লুটেরা পঙ্গপালের হানা, ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২:০৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২০

লুটেরা পঙ্গপালের হানা, ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

Manual5 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : আফ্রিকা ঘুরে এসে সম্প্রতি পাকিস্তান ও ভারতে হানা দিয়েছে পঙ্গপালেরা। তবে আতঙ্কের ব্যাপার হচ্ছে সীমান্তের কড়া নজরদারি পরোয়া না করে এবার বাংলাদেশেও অনুপ্রবেশ ঘটাতে পারে পঙ্গপালেরা। এমনটাই আশঙ্কা করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তবে সে ঝুঁকি এ বছরের চেয়ে আগামী বছর বেশি বলেই জানান তারা।

গত বছরের শেষ দিক থেকে আফ্রিকার ইথিওপিয়া, কেনিয়া ও সোমালিয়াসহ কয়েকটি দেশে আক্রমণ চালিয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করেছে পঙ্গপাল। এ বছরের শুরুতে পাকিস্তানে পঙ্গপালের আক্রমণে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর জানা যায়। পঙ্গপালের উৎপাতে দেশটিতে জারি করা হয় জরুরি অবস্থা।

এরপর ভারতের পাঞ্জাবে ঢুকে পড়ে পঙ্গপালেরা, এরপর শুরু করে তাণ্ডব। যার ব্যাপ্তি ছিল প্রায় তিন কিলোমিটার। সে প্রেক্ষাপটে পাঞ্জাবের আশেপাশের কয়েকটি রাজ্যে সতর্কতাও জারি করা হয়েছে। এরপরই বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে বাংলাদেশের কৃষি মন্ত্রণালয় এবং এর অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন সংস্থা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক এজেডএম ছাব্বির ইবনে জাহানের উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সোমবার একটি চিঠি পাঠিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পঙ্গপালের আক্রমণ সংক্রান্ত সতর্কতা এবং প্রস্তুতি রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়।

এর কারণ হিসেবে ইবনে জাহান ব্যাখ্যা করেছেন, যেহেতু পঙ্গপালের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বাতাসের উষ্ণতার গতি অনুযায়ী এরা চলাফেরা করে এবং এক জায়গার খাবার ফুরালেই নতুন জায়গার খোঁজ করে তারা, সে কারণে কৃষি অধিদপ্তরের আশংকা বাংলাদেশেও আক্রমণ হতে পারে পঙ্গপালের।

Manual5 Ad Code

তিনি জানিয়েছেন, পঙ্গপালের সম্ভাব্য আক্রমণ ঠেকানোর জন্য সরকার, জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন ফাও এর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন তারা। তবে আশার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, গত ৫৫ বছরের মধ্যে পঙ্গপালের আক্রমণ হয়নি এ অঞ্চলে।

যেহেতু এই পতঙ্গের ঝাঁক মরু এলাকা থেকে এসেছে, কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মনে করেন বাংলাদেশে আক্রমণ হলে দেশের শুষ্ক ও খরা প্রবণ এলাকায় সে ঝুঁকি বেশি থাকবে।

বিভিন্ন দেশের কৃষি বিভাগ এবং উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের কাছে ইংরেজি লোকাস্ট নামে পরিচিত এই পঙ্গপাল। বাংলায় এর নাম পতঙ্গ, এটি এক জাতের ঘাসফড়িঙ যা গ্রাম বাংলার শিশুদের মাঝে ‘সাপের ঘোড়া’ নামেও পরিচিত।

স্বভাবে কিছুটা লাজুক প্রকৃতির ইঞ্চি খানেক দৈর্ঘ্যের এই পতঙ্গ দলবদ্ধভাবে খাবারের জন্য ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে বেড়ায়। সাধারণত একেক ঝাঁকে কয়েক লাখ থেকে এক হাজার কোটি পতঙ্গ থাকতে পারে। তখন একে পঙ্গপাল বলে। পঙ্গপাল যখন ফসলের ক্ষেতে আক্রমণ করে, তখন তা একজন কৃষকের জন্য রীতিমত দুঃস্বপ্নের বিষয় হয়ে ওঠে।

একটি পূর্ণ বয়স্ক পঙ্গপাল প্রতিদিন তার ওজনের সমপরিমাণ খাদ্য খেতে পারে। যে অঞ্চলে তারা আক্রমণ করে, সেখানে খাদ্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা অন্য অঞ্চলে যায় না। উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের মতে একা থাকলে পতঙ্গ বেশ নিরীহ প্রাণী, কিন্তু দলবদ্ধ অবস্থায় এরা হয়ে ওঠে বিধ্বংসী।

Manual3 Ad Code

জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন ফাও বলছে, এক বর্গকিলোমিটার আকারের পঙ্গপাল এক সঙ্গে যে খাবার খায় তা দিয়ে ৩৫ হাজার মানুষকে এক বছর খাওয়ানো সম্ভব। একটি বড় পঙ্গপাল দিনে ১২০ মাইল পর্যন্ত জমির ফসল খেয়ে ফেলতে পারে। কেবল খাবারই খায় না তারা, একই সঙ্গে প্রজননের কাজটিও করে।

Manual1 Ad Code

গত বছরের শেষ দিকে আফ্রিকার সোমালিয়া, ইথিওপিয়া এবং কেনিয়াসহ কয়েকটি দেশে কৃষি ক্ষেতে আক্রমণ চালাচ্ছে পঙ্গপাল, যে কারণে সেসব দেশের কৃষকেরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। তবে ঐ অঞ্চলে পঙ্গপালের আক্রমণ নিয়মিত বিরতিতে হয়ে থাকে। জাতিসংঘের হিসাবে পশ্চিম আফ্রিকায় ২০০৩-০৫ সাল পর্যন্ত সময়ে ২৫০ কোটি মার্কিন ডলার সমমূল্যের ফসলের ক্ষতি করে পঙ্গপাল।

এ মাসের দশ তারিখে জাতিসংঘের ফাও একটি নির্দেশনা জারি করে, যাতে আফ্রিকা এবং দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার কয়েকটি কৃষি প্রধান দেশকে সতর্ক হবার আহ্বান জানানো হয়েছে। ঐ নির্দেশনায় বলা হয় ‘হর্ন অব আফ্রিকা’ অর্থাৎ পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় বছর খানেক ধরে পঙ্গপালের ব্যাপক বংশবিস্তার হয়।

উগান্ডা, তাঞ্জানিয়া, সৌদি আরব, ইরিত্রিয়া এবং ইয়েমেনসহ কয়েকটি দেশে পঙ্গপাল হামলা চালাতে পারে বলে সাবধান করা হয়।

এছাড়া দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান এবং ইরানকে সতর্ক করা হয়েছে, তবে ঐ তালিকায় ভারত না থাকলেও ইতিমধ্যেই দেশটির পাঞ্জাবে আক্রমণ চালিয়েছে পতঙ্গের দল।

বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক মি. জাহান বলেছেন, পঙ্গপালের উপদ্রব ঠেকাতে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকরী পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি।

তিনি বলেন, “এরা বাতাসের সঙ্গে উড়ে আসে, আকাশ পথে উড়ে আসা কোন আক্রমণ থেকে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি রক্ষার কোন উপায় এখনো আমরা জানি না। তাছাড়া এরা কোন অঞ্চল লক্ষ্য করে যাত্রা শুরু করার পর সেটা থামিয়ে দেবার কোন পদ্ধতির কথাও আমরা জানি না।” তবে, পঙ্গপালের হাত থেকে বাঁচার জন্য বেশিরভাগ সময় উড়োজাহাজে, বা বহনযোগ্য যন্ত্রের সাহায্যে কীটনাশক ছিটিয়ে এদের দমন করা হয়।

Manual3 Ad Code

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

February 2020
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
29  

সর্বশেষ খবর

………………………..