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করা এ শ্রমিকরা দীর্ঘদিন বাগান বন্ধ থাকায় অনেকটা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। শ্রমিকদের সাহায্যে গতকাল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বাগানে তিন টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

বাগান কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, শ্রমিকরা অন্যায়ভাবে বাগানের ব্যবস্থাপক ও উপ-ব্যবস্থাপককে মারধর করেছে। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেয়ায় তারা অঘোষিত কর্মবিরতি পালন করছে। এতে বাগানের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

Manual4 Ad Code

তবে শ্রমিকদের অভিযোগ, বাগান ব্যবস্থাপকের সঙ্গে তর্কাতর্কির জের ধরে মালিকপক্ষ ৬ মার্চ থেকে বাগানের উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। এতে ২০ দিন ধরে বেকার হয়ে আছে সব শ্রমিক। এ ব্যাপারে সমঝোতার জন্য একাধিকবার প্রস্তাব দেয়া হলেও মালিকপক্ষ রাজি হচ্ছে না।

Manual8 Ad Code

লংকা ভ্যালির অন্তর্ভুক্ত রেমা চা বাগানে স্থায়ী শ্রমিক রয়েছেন ৩৮৫ জন। অস্থায়ী শ্রমিক আছেন প্রায় ৬০০। তাদের পরিবারের শিশু-বৃদ্ধ মিলিয়ে বাগানে শ্রমিক পরিবারগুলোর সদস্য সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ২০০।

সম্প্রতি করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে ১০ দিনের জন্য দেশের সব সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ রয়েছে দোকানপাটও। তবে এমন পরিস্থিতিতেও চা বাগানে উৎপাদন অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। ২৫ মার্চ শ্রম অধিদপ্তরের উপপরিচালক নাহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে চা বাগানে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বর্তমান সাধারণ ছুটি প্রযোজ্য হবে না বলে উল্লেখ করা হয়। তবে এমন নির্দেশনার আগে থেকেই বন্ধ রয়েছে রেমা চা বাগানের উৎপাদন।

রেমা চা বাগানের শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি তনু মুণ্ডা বলেন, ৫ মার্চ বোনাস নিয়ে বাগান ব্যবস্থাপকের সঙ্গে কিছু শ্রমিকের ঝামেলা হয়। এরপর মালিকপক্ষ ১০-১২ জন শ্রমিকের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দেয়। একই সঙ্গে বাগানের উৎপাদনও বন্ধ করে দেয়।

তিনি বলেন, চা বাগানের শ্রমিকরা কাজ না করলে টাকা পান না। ২০ দিন ধরে কাজ বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা প্রায় অভুক্ত অবস্থায় আছেন।

তবে বাগান মালিক মঞ্জুর হোসেন খান বলেন, ৩ মার্চ বাগানের কিছু পতিত জমিতে নতুন করে চা উৎপাদনের কাজ শুরু করি। এতে শ্রমিকরা বাধা দেয় ও কাজে নিয়োজিত ট্রাক্টর ভাংচুর করে। এ ঘটনায় পরদিন আমি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি। ৫ মার্চ অভিযোগ তদন্তে বাগানে পুলিশ আসে। ৬ মার্চ শতাধিক শ্রমিক মিলে বাগানে কেন পুলিশ এল এমন প্রশ্ন করে বাগানের ব্যবস্থাপক ও উপ-ব্যবস্থাপককে মারধর করে। ব্যবস্থাপক এখনো ঢাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এরপর আমার করা সাধারণ ডায়েরি আদালতের নির্দেশে মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

মঞ্জুর হোসেন খান আরও বলেন, এখন শ্রমিকরা এ মামলা তুলে নিতে চাপ দিচ্ছে। মামলা তুলে না নেয়ায় তারা কাজে যোগ না দিয়ে অঘোষিত কর্মবিরতি পালন করছে। এখন উৎপাদন মৌসুমে বাগানের কাজ বন্ধ থাকায় আমিও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

Manual4 Ad Code

চা শ্রমিক ইউনিয়নের লস্করপুর ভ্যালি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নীপেন পাল বলেন, যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তাদের বাদ দিয়ে অন্য শ্রমিকদের কাজে যোগ দেয়ার কথা বলছে মালিকপক্ষ। কিন্তু আমরা বলেছি, আসামিরা আদালতে দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের বাদ দেয়া হবে। এর আগে তাদের বাদ দেয়া যাবে না। এতে রাজি না হয়ে মালিকপক্ষ বাগান বন্ধ রেখেছে। স্থানীয় প্রশাসন ও শ্রম অধিদপ্তর চিঠি দিয়েও বাগান চালু করতে পারছে না। তারা সমঝোতায় বসতেও রাজি হচ্ছে না।

নীপেন পাল আরও বলেন, বাগানে উৎপাদন বন্ধ রেখে মালিকপক্ষ চা বাগান ইজারা নেয়ার শর্ত ভঙ্গ করেছে। একই সঙ্গে শ্রমিকদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির শর্তও ভঙ্গ করেছে। তাই আমরা এখন এ বাগানের ইজারা বাতিলের আবেদন জানাব।

Manual6 Ad Code

এ ব্যাপারে রেমা চা বাগানের ব্যবস্থাপক দিলীপ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, বিষয়টি সমাধানের জন্য আমরা চেষ্টা করছি। শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করে বাগানে তিন টন চাল বরাদ্দ দিয়েছি।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..