হারিয়ে যাচ্ছে, প্রাচীন ঐতিহ্য চিরচেনা পালকি!

প্রকাশিত: ১:৩৮ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১২, ২০২০

হারিয়ে যাচ্ছে, প্রাচীন ঐতিহ্য চিরচেনা পালকি!

Manual1 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : পালকি, গ্রাম-বাংলায় যুগ যুগ ধরে চলমান একটি বাহন। পালকি বাঙালি জাতির প্রাচীন ঐতিহ্যের অন্যতম একটি নিদর্শন। বিশেষ করে বিয়ে উৎসবে পালকির কদর ছিল সবচেয়ে বেশি। ৯০ দশকের শেষলগ্ন পর্যন্ত পালকি ছাড়া বিয়ে উৎসব কল্পনাই করা যেতনা। গ্রামীণ আঁকা-বাঁকা মেঠো পথে, বর-কনে পালকি চড়ে উভয়ের শ্বশুর বাড়িতে আসা-যাওয়া বাধ্য বাদকতা ছিল। গাঁও-গ্রামের পথে পালকিতে করে নববধূকে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য উঁকি-ঝুঁকি দিয়ে মন জুড়াত গাঁওয়ের বধূ, কখনও মা-চাচি, এমনকি আনন্দ উল্লাস থেকে উঠতি বয়সের চঞ্চল মেয়েরাও বাদ পড়তো না।

Manual3 Ad Code

পালকি মানুষের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন একটি বাহন ছিল। সে সময়ে যোগাযোগ ব্যাবস্থা এখনকার সময়ের চাইতে হাজার গুন পিছিয়ে ছিল। তখন চলাচলের ক্ষেত্রে মানুষ জনের ভরষা ছিল বর্ষায় নাও,হেমন্তে পাও। ওই সময় বিয়েতে নতুন বধূকে আনতে পালকি চড়ে শশুর বাড়ি যেতেন বর। শশুর বাড়ি থেকে ফেরার সময় কনে চড়তেন পালকিতে। আর নিকটবর্তী কিংবা দূরবর্তী গ্রাম হোকনা কেন বর পায়ে হেঁটে বাড়ী ফিরতেন। বেহারার পালকি কাঁধে বহন করার দৃশ্যকাব্য ছিলো নিদারুণ সুন্দর। পেছনে বর যাত্রীরা কেমন করে গন্তব্যের পথে নবীন, প্রবীণ, তরুণ, তরুণী, বালক-বালিকারা পুরনো দিনের গল্প আর হৈ-হুল্লোড় আর দুষ্টুমিতে আনন্দধারা চলার গল্প শোনে অবাক লাগে। পালকি যখন গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হয় তখন কাঁচা-মাটি, কখনও আলপথ, কখনও মেঠোপথে হেঁটে চেঙ্গের খাল নদীর কূলঘেঁষে প্রায় দুই যুগ আগে সিলেট সদর উপজেলার পাঠান গাওঁ বিয়ে অনুষ্ঠানে গিয়েছি। ওই বিয়েতে গিয়ে তার মজা আজও আচমকা অনুভব করি। বিয়ের দৃশ্যপট অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা ভোলার নয়। সাধারণত বর-কনের জন্য পালকি হলেও এ বাহনটি ছিল রাজরাজাদের একমাত্র বাহন। আধুনিক আমলের গাড়ির প্রচলন ছিল না বলে অভিজাত শ্রেণীর লোকেরা পালকিতে চড়েই যাতায়াত করত। পালকি রাজা-বাদশাদের জন্য চেয়ারের মতো করে নির্মাণশৈলীতে তৈরি করা হতো। পালকির অপর নাম ছিল পালঙ্ক। বরকে যখন পালকিতে বেহারারা বহন করে নির্দিষ্ট ছন্দের তালে তালে, তাল মিলিয়ে নেচে-গেয়ে পা ফেলে চলত। তখন মন কেড়েছে। তার অনুভূতি এখনও অনুভব করি।

গ্রামবাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে বিয়ে অনুষ্ঠানে বর-কনের জন্য পালকি ব্যবহারের নিয়ম প্রথা চালু ছিল। তবে প্রকৃতি থেকে একেবারে বিলীন না হলেও হয়তো কোথাও কোথাও এখনও টিকে আছে। ধারণা করে যেতে পারে বিলুপ্তির পথে।
প্রচীনকাল থেকেই রাজা-বাদশারা এবং জমিদার শ্রেণী ছাড়া বেহারাদের প্রতি তেমন একটা সুনজর ছিল না, কোনো রকমে বেহারাদের জীবন ও জীবিকা চলত। সেই সময়ে স্থায়ী বেহারা রাখা ছিল খুবই ব্যয়সাধ্য ব্যাপার। গোয়াইনঘাট উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামে বেহারারা বাস করতেন। অত্যাধুনিক যুগে পাশ্চাত্যের সংস্কৃতির প্রভাবে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও প্রচীন ঐতিহ্যকে হারিয়ে দিয়েছে। এখন বর – কনে বিয়ের পিঁড়িতে বসছে বিমান, হেলিকপ্টার ও অত্যাধুনিক নামীদামী কোটি কোটি টাকা সমমূল্যে গাড়িতে। পালকি ও বেহারাদের চাহিদা দিনে দিনে হ্রাস পেয়ে প্রায় শুন্যের কোটায় নেমে এসেছে। ফলে জীবন জীবিকা নির্বাহের জন্য বেহারারা বাপ-দাদার নিয়ম প্রথা এখন আর মানছে না, তারা এখন ভিন্ন পেশায় মনোনিবেশন করছেন। ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন বাহন পালকি আজ বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। তবে এখনও মাঝে মধ্যে কোথাও কোথাও পালকি দেখা যায়।

Manual4 Ad Code

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..