হারাম এক টাকাও খাব না: সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন

প্রকাশিত: ৫:১০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২২, ২০২০

হারাম এক টাকাও খাব না: সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন

Manual8 Ad Code

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আশুতোষ যাওয়ার পর নতুন সিভিল সার্জন হিসেবে যোগ দিয়েছেন ডা. তউহীদ আহমদ কল্লোল। যোগদানের পর থেকে নিজেকে হাসপাতাল ও পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছেন তিনি।

একই সঙ্গে সুনামগঞ্জ সরকারি হাসপাতালের দুর্নীতি বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। সরকারি হাসপাতালের সেবার মান বাড়ানোর পাশাপাশি হাসপাতালটিকে সুন্দরভাবে সাজানোর পরিকল্পনার কথা জানান ডা. কল্লোল।

Manual5 Ad Code

২১তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তউহীদ আহমদ কল্লোল। প্রথম কর্মস্থল হিসেবে সিলেটে যোগ দেন তিনি। সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন হওয়ার আগে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ছিলেন তিনি। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করেছেন কল্লোল।

সিভিল সার্জন তউহীদ আহমদ কল্লোল বলেন, সুনামগঞ্জে আসার আগেই সুনামগঞ্জ হাসপাতালের একটি দুর্নীতির তদন্তের দায়িত্বে ছিলাম আমি। কাজেই সুনামগঞ্জ হাসপাতাল সম্পর্কে আগে থেকে আমার কিছু ধারণা রয়েছে। ওই ধারণার আলোকে সুনামগঞ্জ হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবাকে নতুন করে সাজানোর কিছু পরিকল্পনা রয়েছে আমার।

তিনি বলেন, আমার পরিকল্পনাগুলো স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি; তিনভাগে ভাগ করে নিয়েছি। প্রথমে স্বল্প আকারের সমস্যাগুলো দ্রুত চিহ্নিত করে সমাধান করা হবে। এরপর মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা এবং পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্যে হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্স থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে একটি নিয়ম-শৃঙ্খলা তৈরি করে দেয়া হবে আমার মূল লক্ষ্য। সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের সংখ্যা কম। আমরা প্রতিনিয়ত চিকিৎসক বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিচ্ছি, আশা করি দ্রুত সমাধান হবে।

Manual8 Ad Code

হাসপাতাল নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, আমার প্রথম কাজ হবে সবাইকে একটা নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসা। সবাই নিয়ম মতো অফিসে আসছেন কিনা তা খতিয়ে দেখব আমি। চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তাদের পোশাক বাধ্যতামূলক করা হবে। হাসপাতালের যেসব কর্মকর্তা ব্যক্তিগত পোশাক পরে আসবেন তাকে দালাল হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। কারণ সবার পোশাক নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। কে চিকিৎসক, কে নার্স, কে কর্মকর্তা এবং কে কর্মচারী পোশাকেই নির্ধারণ হবে। চিকিৎসক ও নার্সদের অবশ্যই নেমপ্লেট ব্যবহার করতে হবে।

সিভিল সার্জন কল্লোল বলেন, আমি যেহেতু নতুন তাই এখনও অনেক জায়গায় হাত দেইনি। চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য হাসপাতালের পাশে যে কোয়ার্টার রয়েছে সেটি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। যদি বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে কিংবা কোনো কারণে রাতে জরুরি বিভাগে চিকিৎসক না থাকেন সেক্ষেত্রে আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে কোয়ার্টার থেকে চিকিৎসক ও নার্সের সহযোগিতা পাব। হাসপাতালের আশপাশের অবস্থা খুব খারাপ। ময়লা-আবর্জনায় হাসপাতালের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমি এসব দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার ব্যবস্থা নেব।

Manual7 Ad Code

‘চার কোটি টাকার সম্পদের মালিক অফিস সহকারীর স্ত্রী’ শিরোনামে জাগো নিউজে সংবাদ দেখে সিভিল সার্জন তউহীদ আহমদ কল্লোল বলেন, দুর্নীতি করে কে বাড়িঘর বানালেন, কে জমি কিনলেন সেটি দেখবে দুদক। আমি শুধু দেখব কেউ আমার হাসপাতালের খাত থেকে দুর্নীতি করেছেন কি-না। আমি তার সম্পত্তি দেখব না। তবে হাসপাতালের খাত থেকে কত টাকা নয়-ছয় করেছেন সেটি অবশ্যই দেখব আমি। এটা সবার ক্ষেত্রেই দেখব। সরকার স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের জন্য টাকা দেবে, আর তা মেরে খাবে- আমি এসব সহ্য করব না। সবকিছুর হিসাব নেব। যারা হাসপাতালের দুর্নীতির বিষয়ে আমাকে জানিয়েছেন এবং সংবাদ করেছেন অবশ্যই হাসপাতালের কোন খাত থেকে কে কত টাকা খেয়েছেন তা উল্লেখ করবেন। কারণ স্পষ্টভাবে না লিখলে কিংবা না উল্লেখ করলে আমি অপরাধীকে ধরতে পারব না।

সুনামগঞ্জে নতুন ২৫০ শয্যা হাসপাতালের কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে ডা. কল্লোল বলেন, আমরা ধীরে ধীরে সবকিছু নতুন ভবনে নিয়ে যাব। এখন আমরা দেখছি কোথাও কোনো সমস্যা আছে কিনা। লিফট থেকে শুরু করে সব সুইচ পরীক্ষা করা হচ্ছে, কারণ আমার রোগীরা কষ্টে থাকবে- তা হবে না। সব রোগীকে দ্রুত নতুন ভবনে নিয়ে যাব আমরা।

Manual7 Ad Code

হাসপাতালের দুর্নীতি রোধে নিজের অবস্থান, পারিবারিক নীতি-নৈতিকতার দায়বদ্ধতার কথা জানিয়ে সিভিল সার্জন তউহীদ আহমদ কল্লোল বলেন, আমি এখানে সৎভাবে কাজ করতে এসেছি। আপনারা আমার এবং পরিবার সম্পর্কে খোঁজখবর নেন, আমাকে সরকার যে বেতন দেয় তা দিয়েই সংসার চালাই। আমি হারাম এক টাকাও খাব না, কেউ খাওয়াতে পারবে না। দুর্নীতি করব না। আমার বাবা উপসচিব ছিলেন। তবুও তিনি টিউশনি করেছেন। কষ্ট করে আমাকে পড়িয়েছেন, মানুষের মতো মানুষ করেছেন। আমি যদি দুর্নীতি করি তাহলে কলঙ্কের দাগটা আমার বাবা ও পরিবারে লাগবে। আমার বাবা এবং পরিবারে কলঙ্কের দাগ লাগতে দেব না আমি।

সবশেষে সিভিল সার্জন ডা. কল্লোল বলেন, অনেক সময় অনেক ফাইলে আমাকে স্বাক্ষর করতে হয়। যদি আমার মাধ্যমে কোনো ভুল ফাইলে স্বাক্ষর হয়ে যায় তাহলে অবশ্যই আপনারা (সাংবাদিকরা) ধরিয়ে দেবেন, আমি শুধরে নেব। কারণ অনেক সময় অনেক কিছু চোখের আড়ালে হয়ে যায়, তাই এসব কাজে আপনাদের সহযোগিতা আমার খুব প্রয়োজন।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..